ঠাকুরগাঁও পৌরসভার গোবিন্দ নগর গ্রামকে ‘লিচুর গ্রাম’ বলেই চেনেন সবাই। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এ গ্রামে লিচু কিনতে আসেন। প্রতি বছর কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লিচু পাঠানো হয়।
Advertisement
গত বছর কয়েক দফা শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছিল লিচু ব্যবসায়ীদের। এ বছর তীব্র তাপদাহে লিচু পুড়ে গেছে। তবুও কোটি টাকার লিচু ব্যবসার স্বপ্ন দেখছেন বাগান মালিকেরা।
সরেজমিনে জানা যায়, লিচু সংগ্রহের উৎসব চলছে এই গ্রামে। অনেক শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ ও নারীরা এখানে কাজ করছেন। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত দম ফেলার যেন সুযোগ নেই কারো।
আরও পড়ুন: জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলের সমাহার
Advertisement
বাগান মালিক আব্দুল রহমান বলেন, ‘লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লিচুর গায়ে দাগ না থাকলে কয়েক কোটি টাকার লিচু বিক্রি করতে পারতাম আমরা। তবুও কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করছি। এবার লিচুর দাম কিছুটা বেশি।’
বাগান মালিক মতিউর রহমান বলেন, ‘এখনো বোম্বাই, চায়না থ্রি, বেদানা লিচুসহ অন্য জাতের লিচু গাছে আছে। ঝড়ের কবলে না পড়ে এবার লিচুতে বাজিমাত হবে। গোলাপি লিচুর গায়ে দাগ থাকায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বাকি লিচুতে পুষিয়ে যাবে।’
পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এবারে গোলাপি লিচুর গায়ে দাগ পড়ায় দাম কিছুটা বেশি। ৩ হাজার টাকায় ১ হাজার কিনতে হচ্ছে। আশা করি লিচু এবার ব্যবসা সফল হবে।’
শ্রমিক রিজু আহম্মেদ বলেন, ‘প্রতি বছর এ কাজ করে কিছু টাকা জমাতে পারি। যা আমাদের সংসার খরচ ও লেখাপড়ার কাজে লাগে। এবার অনেক বেশি লিচুর ফলন এসেছে। তাই মজুরিও বেশি।’
Advertisement
আরও পড়ুন: জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস বলা হয় কেন?
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৭০৫ হেক্টর জমিতে ২৫৬টি লিচুর বাগান আছে। এসব বাগান থেকে গত বছর ৫ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছিল। এ ছাড়া এলাকার অনেক বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের ভিটায় লিচু চাষ করা হয়।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুরু থেকে দিনে প্রচণ্ড দাবদাহ ও রাতে ঠান্ডা ছিল। এতে লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু গুঁটি ঝরে গেছে। এরপর টানা দাবদাহ। পাকার আগেই গাছের লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। তবে গাছে যে পরিমাণ লিচু টিকে আছে, তাতে চাষির খুব একটা ক্ষতি হবে না। গোবিন্দ নগর লিচুর গ্রাম থেকে প্রায় কোটির টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা আছে।’
তানভীর হাসান তানু/এসইউ/এমএস