গ্রীষ্মকাল আসতেই বাজারে ভরে গেছে তরমুজ। লাল টকটকে সুস্বাদু এক ফল এটি। দেখতেও যেমন আকর্ষণীয়, তেমনিই লোভনীয় এর স্বাদ। জানলে অবাক হবেন, স্বাদে সেরা এই ফল কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্যও বিশেষ উপকারী।
Advertisement
শরীর আর্দ্র রাখা থেকে শুরু করে জয়েন্টের ব্যথা, চোখ-হার্ট ভালো রাখা এমনকি স্টেমিনা বাড়াতে দারুণ উপকারী এক ফল হলো তরমুজ। জেনে নিন তরমুজের আরও গুণ সম্পর্কে-
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তরমুজ খেলে হতে পারে যে ৫ সমস্যা
লাইপকোপিনের চাহিদা পূরণ করে
Advertisement
লাল রঙের সবজি বা ফলে থাকে লাইকোপেন নামক এক উপাদান। এটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে দারুণ উপকারী হলো লাইকোপিন।
অন্য যে কোনো লালরঙা ফল বা সবজির চেয়ে তরমুজ ও টমেটোতে এই পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। এছাড়াও বীজহীন তরমুজে লাইকোপিনের মাত্রা বেশি থাকে।
হার্ট ভালো রাখে
তরমুজে সিট্রুলাইন নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া লাইকোপিনযুক্ত তরমুজ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
Advertisement
আরও পড়ুন: টমেটো বেশি খেলে যেসব মারাত্মক রোগ হতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমিত তরমুজ খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে পারে। তবে শুধু তরমুজ খেলেই এই উপকার মিলবে না, বরং এর পাশাপাশি ব্যায়াম, ধূমপান এড়ানো ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটজাতীয় খাবার সীমিত করতে হবে।
জয়েন্টের ব্যথা কমায়
তরমুজে বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন নামক একটি প্রাকৃতিক রঙ্গক আছে, যা জয়েন্টের প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে পারে। কিছু গবেষণা দেখায়, তরমুখে থাকা এই রঙ্গক রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
চোখ ভালো রাখে
মাঝারি এক টুকরো তরমুজে থাকে ৯-১১ শতাংশ ভিটামিন এ। যা প্রতিদিনের ভিটামিন এ’র চাহিদা পূরণ করতে পারে। এই পুষ্টি উপাদান চোখ সুস্থ রাখার অন্যতম চাবিকাঠি। শরীরের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পেতে নিয়মিত পরিমিত তরমুজ খেতে পারেন।
আরও পড়ুন: লাল টকটকে মিষ্টি তরমুজ চেনার কৌশল
পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমায়
রসালো তরমুজে ৯২ শতাংশ পানি থাকে। শরীরকে হাইড্রেট রাখতে তরমুজের বিকল্প নেই। শরীরের প্রতিটি কোষের পানি প্রয়োজন। এমনকি শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে অ্যানার্জি কমে যায় ও অলসতা বাসা বাধে।
ত্বকের প্রদাহ কমায় ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়
তরমুজে থাকা ভিটামিন এ, বি ৬ ও সি ত্বককে নরম, মসৃণ ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। তরমুজে পানির পরিমাণ বেশি থাকে, এর রস ফেসপ্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারেন।
এজন্য ১ টেবিল চামচ তরমুজের রসের সঙ্গে একই পরিমাণ টকদই মেশান। তারপর মুখে ব্যবহার করুন ও ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
মিষ্টির স্বাস্থ্যকর বিকল্প
এক কাপ আইসক্রিমে থাকে প্রায় ৩০০ ক্যালোরি। অন্যদিকে এক কিউব তরমুজের পানীয়তে মিলবে ৪৫.৬ ক্যালোরি। তবে চিনি মেশানো যাবে না।
আরও পড়ুন: গরমে অতিরিক্ত লেবু পানি পান করা হতে পারে বিপজ্জনক
ব্লেন্ডারে তরমুজের পিউরি নিয়ে এর সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন শক্ত হওয়া পর্যন্ত। এটি আপনি আইসক্রিমের বিকল্প হিসেবে খেতে পারবেন।
স্টেমিনা বাড়ায়
তরমুজে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যামিনো অ্যাসিড ওয়ার্কআউটের ক্ষেত্রে স্টেমিনা বাড়াতে পারে। এতে থাকা পটাসিয়াম ওয়ার্কআউটের পর শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এমনকি অতিরিক্ত ঘামের পর তরমুজের পানীয়তে চুমুক দেওয়ার মাধ্যমে চাঙা হতে পারবেন সহজেই।
ডায়াবেটিস বশে আনে
তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) মান ৮০। অর্থাৎ প্রায় এক বাটি কর্নফ্লেক্সের সমান। তবে এই ফলে কিছু কার্বোহাইড্রেট আছে। তার মানে এর গ্লাইসেমিক লোড (এটি কত দ্রুত আপনার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে ও কতটা গ্লুকোজ উৎপন্ন করতে পারে) মাত্র ৫।
ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিতে এক বা দুই টুকরো তরমুজ নিয়মিত খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস বেশি থাকলে এড়িয়ে চলুন।
হজম করা সহজ
বদহজমের সমস্যায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে তরমুজ। কারণ এটি হজম করা সহজ। তাই হজম সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে নিয়মিত খেতে পারেন তরমুজ।
সূত্র: হেলথলাইন
জেএমএস/এমএস