‘ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলা নাট্য চর্চায় কিংবদন্তি হয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের উৎপল দত্ত। তেমনি আমাদের কাছে মামুনুর রশীদই উৎপল দত্ত। নিঃস্বার্থভাবে নাটক, মঞ্চ ও অভিনয় নিয়ে তার যে সংগ্রাম ও ভালোবাসা সেটা দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যোগায় নতুনদের।’ সংস্কৃতি আন্দোলনের সহযোদ্ধা ও বন্ধুবর মামুনুর রশীদকে নিয়ে এভাবেই বললেন নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু।গতকাল শনিবার, ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় মামুনুর রশীদের জীবনের নানা গল্প ও ছবি নিয়ে ‘মামুনুর রশীদঃ থিয়েটারের পথে’ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘মামুন ভাইকে আমি বলি ‘নিঃসঙ্গ পথিক’। শুরু থেকে যে আদর্শ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এখনো সেই আদর্শে অবিচল আছেন। তার শুরুর দিকের নাটক থেকে এই সময়ের ‘রাঢ়াং’ কিংবা ‘ভঙ্গবঙ্গ’ নাটকগুলো সেই সাক্ষ্য বহন করে। এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি কখনো আপোষ করেননি। স্বৈরশাষক এরশাদের দেওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।’অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, রাজনীতিবিদ হায়দার আকবর খান রনো, চিত্রশিল্পী রফিক-উন-নবী, শিল্পকলার মহা পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যে ক’জন মানুষ নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন মামুনুর রশীদ। তার ভূমিকার কথা সকলেই জানেন। আমি আর নতুন করে কী বলব। আজ সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছেন তার জীবনী প্রকাশনা উৎসবে। আপনাদের ধন্যবাদ। তবে আমার মনে হয় মামুনুর রশীদকে নিয়ে এমন একটি বই আরও আগেই হওয়া উচিত ছিলো। মামুনকে নিয়ে এখন গবেষণা করার সময় এসেছে।’তিনি আরো বলেন, ‘পরের প্রজন্মের কাছে আসলে আমাদের দেবার মতো কোনো কিছুই নেই। এমন একটি সম্পদের (গ্রন্থ) অনেক দরকার ছিলো।’ লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘মামুনুর রশীদের সঙ্গে আমার মনের অনেক মিল। অনেক কাজ করতে গিয়ে মামুন ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিয়েছি। মামুন ভাই আরো দীর্ঘজীবি হোন। তাকে আমাদের প্রয়োজন, আমাদের নাট্যাঙ্গনের প্রয়োজন।’হায়দার আকবর খান রনো বলেন, ‘আদর্শের জায়গা থেকেই মামুনুর রশীদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বটা এই দীর্ঘ সময় টিকে আছে। মামুনুর রশীদের নাট্যদল আরণ্যক প্রতি বছর ‘মে দিবস’ পালন করে। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার। তাছাড়া আদিবাসীদের লড়াই-সংগ্রামে মামুনুর রশীদ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’চিত্রশিল্পী রফিক উন নবী বললেন, ‘মামুনুর রশীদের সঙ্গে আমার পরিচয়টা কবে হয়েছিল মনে নেই। সম্ভবত ষাটের দশকের দিকে। আমরা সবাই যখন নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করার সংগ্রামে নামলাম তখন মামুনও আমাদের সারথি ছিলো।’বইয়ের লেখক ফয়েজ জহির বলেন, ‘এই বইটিতে মামুনুর রশীদের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তুলে আনা হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা করেছি যতোটা সম্ভব মামুনুর রশীদকে তুলে ধরার।’সবশেষে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বইতে যে সকল কথা উল্লেখ নেই সেইসব কথাও আমি বলে যাব আমার জীবনীতে। যা সকলে জানতে চান।’মামুনুর রশীদ। তিনি অভিনেতা, নাট্যকার, নির্মাতা। তার অভিনয় ও নাট্যকার পরিচয়টি সমান ভাবে বিস্তার করেছে টিভি ও মঞ্চে। গুনী মানুষের বর্ণাঢ্য জীবনের গল্প ও ছবি এবার ঠাঁই পেয়েছে বইয়ের মলাটে। ‘মামুনুর রশীদঃ থিয়েটারের পথে’ নামে বইটি লিখেছেন নাট্যকর্মী ফয়েজ জহির ও হাসান শাহরিয়ার। প্রকাশনায় ছিলেন বাংলা প্রকাশন।এলএ/এমএস
Advertisement