মানবদেহে থাকা তিন ধরনের রক্তকণিকার সবচেয়ে ছোট আকারটি হলো প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে প্লাটিলেট। এই রক্তকণিকার কারণেই শরীরের কোথাও কেটে গেলে দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।
Advertisement
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণ কী?
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো দুটি- প্লাটিলেট ধ্বংস হয়ে যাওয়া নয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হওয়া। যখন রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে শুরু করে, তখন তাকে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া।
আরও পড়ুন: অনিদ্রা কাটাবেন যেভাবে
Advertisement
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আরও কয়েকটি কারণ হলো- অ্যানিমিয়া বা রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়া, ভাইরাস সংক্রমণ, লিউকেমিয়া, কেমোথেরাপি, অতিরিক্ত মদপান ও ভিটামিন বি ১২ এর অভাব।
এছাড়া তীব্র মাত্রার ক্যানসার বা পিত্তথলির মারাত্মক রোগের কারণে কমতে পারে প্লাটিলেট। একই সঙ্গে রক্তে ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাজনিত রোগবালাইয়ের কারণে প্লাটিলেট ভেঙে যেতে পারে।
প্লাটিলেট কমে গেলে কী হয়?
প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। তবে যদি কখনো ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়, তখন ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ের ঝুঁকি থাকে।
Advertisement
আরও দাদ কেন হয়? চুলকানি থেকে মুক্তি মিলবে যেভাবে
প্লাটিলেট যদি ৫ হাজারের কম হয় তখন ব্রেন, কিডনি, হার্টের মধ্য রক্তক্ষরণের ভয় থাকে। মেশিনে গুনলে ভুল হয়, কারণ প্লাটিলেটে ক্লাপেম থাকায় মেশিন অনেকগুলো একসঙ্গে ধরে সংখ্যা নিরুপণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া কোনো মেডিকেল ইমারজেন্সি নয়। অর্থাৎ প্লাটিলেট কমে যাওয়া মাত্রই রোগীর রক্তক্ষরণ হয়ে হঠাৎ মারা যাবে বিষয়টি এরকমও নয়। প্লাটিলেট কমলে শরীরে এক ধরনের মাইনর ক্যাপিলারি ব্লিডিং, যা ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়।
প্লাটিলেট বাড়াতে কী খাবেন?
ডালিম
ডালিমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। এই ফল খেলে ক্লান্তি ও অবসাদও দূর হবে। প্লাটিলেট বাড়াতে নিয়মিত ডালিম খেতে পারেন।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ভাইরাস ছড়াতে পারে, সতর্কতা বিজ্ঞানীদের
ডাবের পানি
শারীরিক সুস্থতায় ডাবের পানি অনেক উপকারী। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা থেকে সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। এ সময় বেশি করে ডাবের পানি পান করুন। এতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
কমলা বা মালটার রস
কমলা বা মালটার রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ দুটি উপাদান রক্তে প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়াতে সাহায্য করে।
কিউই ফল
কিউই ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। একই সঙ্গে এতে থাকে পটাশিয়াম। এ ফল খেলে ইলেক্ট্রোলাইট স্তর ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি কিউই খেলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: প্লাটিলেট কমে গেছে কি না বুঝবেন যে লক্ষণে
হলুদ
রান্নাঘরের একটি উপাদান হলো হলুদ, যা চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন। প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়বে হলুদ খেলে।
মেথি
মেথি সবার ঘরেই নিশ্চয় আছে! ডেঙ্গু হলে অতিরিক্ত মাত্রার জ্বর কমাতে সাহায্য করে এই উপাদানটি। তবে মেথি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরমার্শ নিতে হবে।
ব্রোকলি
ব্রোকলি হলো ভিটামিন কে’র একটি ভালো উৎস। অন্যদিকে ভিটামিন কে রক্তের প্লেটলেট বাড়াতে সহায়তা করে। যদি কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তাহলে অবশ্যই তাকে ব্রোকলি খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার সারাতে সত্যিই কি কফি উপকারী?
পালংশাক
পালংশাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ওমেগো থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করতে সহায়তা করে এই শাক। পালংশাক গ্রহণে ডেঙ্গু রোগীর প্লেটলেট দ্রুত বাড়বে।
মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়া বীজ
মিষ্টি কুমড়ায় থাকে ভিটামিন এ, যা প্লাটিলেট তৈরি করতে সহায়তা করে। তাই রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা বাড়াতে নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ওয়াটার ফাস্টিংয়ে কি সত্যিই ওজন কমে?
পেঁপে পাতা ও পেঁপে
মালয়েশিয়ার এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডেঙ্গুর কারণে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে পেঁপে পাতার রস তা দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে প্রতিদিন পেঁপে পাতার রস কিংবা পাকা পেঁপের জুস পান করুন।
লেবুর রস
ভিটামিন সি রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সহায়তা করে। লেবুর রসে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও প্লাটিলেটের সংখ্যাও বাড়াতে সাহায্য করে।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক/মেডিকেল নিউজ টুডে/ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
জেএমএস/জেআইএম