ফিচার

সুভাষ দত্তের জন্ম

সুভাষ দত্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, সিনেমা চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা। তিনি ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ। তার কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল সিনেমার পোস্টার এঁকে। এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিনি।

Advertisement

মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রে আর্ট ডিরেকশনের মধ্য দিয়ে তার পরিচালনা জীবন শুরু হয়। এরপরে তিনি এহতেশাম পরিচালিত এ দেশ তোমার আমার ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র সুতরাং এবং সর্বশেষ চলচ্চিত্র ও আমার ছেলে ২০০৮ সালে মুক্তি লাভ করে। এছাড়া তিনি বেগম রোকেয়া'র জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ইচ্ছে পোষণ করলেও তা পূরণ করে যেতে পারেননি।

সুভাষ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন মামার বাড়িতে ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুন্সিপাড়া নামক স্থানে। তার পৈতৃক বাসস্থান বগুড়া জেলার চকরতি গ্রামে। বসবাস করতেন পুরান ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের নিজ বাড়িতে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ও সুশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখতে ভারতের বোম্বেতে গিয়ে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে একটি ছায়াছবির পাবলিসিটির স্টুডিওতে মাত্র ত্রিশ টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে যোগ দেন প্রচার সংস্থা এভারগ্রিন-এ। এরপর তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকার কাজের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্ম

Advertisement

১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম এর এ দেশ তোমার আমার চলচ্চিত্রে একজন দুষ্ট নায়েব (কানুলাল) এর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি। ষাটের দশকের শুরুর দিকে নির্মিত বহুল আলোচিত হারানো দিন চলচ্চিত্রেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হলো- এ দেশ তোমার আমার, হারানো দিন, সুতরাং, আবির্ভাব, ক্যায়সে কুহু, পয়সে, কলকাতা ’৭১, নয়া মিছিল, কাগজের নৌকা, পালাবদল, ফুলশয্যা, আকাঙ্ক্ষা, বসুন্ধরা, ডুমুরের ফুল, বিনিময়, সকাল সন্ধ্যা, রাজধানীর বুকে ইত্যাদি।

চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি প্রচুর মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে ঢাকার আরণ্যক নাট্যদলের প্রথম প্রযোজনা কবর নাটকে তার প্রথম মঞ্চাভিনয় ১৯৭২ সালে। চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও দক্ষ ছিলেন তিনি। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ১৯৬৫ সালে ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসবে সুতরাং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৭৯) ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৬৮) পুরস্কৃত হয়েছে। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- সুতরাং, আবির্ভাব, কাগজের নৌকা, পালাবদল, আলিঙ্গন, আয়না ও অবশিষ্ট, বিনিময়, আকাঙ্ক্ষা, ডুমুরের ফুল,বসুন্ধরা, সবুজসাথী, স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: রবি ঘোষের প্রয়াণ দিবস

বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ ছাড়াও ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘আকাশ আর মাটি’, ‘রাজধানীর বুকে’, ‘রুপালি সৈকতে’, ‘নাজমা’সহ নিজের পরিচালিত সব সিনেমার পোস্টার আঁকেন সুভাষ দত্ত। ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় ২০৮টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এ সময়ে চলচ্চিত্রের পোস্টার আঁকতেন সুভাষ দত্ত, নিতুন কুন্ডু, আজিজুর রহমান, আবদুল মালেক, মুর্তজা বশীর, কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খানের মতো বিখ্যাত শিল্পীরা।

Advertisement

১৯৭৭ সালে ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সুভাষ দত্তের প্রযোজনা-পরিচালনার বসুন্ধরা চলচ্চিত্রটির জন্য সেরা পরিচালক ও প্রযোজকসহ এটি মোট পাঁচটি পুরস্কার লাভ করে। সুভাষ দত্ত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক-এ ভূষিত হন। এছাড়াও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার- আজীবন সম্মাননা পান ২০০৩ সালে। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

কেএসকে/এমএস