আগাম ও উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটো চাষে বাজিমাত করেছেন গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের দক্ষিণবাগ গ্রামের কৃষক ফিরোজ মিয়া (৪৫)। এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আরও লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী তিনি। উন্নত জাত, সঠিক পরিচর্যা ও কৃষি অফিসের আন্তরিকতা থাকলে কৃষকের ভাগ্য বদলাতে পারে এমন প্রত্যাশা তার।
Advertisement
জানা গেছে, উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা। দামও বেশ ভালো। ফলে কৃষকেরা অসময়ে টমেটো চাষে ঝুঁকছেন। ফিরোজ মিয়া পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো ১ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সামার টমেটো চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় তিনি মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের এ টমেটোর চারা লাগিয়েছেন। চারাগুলো উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় সংগ্রহ করেন। চারা রোপণের ৪৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই গাছে ফুল ও ফল আসায় বেশ উৎফুল্ল তিনি।
কৃষক ফিরোজ জানান, ১ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সামার টমেটো চাষ করেছেন। এতে মালচিং পেপার ছাড়াও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ইয়েলো ট্রেপ, চেরানং, গাছের গঠন ঠিক রাখতে বাঁশের খুঁটি, রশি, সুতা, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে নেট মাচা ব্যবহার করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। তবে ফলন দেখে খরচের কয়েকগুণ টাকা লাভের প্রত্যাশা করছেন। শীতের পরিবর্তে গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমেও টমেটো চাষের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
কৃষক ফিরোজের টমেটো চাষ দেখে আগামী বছর এ জাতের টমেটো চাষ করবেন বলে জানান একই গ্রামের দুলাল মিয়া (৫০), মিজান মিয়া ও মাসুম মিয়া (৩০)। তবে এমন উন্নত জাতের বিষয়ে কৃষকের সঙ্গে কৃষি অফিসকেও এগিয়ে আসতে হবে বলে দাবি আগ্রহী কৃষকদের।
Advertisement
আরও পড়ুন
ক্যাপসিকাম চাষে ঝুঁকছেন ভোলার কৃষকরা লাউ চাষ করে স্বাবলম্বী সিদ্ধিরগঞ্জের মিনজারসরেজমিন জানা যায়, পরিত্যক্ত অনাবাদি জমিতে সামার টমেটোর চাষ করা হয়েছে। মালচিং পেপার ব্যবহার করায় আগাছা নেই বাগানে। ফলে টমেটো গাছগুলো বেশ পরিপক্ব হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাঁচা-পাকা টমেটো।
উপজেলার বাহাদুরসাদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস আসমা জানান, জমিকে উত্তমভাবে তৈরি করে প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে বেড তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়। তারপর বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘মালচিং পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল টমেটো জাতটি ফলনও ভালো দেয়। বাজারে এর চাহিদা ও দাম বেশি। যে জমিতে এ টমেটো চাষ করা হয়েছে; জমিটি ছিল পতিত। প্রথমবারের মতো এ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে বাজিমাত করেছেন ফিরোজ। তাকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়েছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে টমেটো চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন অসময়ে বাজারে টমেটোর সংকট মেটানো যাবে; তেমনই কৃষকও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। তাছাড়া এখন ফিরোজ মিয়াকে দেখে আশপাশের অনেকেই এ জাতের টমেটো চাষে উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন।’
আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/এমএস