লাইফস্টাইল

বকাঝকা না করে শিশুকে যেভাবে শাসনে রাখবেন

এ প্রজন্মের শিশুদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা বেশ মুশকিল, এমনটিই মত বেশিরভাগ অভিভাবকের। বেশিরভাগ বাবা-মা শিশুদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে নাকানিচুবানি খান। এমনকি অনেকে বিরক্ত হয়ে শিশুদের উপর অতিরিক্ত রাগ-বকঝকা করে ফেলেন, আবার অনেকে গায়েও হাত তোলেন। তবে এমন শাসনে শিশু আরও রাগী ও জেদি হয়ে ওঠে।

Advertisement

একটি শিশু তখনই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে যখন তার সঙ্গে বেশি চেঁচামেচি করেন অভিভাবক আর না হয় তার পছন্দের কিছু না দিলে বা করতে বাধা দিলে। একটি শিশুর বদমেজাজ বা আচরণ খারাপ হওয়ার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক, তবে দীর্ঘমেয়াদে এ সমস্যা দেখা দিলে তা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: বাবা-মায়ের যে ভুলে সন্তান রাগী ও জেদি হয়ে ওঠে

শিশু কেন নিয়ন্ত্রণ বা শাসনের বাইরে চলে যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব অভিভাবেকরই। তবে কিছু উপায় আছে যার মাধ্যমে শিশুকে নিয়ন্ত্রলে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। চলুন তা জেনে নেওয়া যাক-

Advertisement

নরমস্বরে কথা বলুন

অনেক অভিভাবকই সন্তানে সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলেন কিংবা ধমক দেন, ফলে শিশুরা ভয় পেয়ে বাবা-মায়ের থেকে দূরে সরে যায় ক্রমেই। আর বাবা-মায়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তেই শিশু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করে।

তাই শিশুর মানসিক অবস্থা বুঝতে হবে। তার সঙ্গে কথা বলার সময় যদি আপিনি কোমলস্বরে বলেন, তাহলে দেখবেন সে আপনার কথা বুঝবে ও নিজের কথাও আপনার সঙ্গে শেয়ার করবে।

আরও পড়ুন: যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যাদের

Advertisement

অনুরোধ করুন

সন্তানকে অনুরোধ করার বিষয় হয়তো অনেকেই ভাবতেও পারেন না! তবে কিছু ম্যাজিক শব্দ যেমন- দয়া করে, দুঃখিত ও ধন্যবাদ এগুলো ব্যবহারে সন্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন আপনি। সন্তানের বয়স যাই হোক না কেন, সবসময় তাকে দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার জন্য বলতে পারেন। এতে শিশুর ঘরের কাছে আগ্রহ বাড়বে।

গঠনমূলক শাস্তি দিন

বকাঝকা বা শিশুকে না মেরে তাকে গঠনমূলক শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করুন। যদি সে চিৎকার করে তাহলে নিজ থেকেই তাকে শান্ত হতে দিন। যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাত করে, তাহলে শিশুকে ওই আঘাতের উপর একটি মলম বা ব্যান্ড-এইড লাগানোর পরামর্শ দিন।

আরও পড়ুন: শিশুর অ্যাজমার মারাত্মক লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখান

শিশুদের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করতে শেখান। শিশু কিছু চাইলে তাকে কিনে দেবেন, যদিও সে কাঁদে বা রাগ করে তবুও তাকে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ শেখাতে সবকিছু তার সামনে দেবেন না। এমনকি পানি ঢেলে পান করা, এটা-সেটা এগিয়ে দেওয়া ইত্যাদি করানোর অভ্যাস করতে হবে শিশুকে।

প্রশংসা করুন

শিশুর প্রকিটি পদক্ষেপের প্রশংসা করুন। এতে তার উৎসাহ বাড়বে সব কাছে। তাই যে কোনো কাজেই শিশুর প্রশংসা করুন।

চিৎকার করবেন না

আপনার সন্তান জনসমক্ষে বা বাড়িতে ক্ষেপে গেলে বা খারাপ ব্যবহার করলে আপনি তার সঙ্গে চিৎকার করবেন না। আপনি ততক্ষণ শান্ত থাকুন, যতক্ষণ না সে শান্ত হয়। তার ক্ষোভ শেষ হওয়ার পরে, তার সঙ্গে শান্তভাবে কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে তার সঙ্গে কথা বলুন ও এ বিষয়ে নিষেধ করুন।

আরও পড়ুন: শিশু মাথায় ব্যথা পেলে যেসব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না

শিশুর রুটিন বদলান

একঘেয়েমি দৈনন্দিন রুটিন অনুসরণ করতে গিয়ে অনেক শিশুই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে কোনো কাজেই তারা উৎসাহ পায় না। ঠিক যেমন আপনার বা আমাদের প্রত্যেকের বিরতি প্রয়োজন শিশুদেরও তার দরকার আছে।

পড়ালেখার পাশাপাশি শিশুকে তার ঘর পরিষ্কার বা টেবিল গোছানোর কাজ করার জন্য বিরতি দিন। এছাড়া তার সঙ্গে সময় কাটান ও গল্প করুন।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা শিশুদেরকে পরিচালনা করা সহজ নয়, তবে এটি অসম্ভবও নয়। উপরের কৌশলগুলো অনুসরণে চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনার ছোট্ট পরিবর্তনে শিশু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে।

আজ আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। প্রতিবছর জুন মাসের ১ তারিখ বিশ্বজুড়ে পালিত হয় দিবসটি। শিশু নির্যাতনের অবসান ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বে শিশুদের জীবনকে উন্নত করার প্রচেষ্টায় পালিত হয় দিবসটি।

সূত্র: প্যারেন্টিং.ফার্স্টক্রাই

জেএমএস/এএসএম