আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) মদিনায় হিজরতের আগে কিছু সাহাবি হাবশায় হিজরত করেছিলেন। এটি ছিল খ্রিষ্টান দেশ। ওখানকার খ্রিষ্টান বাদশাহর নাম ছিল নাজাশি। বর্ণিত রয়েছে, নবিজি (সা.) আমর বিন উমায়ইয়াহ যামরিকে (রা.) একটি পত্র সহ নাজাশির কাঠে পাঠিয়েছিলেন। তিনি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পত্র নাজাশিকেকে পাঠ করে শোনালে নাজাশি হাবশায় অবস্থানরত মুসলমানদের ডেকে পাঠান এবং হাবাশার খ্রিষ্টান আলেম ও দরবেশদেরও একত্রিত করেন।
Advertisement
বাদশাহ, তার সভাসদ ও খ্রিষ্টান আলেম-দরবেশদের ওই জমায়েতের সামনে মুসলমানদের পক্ষ থেকে জাফর (রা.) কোরআন পাঠ করেন। তিনি সুরা মারিয়াম পাঠ করেন; যাতে খ্রিষ্টানদের নবি ঈসার (আ.) অলৌকিক জন্ম-বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। জাফরের (রা.) কোরআন তিলাওয়াত শুনে নাজাশিসহ তার দরবারের খ্রিষ্টানরা বুঝতে পারেন, এটা সত্য বাণী এবং আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। তাদের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। তারা সবাই ঈমান গ্রহণ করেন। তাদের সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
وَ اِذَا سَمِعُوۡا مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَی الرَّسُوۡلِ تَرٰۤی اَعۡیُنَهُمۡ تَفِیۡضُ مِنَ الدَّمۡعِ مِمَّا عَرَفُوۡا مِنَ الۡحَقِّ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاکۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِیۡنَ وَ مَا لَنَا لَا نُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ مَا جَآءَنَا مِنَ الۡحَقِّ ۙ وَ نَطۡمَعُ اَنۡ یُّدۡخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الصّٰلِحِیۡنَ فَاَثَابَهُمُ اللّٰهُ بِمَا قَالُوۡا جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا وَ ذٰلِکَ جَزَآءُ الۡمُحۡسِنِیۡنَরাসুলের প্রতি যা নাজিল করা হয়েছে যখন তারা তা শোনে, তুমি দেখবে যে সত্য চিনতে পারার কারণে তাদের চোখ অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে। তারা বলে, হে আমাদের রব, আমরা ইমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন। আমাদের কী এমন অসুবিধা আছে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে তার প্রতি ঈমান আনব না? আর আমরা আশা করব না যে, আমাদের রব আমাদেরকে প্রবেশ করাবেন নেককার সম্প্রদায়ের সাথে। সুতরাং তারা যা বলেছে এর কারণে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দেবেন জান্নাতসমূহ, যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হল সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান। (সুরা মায়েদা: ৮৩-৮৫)
অনেকের মতে এ আয়াতগুলোর পেক্ষাপট হলো, নাজাশি তার কিছু হাবাশার কয়েকজন খ্রিষ্টান পণ্ডিতকে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে পাঠিয়েছি। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সামনে কোরআন পাঠ করলে তারা কেঁদে ফেলেন এবং সবাই ঈমান গ্রহণ করেন। (ফাতহুল কাদির)
Advertisement
কোরআনের আরও কিছু আয়াতে এ রকম ইহুদি ও খৃষ্টানদের কথা এসেছে, যারা নিজেদের ধর্মও সঠিকভাবে পালন করতো, আল্লাহর আয়াত বিকৃত করতো না এবং ইসলামের দাওয়াত পেয়ে কোরআন শুনে প্রভাবিত হয়েছে, ইসলাম গ্রহণ করেছে। যেমন সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন,
وَ اِنَّ مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ لَمَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکُمۡ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِمۡ خٰشِعِیۡنَ لِلّٰهِ لَا یَشۡتَرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ ثَمَنًا قَلِیۡلًا اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ اَجۡرُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ اِنَّ اللّٰهَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ
নিশ্চয় আহলে কিতাবদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যে আল্লাহর জন্য বিনীত হয়ে ইমান আনে আল্লাহর প্রতি এবং যা নাজিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি, আর যা নাজিল করা হয়েছে তাদের প্রতি। তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করে না। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট পুরস্কার। নিশ্চয় আল্লাহ অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। (সুরা আলে ইমরান: ১৯৯)
এ রকম শুভ বোধসম্পন্ন আহলে কিতাবদের অন্যতম খ্রিষ্টান বাদশাহ নাজাশি, যিনি অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে নিজের দেশে মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, সাহায্য করেছিলেন এবং নিজেও ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, নাজাশির মৃত্যু হলে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে তার মৃত্যু সংবাদ পান এবং সাহাবিদের বলেন, হাবশায় তোমাদের ভাই নাজাশির ইন্তেকাল হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বৰ্ণিত নাজাশী যেদিন মারা যান সেদিনই আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মৃত্যুর খবর দেন এবং জানাজার স্থানে গিয়ে লোকেদের কাতারবন্দী করে চার তাকবির দিয়ে জানাজা আদায় করেন। (সহিহ বুখারি: ১২১৮)
Advertisement
ওএফএফ/জেআইএম