মাথার ওপর সূর্যটা অতিমাত্রায় তাপ দিচ্ছিলো। গরমে একদম নাজেহাল অবস্থা। তার ওপরে প্রচণ্ড যানজট। কোনোভাবেই রিকশায় বসে থাকতে পারছিলাম না। হয়তো এটি বুঝতে পারেন রিকশাওয়ালা মামা। তাই রিকশা থেকে নেমে মাথার ওপর হুডটা উঠিয়ে দিলেন। অনেকটাই শান্তি অনুভব করছিলাম তাতে। আর তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন রোদের ভেতরে।
Advertisement
এদিকে যানজটও ছুটছিল না। তাপ সহ্য করতে না পেরে ঘাম মোছার তোয়ালেটি দিয়ে রাখলেন নিজের মাথার ওপরে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘মামা, আজ তাপমাত্রা কত?’ বললাম, ‘হবে হয়তো ৩৪°-৩৬° এর মতো।’ কিছু বললেন না আর, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
একটু পর জ্যাম ছেড়ে দিলো। মামা পূনরায় কোনোমতে রিকশার প্যাডেল ঘোরানো শুরু করলেন। তার প্যাডেল ঘুরানো দেখে আমি মনে মনে বেশ কষ্ট পাচ্ছিলাম। বেচারা অনেক ক্লান্ত। তার ওপর প্রচণ্ড রোদ। আমিই বসে থাকতে পারছিলাম না। সেখানে কীভাবে তিনি এত রোদের মধ্যে আমাকেসহ পুরো রিকশাটি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
পুরো শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল তার। মনে হচ্ছিল, এখনই গোসল করে এলেন তিনি। অনেক প্রশ্নবোধক চিন্তা মাথায় ঘুরতে ছিল। একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মামা এত রোদে কীভাবে রিকশা চালান, কষ্ট হয় না?’ মামা উত্তর দিলেন না। কী উত্তর দেবেন? আমার বোকা প্রশ্নের কোনো উত্তর কি তার কাছে আছে!
Advertisement
আরও পড়ুন
মহাপরিচালক হিসেবে কাকে চাইছেন কবি-লেখকরা? আগামী প্রজন্মের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিতআবারও জিজ্ঞেস করলাম, ‘মামা চাইলেই একটু বিশ্রাম নিতে পারেন। অনেক রোদ আজ।’ বললেন, ‘আমি বিশ্রাম নিলে পোলাপান না খেয়ে থাকবে। অহনও জমার টাকা ওঠে নাই। আপনার ভাড়াটা পাইলে জমার টাকাটা হইবো। এরপরে যা পামু ওইটা আমার থাকবো। অহন যদি বিশ্রাম লই, তাইলে পরিবার চালামু কেমনে?’
এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। তাই চুপ হয়ে গেলাম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যার জমার টাকা ওঠেনি, তার সারাদিনে কত টাকাইবা আয় হয়। তা দিয়ে পুরো সংসার চালানোর সাথে স্ত্রী-সন্তানদের শত আবদার মেটানো। সে কি চাট্টিখানি কথা?
তার কথা শুনে মনে মনে বেশ মানবতা জেগে ওঠে আমার ভেতর। ইচ্ছে হচ্ছিলো হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করি। কিন্তু রিকশা থেকে নেমে ভাড়ার বাইরে এক টাকাও বাড়তি দিতে পারলাম না। কোথা থেকে দেবো? আমিও যে তার মতোই একজন। পার্থক্য শুধু রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে জীবন চালাতে হয় না।
Advertisement
তাদের মতো রিকশাচালকরা পা দিয়ে প্যাডেল ঘোরাতে পারলেও পারেন না শুধু ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে। সবার জীবনে সুখের আলো ধরা দিলেও তাদের জীবনে নিভু নিভু আলো। যা জ্বলেও না, আবার নেভেও না। চলুন না, এই মানুষগুলোর প্রতি একটু সহনশীল হই।
এসইউ/এএসএম