বিকেল বেলা। মাঠে ছেলে-মেয়েরা ব্যস্ত নানা খেলাধুলায়। এমন সময় এক লোক হাক-ডাক শুরু করল ‘এই হাওয়াই মিঠাই’। খেলা ছেড়ে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার কাছে। ছোট ছোট লাল ও সাদা রঙের হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে কাচের ছোট একটি গাড়িতে। কেউ কেউ ঘরে দৌড়ে দিল মায়ের কাছে হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার বায়না ধরতে। টাকা পেতে দীর্ঘসময় মায়ের পিছন পিছন ঘুরতে হতো। এদিকে আবার হাওয়াই মিঠাইওয়ালা চলে যাবে সেই চিন্তা। এই স্মৃতি নব্বই দশকের শত শত ছেলে-মেয়ের শৈশবের।
Advertisement
আরও পড়ুন: আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদরহীন কুপি বাতি ও হারিকেন
সব সময় যে হাওয়াই মিঠাই কিনতে টাকা লাগত তা কিন্তু নয়, পুরোনো প্লাস্টিক, কাচের বোতল, মেয়েদের মাথার চুল এসব দিলেই মিলতো কিছুটা হাওয়াই মিঠাই। উপরের পলিথিন সরিয়ে হাওয়াই মিঠাই মুখে পুরে দিতেই মিষ্টি স্বাদে হারিয়ে যেতে বাধ্য যে কেউ। এই ভালোলাগা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
সময় বদলেছে। বিকেলের সেই খেলার সময় এখন নেই। আধুনিকায়নে ফোনের গেমসেই কাটছে ছোটদের সময়। হাওয়াই মিঠাই তাই কোনো স্কুল বা মহল্লায় নয়, মেলা কিংবা পার্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে এখনো কিছু গ্রামে বিকেলবেলা হাওয়াই মিঠাইয়ের হাক-ডাক শোনা যায়।
Advertisement
মজাদার এই হাওয়াই মিঠাই বানাতে চাই একটি মেশিন। চিনি, তেল, রং আর স্পিরিট হলেই মেশিনের ঘুরপাকে তৈরি হয়ে যায় রংবেরঙের হাওয়াই মিঠাই। এক কেজি চিনিতে প্রায় ৬০০ হাওয়াই মিঠাই বানানো সম্ভব। তবে ছোট ছোট হাওয়াই মিঠাই এখন আর বিক্রি হয় না। শৈশবের ছোট ছোট হাওয়াই মিঠাই বড় আকারে তৈরি করা হয়। কাচের বাক্সের বদলে বিক্রি হয় বড় একটি লাঠিতে ঝুলিয়ে। দাম ১০-২০ টাকা।
দিন দিন হাওয়াই মিঠাইয়ের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। শিশুদের খাদ্যাভাসে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচে ঝোঁক বাড়ছে তাদের। এছাড়াও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে হাওয়াই মিঠাই না খাওয়া, বিক্রিতে পর্যাপ্ত লাভ না হওয়ায় দিন দিন পাড়া-মহল্লায় হাওয়াই মিঠাইয়ের হকারদের আনাগোনা কমছে।
আগে শহরে হরহামেশা হাওয়াই মিঠাই দেখা গেলেও এখন বিশেষ দিনে এর দেখা বেশি মেলে। নববর্ষ, ২৬ মার্চ, বিজয় দিবস , ভালোবাসা দিবস ও সরকারি ছুটির দিনে কিংবা যে কোনো আয়োজনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে হকারদের হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে দেখা যায়। এই ধরনের উৎসবে হাওয়াই মিঠাইয়ের চাহিদাও থাকে বেশ। শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরাও হারিয়ে যান হাওয়াই মিঠাইয়ের স্বাদে।
কেএসকে/এএসএম
Advertisement