ধর্ম

হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের রাজত্ব

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসংখ্য নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। যার সঠিক সংখ্যার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই। কুরআনের বর্ণনা মতে এ সকল নবি-রাসুলদের মধ্যে তিনি যাদেরকে নবুয়ত দানের পাশাপাশি রজত্ব ও হিকমত প্রদান করেছেন, তাদেরে মধ্যে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম অন্যতম। সংক্ষেপে তার রাজত্বের বিবরণ তুলে ধরা হলো-জন্ম পরিচিতিসুলাইমান আলাইহিস সালাম হজতর দাউদ আলাইহিস সালামের ১৯ সন্তানের মধ্যে একজন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে নবুয়ত লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও নবুয়ত দান করেন। তিনি শাম ও ইরাক অঞ্চলে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া রাজ্যের বাদশাহি লাভ করেন।শৈশব কালআল্লাহ তাআলা হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে শৈশবেই প্রখর মেধা ও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায়- তাঁর পিতার (দাউদ আলাইহিস সালাম) দরবারে বকরির পাল ও শষ্যক্ষেত্র বিনষ্টের বিচারের ফয়সালায়। হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম বিচারে তাঁর দেয়া ফয়সালা বাতিল করে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের ফয়সালা বহাল রাখেন।তাছাড়া দুই মহিলার ‘এক সন্তান’কে উভয়ের সন্তান বলে দাবির ফয়সালায় হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের দরবারে উপস্থিত হলেন। দাউদ আলাইহিস সালাম বয়স্ক মহিলাকে সন্তান প্রদানের ফয়সালা দেন। সে ফয়সালাও সুলাইমান আলাইহিস সালাম তীক্ষ্ণ মেধার মাধ্যমে সঠিক রায় দেন। যা পিতার ফয়সালার বিপরীতে যায়। হজরত দাউদ নিজের ফয়সালা বাতিল করে পুত্র সুলাইমান আলাইহিস সালামের ফয়সালা বলবৎ রাখেন।রাজত্বকালহজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পিতার মৃত্যুর পর শৈশবেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি রাজত্বের দায়ভার গ্রহণ করেন। রাজত্ব লাভের চতুর্থ বৎসর হতে তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৫৩ বছরের দুনিয়ার জিন্দেগিতে ৪০ বছর যাবত রাজ্য পরিচালনা করেন। তবে কত বৎসর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেছিলেন, তা সঠিক জানা যায়নি। তবে তাঁর রাজ্য ছিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ও শক্তিশালী রাজ্য।তাঁর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহআল্লাহ তাআলা দাউদ আলাইহিস সালামের ন্যায় হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকেও বিশেষ গুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেন এবং তাঁকে নিয়ামাত দান করেন। তাঁর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামাত ও বৈশিষ্ট্যগুলো হলো->> বায়ু প্রবাহ অনুগত হওয়া। আল্লাহ বলেন- ‘আর আমি বায়ুকে সুলাইমানের অধীন করেছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করতো। (সুরা সাবা : আয়াত ১২)>> ‘তামা’কে তরল ধাতুতে পরিণত করে নহর প্রবাহিত করা। আল্লাহ বলেন- ‘আমি তার জন্যে গলিত তামার এক ঝরণা প্রবাহিত করেছিলাম।’ (সুরা সাবা : আয়াত ১২)>> জিন জাতি তাঁর অধীনস্ত হওয়া। আল্লাহ বলেন- ‘কতক জিন তার সামনে কাজ করত তার পালনকর্তার আদেশে। তাদের যে কেউ আমার আদেশ অমান্য করবে, আমি জ্বলন্ত অগ্নির-শাস্তি আস্বাদন করাব।’  (সুরা সাবা : আয়াত ১২)>> পক্ষীকূলকে অনুগত করা। আল্লাহ বলেন- ‘সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হে লোক সকল! আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।’ (সুরা নমল : আয়াত ১৬)>> পিপীলিকার ভাষা বুঝার ক্ষমতা। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছলো, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থø দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ।’ (সুরা নমল : আয়াত ১৮-১৯)>> অতুলনীয় সাম্রাজ্য লাভ। আল্লাহ বলেন, ‘সোলায়মান বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে এমন সাম্রাজ্য দান করুন যা আমার পরে আর কেউ পেতে পারবে না। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা। (সুরা ছোয়াদ : আয়াত ৩৫)>> প্রাপ্ত অনুগ্রহ রাজির হিসাব না রাখার অনুমতি পাওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘এবং অন্য আরও অনেককে অধীন করে দিলাম, যারা আবদ্ধ থাকত শৃঙ্খলে। এগুলো আমার অনুগ্রহ, অতএব, এগুলো কাউকে দাও অথবা নিজে রেখে দাও-এর কোন হিসেব দিতে হবে না। (সুরা ছোয়াদ : আয়াত ৩৯-৪০)তাঁর জীবনে সংঘঠিত ঘটনা>> বকিরর পাল ও শষ্যক্ষেত্রের বিচারের ফয়সালা।>> দুই মহিলার সন্তান দাবির ফয়সালা।>> পিপীলিকার কথাবার্তায় প্রমাণ করে তাঁর সময়কার সকল জন্তুর তিনি নবি ছিলেন।>> হুদহুদ পাখির বর্ণনা যা জমিনের তলদেশে পানি প্রবাহের খবর দিতেন।>> রানি বিলকিছের ঘটনা; যিনি নুহ আলাইহিস সালামের বংশধর ছিলেন।>> অশ্ব কুরবানির ঘটনা। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পরীক্ষা করেছেন।>> তাঁর সিংহাসনের ওপর নিষ্প্রাণ দেহ প্রাপ্তির ঘটনা।>> ইনশাআল্লাহ না বলার ফল।>> হারূত ও মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের ঘটনা।>> বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ এবং>> হজরত সুলাইমান আলাইহি সালামের ইন্তিকালওফাতবিশাল সম্রাজ্যের বাদশা ও আল্লাহর নবি সুলাইমান আলাইহিস সালাম ৫৩ বছর জীবিত ছিলেন। ৪০ বছর রাজত্ব পরিচালনা করেন। সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবি হজরত মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুনিয়ায় আগমনের ১৫৪৬ বছর পূর্বে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ইন্তেকাল করেন।আল্লাহ তাআলা কুরআনে বর্ণিত নবি-রাসুলদের জীবনী ও নবুয়তের বর্ণনাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করার এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস

Advertisement