সৈয়দ মাজারুল ইসলাম রুবেল
Advertisement
প্রায় বছরখানেক আগে বন্ধু সুমনের কাছ থেকে দুটি এলাচ চারা সংগ্রহ করে নিজের বাড়িতে লাগালাম। গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা গজাতে থাকে। মাস ছয়েক পরেই একটি গাছে ফুল আসে এবং ফুল থেকে ফল। ফল দেখতে দেশি জাতের বরই ফলের মতো, এলাচের মতো নয়। সাধারণত এলাচ গাছে গোড়ার দিক থেকে ফল আসে। তাই চিন্তায় পড়ে গেলাম; আসলে এটি এলাচ গাছ কি না! অবশেষে নেট ঘেটে একটি প্রতিবেদন দেখে অবাক হলাম।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি দ্বীপ। তারা বাঁচে বেশিদিন। সেখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। এসবের পেছনে আসলে রহস্য কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণ তাদের খাদ্যাভ্যাস। সেখানকার লোকেরা প্রতিদিন একটি গাছকে খাবারের তালিকায় রেখেছেন। গাছটি বড় এলাচের। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়। এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও খায়।
এ গাছের ফল বাজারের এলাচের চেয়ে অনেক বড়। প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। খোসা সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। খোসার ভেতরে এলাচের মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচের মতোই। একটি ছড়ায় ১০-১৫টি ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। ফল শুকিয়ে এলাচের গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করতে হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন
রাঙ্গামাটিতে কাজুবাদামে আশাবাদী চাষিরা শখের ছাদ বাগানে ঝুলছে মিষ্টি আঙুরমূলত মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। যখন এ গাছের পাতা দিয়ে চা বানতে যাই, প্রায় দুই কাপের একটু বেশি পানিতে একটি সবুজ পরিপক্ব পাতা কুচিকুচি করে দিয়ে চায়ের মতোই ফোটাতে থাকি। ৪-৫ মিনিট ফোটানের পরই লাল রং ছড়াতে থাকে। চুলা বন্ধ করে মিনিট খানেক পরে কাচের কাপে ছেকে দেখি চমৎকার লালচে গোলাপি রং। ঘ্রাণ নিয়ে দেখি মৃদু আদার ঘ্রাণের মতো। চিনি ছাড়া একটু চেখে দেখলাম মন্দ নয়। যেহেতু আমি চায়ে চিনি পছন্দ করি, তাই পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে খেলাম দারুণ লাগলো। মাংসে এ এলাচ ব্যবহারে স্বাদে ভিন্নতা এনে দেয়।
২০২২ সালে প্রথম অল্প কয়েকটি গাছে ফলন ধরে। ২০২৩ সালে আরও বেশি গাছে ফলন ধরে। পারিবারিক রান্নার কাজে এবং আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েছিলাম। এ বছর প্রায় শতাধিক গাছে ফলন ধরেছে। সংগ্রহ করলে প্রায় তিন থেকে চার কেজির মতো হবে। অনলাইন বাজার অ্যামাজনে দেখলাম এর আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য অনেক কিন্তু দেশীয় বাজারে কোথায় বিক্রি করবো, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।
লেখক: চেংঙ্গুটিয়া নিবাসী, আগৈলঝাড়া, বরিশাল।
Advertisement
এসইউ/এএসএম