বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় ধাঁধার নামই ছিল যেন পাকিস্তান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওয়াসিম আকরামের ওই দলটিকে হারানোর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে কোন জয় ছিল না টাইগারদের। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর একে একে টেস্ট খেলুড়ে সবগুলো দলকেই হারানোর স্বাদ নিয়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ইংল্যান্ড- সবগুলো রহস্যই ভেদ করা হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল শুধুমাত্র পাকিস্তান।বেশ কয়েকবার এই দলটির বিপক্ষে জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসেও অধরা থেকে গেলো সোনার হরিনটা। মুলতান টেস্ট বলুন আর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনাল বলুন, এই একটি দেশই বার বার কাঁদিয়েছে বাংলাদেশের দর্শকদের। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে কত কাছে চলে এসেছিল বিজয়টা! কিন্তু ২ রানের আক্ষেপে পুড়লো বাংলাদেশের ভাগ্য। সাকিব-মুশফিকদের সেদিনের কান্না ছুঁয়ে গিয়েছিল প্রতিটি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়।অবশেষে পাকিস্তান রহস্য ভেদ হওয়াই নয় শুধু, তাদেরকে কীভাবে ধবলধোলাই করা যায়, সেই ফর্মুলাও আবিষ্কার করে ফেলেছেন বাংলাদেশের রঙিন জার্সির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। গত বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে বাংলাদেশ শুধু ১৬ বছরের আক্ষেপই ঘোচায়নি, মনের ক্ষোভ, জ্বালা সবই মিটিয়ে নিয়েছিল ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে। আজহার আলির বাহিনীকে রীতিমত নাকানি-চুবানি খাইয়েছে টিম বাংলাদেশ।ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এক ম্যাচের ওই সিরিজের আগে আফ্রিদি বেশ বড় কথা-বার্তা বলেছিলেন। দলের ক্রিকেটার উদ্বীপ্ত করে তুলতে শুনিয়েছিলেন অনুপ্রেরণাদায়ী কথাও। বলেছেন, হোয়াইটওয়াশের লজ্জা তিনি ভূলিয়ে দিতে চান টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে।কিন্তু আফ্রিদি সম্ভবত জানতেন না, ঊষার আলো ভেদ করে, বাংলাদেশে নতুন সুর্যোদয় হতে যাচ্ছে ওই ম্যাচেই। সাৎক্ষীকার এক অজপাড়া গাঁ। একেবারে সুন্দরবনের কোলঘেঁষে। সেখানেই বেড়ে উঠেছিল ব্যঘ্র বাহিনীর নতুন এক সদস্য। মাত্র ২০ বছর বয়সেই হুঙ্কার ছাড়ার জন্য উপর্যুক্ত মঞ্চ খুঁজছিলেন তিনি। পেয়ে গেলেন পাকিস্তানকে। মুস্তাফিজুর রহমানের হুঙ্কারটা টের পেয়েছিল সেদিন আফ্রিদি এবং মোহাম্মদ হাফিজ। বাঁ-হাতি কাটার মাস্টারের প্রথম আন্তর্জাতিক শিকারই হলেন টি-টোয়েন্টিতে সর্বজন শ্রদ্ধেয়খ্যাত, সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান শহিদ আফ্রিদি। ওই ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব এবং সাব্বির রহমান। সেই মুস্তাফিজের মুখোমুখি আবার পাকিস্তান। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার পাকিস্তানের সামনে বাংলাদেশ। গত বছরের সেই পরাজয়ের ক্ষত এত সহজে ভুলে যাওয়ার কথা নয় পাকিস্তানের। আফ্রিদির কাছেই পুরোপুরি তরতাজা সেই স্মৃতি। পরাজয়ের বদলা নিতে নিশ্চয় মুখিয়ে পাকিস্তান।কিন্তু পাকিস্তানের ব্যাটিংটার দিকে একবার যদি তাকানো হয়, তাহলে নিশ্চিত বলা যায় বাংলাদেশের পেস আক্রমণের মুখে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে বাধ্য দলটি। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে গো-হারা হেরেছে পাকিস্তান। মিরপুরের উইকেটকেই তারা দোষ দিচ্ছে যে- এই উইকেট বুঝতে পারেনি তারা। কিন্তু ভারতীয় ম্যাড়ম্যাড়ে বোলিংয়ের সামনেই কিভাবে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে আফ্রিদি বাহিনি, সেটাই দেখেছে সবাই।অপরদিকে ভারতের কাছে হারের পর আরব আমিরাতের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে খুব বেশি সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে না পারলেও বোলিংয়ে বাংলাদেশ ছিল পুরোপুরি চেনা ছন্দে। ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচেও। ২ রানে ২ উইকেট এবং ২৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর যখন শঙ্কার কালো মেঘ ঘিরে ধরছিল বাংলাদেশকে তখনই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সাব্বির-সাকিবের ব্যাটে রীতিমত ঝড় ওঠায় লংকান বোলারদের বিপক্ষে। অবশেষে উঠলো ১৪৭ রান। সাব্বিরের ব্যাট থেকে এলো ৫৪ বলে টর্নেডো গতির ৮০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।যথারীতি বোলিংয়ে একই ধার। প্রত্যাশা অনুযায়ী বোলিং করলেন বাংলাদেশের বোলাররা। চারজন পেসারের সঙ্গে সমানতালে গর্জে উঠলেন সাকিব আল হাসানও। ফলে বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিস সত্ত্বেও শ্রীলংকাবধ হয়ে গেলো ২৩ রানের ব্যবধানে। একই সঙ্গে ফাইনালে ওঠার অসাধারণ একটা সুযোগও তৈরী হয়ে গেলো বাংলাদেশের সামনে।আরব আমিরাত আর শ্রীলংকাকে হারিয়ে এক কথায় বলা যায় উড়ছে যেন বাংলাদেশ। এই দলটিকে হারানোর সাধ্য কার! গত বছর এপ্রিলে পাকিস্তানকে একের পর এক হারানোর সুখস্মৃতি মুছে যাওয়ার কথা নয় মাশরাফি-সাকিব-মুস্তাফিজদের। সেই সুখস্মৃতি সঙ্গে নিয়ে আর আফ্রিদিদের ব্যাটিংয়ের দুর্বলতাকে পুঁজি করে আরেকবার গর্জে উঠবে বাংলাদেশ। আরও একবার বধ করবে পাকিস্তানকে, এ অপেক্ষাতেই রয়েছে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। আইএইচএস/এবিএস
Advertisement