কৃষি ও প্রকৃতি

পরীক্ষামূলক আঙুর চাষে সফল রাজবাড়ীর সরোয়ার

রাজবাড়ীতে এই প্রথম বাণিজ্যিক আঙুর চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সরোয়ার হোসেন বাবু। পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় প্রায় ২ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষে সফল হওয়ায় বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার সংগ্রহে থাকা ১১টি জাতের পাশাপাশি ভারত থেকে আরও ১২টি জাত সংগ্রহ করে বাগান করতে ৭০ শতাংশ জমি প্রস্তুত করছেন।

Advertisement

জানা যায়, কম পরিশ্রম ও কম খরচে লাভজনক হওয়ায় আঙুর চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। আঙুর চাষে বাড়তি কোনো খরচ নেই। জৈব সার প্রয়োগের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যায় একটি গাছে ৪০-৫০ বছর ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বছরে একটি গাছে ৩ বার ফল আসে। প্রতিটি গাছে দেড় থেকে ২ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ফল চাষি সরোয়ার পরীক্ষামূলক আঙুর চাষের পাশাপাশি দেশের ৪০টি জেলায় আঙুরের চারা কাটিং, গ্রাফটিং, গুটি করে বিক্রি শুরু করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষামূলকভাবে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগামায় ফল চাষি সরোয়ার ছাড়া এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ নেই।

প্রতিবেশী আজিজুর রহমান বিশ্বাস, বাগান দেখতে আসা আলিমুজ্জামান মোল্লা, কাজী জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন বলেন, ‘এভাবে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় কখনো আঙুর দেখিনি। আঙুরগুলো অনেক মিষ্টি। প্রতিটি ঝোপায় ২০০ থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত আঙুর আছে। সরোয়ারের মতো অন্যরা এ রকম আঙুর চাষ করলে দাম এত বেশি হতো না। আগে ভাবতাম আঙুর চাষে অনেক কষ্ট ও ব্যয়বহুল। কিন্তু এখন দেখি কষ্ট ও খরচ দুটাই কম। এমনকি আঙুর চাষ লাভজনক। আমরা স্বল্প পরিসরে হলেও আঙুর চাষ করবো। যার জন্য জমি ঠিকসহ চারার খোঁজ করছি।’

Advertisement

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে আঙুর উৎপাদন সম্ভব! যশোরে সাড়া ফেলেছে মিষ্টি আঙুর

আঙুর চাষি সরোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ‘আমি একজন মিশ্র ফল চাষি। শুরু থেকেই আমার আঙুর চাষের শখ জাগে। তখন ধারণা ছিল আমাদের দেশে আঙুর মিষ্টি হয় না। তারপরও গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে কয়েকটি জাত সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করি। গত বছরের চেয়ে এ বছর বিপুল পরিমাণ ফলন দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। প্রতিদিনই আঙুর দেখতে অনেকে আসেন। খেয়ে প্রশংসাও করেছেন। যে কারণে আমি পরীক্ষামূলক থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ জমি প্রস্তুত করেছি। প্রায় ৪০টি জেলায় আঙুরের চারা কুরিয়ারের মাধ্যমে বিক্রি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযোগী করা গেলে জনগণের পুষ্টি ও উচ্চ মূল্যের ফলের চাহিদা মিটবে। এ আঙুর চাষে তেমন কোনো বিষ বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। শুধু মাটিতে জৈব সার ও পানি লাগে। খুব অল্প খরচ ও পরিচর্যায় আঙুর চাষ করা যায়। একটি গাছ রোপণের পর প্রায় ৫০ বছর ফলন দেয়। প্রতি মৌসুমে একটি গাছে দেড় থেকে ২ মণ বা তারও বেশি ফলন হয়। একটি গাছে বছরে ৩ বার আঙুর ধরে।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান বলেন, ‘সরোয়ার হোসেন প্রথম এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে আঙুরের চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত আঙুর স্বাদ ও গুণে ভালো। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, রাজবাড়ীর মাটি ও পরিবেশ আঙুর চাষের জন্য উপযোগী। মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ আঙুর চাষ ও ফলন দেখে আশপাশের অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আশা করছেন আগামীতে তারা আঙুর চাষ করবেন।’

Advertisement

এসইউ/এমএস