একুশে বইমেলা

চমক নেই বইমেলায়, পুরোনো বইয়ের সমাহার

পুরোনো বইয়ের ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়েছে অমর একুশে বইমেলার এবারের আসর। বইমেলায় নেই নতুন বইয়ের চমক। দু-চারটি স্টলে নতুন বই তোলা হলেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা পাচ্ছেন না দোকানিরা। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সে কারণে পাঠক নতুন বইয়ের চমক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন নতুন লেখকের বই প্রকাশনায় বাধা সৃষ্টি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে কথা হয় অক্ষর প্রকাশনীর আসোক রায় নন্দির সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাগজের অতিমাত্রায় দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন লেখকদের বই প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ কাগজের দাম বেড়েছে তাতে প্রতিটি বইয়ের দাম আগের চাইতে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সে কারণে স্টকে যেসব পুরোনো বই ছিল সেগুলো দিয়ে মেলার স্টল সাজানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনীর মাধ্যমে নতুন লেখকের তিনটি সৃজনশীল বই ও ছয়টি পুরোনো বই নতুন এডিশনে প্রকাশ করা হয়েছে। এসব বইয়ের দাম আগের চাইতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিক পরিমাণে নতুন বইয়ের সমাহার না হওয়ায় আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। তবে মেলার ১০ দিন পর বিক্রি বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।’

Advertisement

আরও পড়ুন>>কাগজের দাম বাড়ার প্রভাব বইমেলায়, কেনাকাটায় হিসাবি পাঠক

প্রতি বছর নতুন লেখকদের বইয়ের সমাহার হয় জিনিয়াস পাবলিকেশনস’র স্টলে। এ বছর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। চাকচিক্য করে স্টল সাজালেও সেখানে গত কয়েক বছর আগে প্রকাশ হওয়া বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

জিনিয়াস পাবলিকেশনস’র ম্যানেজার আব্দুল বাতেন ভুইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘দু-চারটি নতুন বাদে সব আগের ছাপানো বই তোলা হয়েছে। এর মধ্যে গোয়েন্দা রহস্য, ইসলামী শিক্ষা ও সাহিত্য, বাচ্চাদের গল্প-উপন্যাস, বিদেশি গল্প-উপন্যাসের অনুবাদ ও ভৌতিক গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে বই কিনতে এসে নতুন বই খুঁজলেও তাদের পুরোনো বইগুলো দেখানো হচ্ছে। ২৫ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি করা হলেও তেমন বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।’

Advertisement

পাশেই ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টল। সেখানে কথা হয় এই প্রকাশনীর ম্যানেজার আমজাদ হোসেন খান জাগুলিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নতুন এডিশন ও নতুন লেখকের বই তোলা হয়নি। এসব বইয়ের দাম অনেক বেড়ে যাবে বলে ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে না। তবে মেলার ১০ দিন পর কিছু নতুন লেখকের বই প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানান তিনি।’

পুথিনিলয়ের প্রকাশক এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘এবছর নতুন বই বের করা খুব কঠিন। আমরা খুব ধীরে-সুস্থে নতুন বইয়ের কাজ করছি। কিন্তু নতুন বইয়ের পরিমাণটা আগের চাইতে কমে যাবে। গত বছর আমাদের পুথিনিলয় থেকে ১৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু এবছর মাত্র ৪০-৫০টি বই প্রকাশের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বইগুলো ছাপানোর কাজ চলছে। ধীরগতিতে কাজ চলছে।’

আরও পড়ুন>>মেলার পঞ্চম দিনে এলো ৭৩টি নতুন বই

তিনি বলেন, ‘এবছর কী হবে আমরা বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে এবছর পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা কম। বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় কেনার আগ্রহও কম। অনেকেই মেলায় ঘোরাফেরা করছেন, কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় নতুন বইয়ের সেই চমক আর পাবেন না পাঠকরা। একই সঙ্গে নতুন লেখকরাও বেশ সংকটে পড়বেন মূল্যবৃদ্ধিজনিত সমস্যার কারণে। প্রতি বছর যে পরিমাণ নতুন লেখকের বই বের হয় তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ লেখক থাকেন যাদের লেখার চাহিদা পরে থাকবে। কিন্তু এবছর যেহেতু বই কম প্রকাশিত হচ্ছে সেহেতু সেখানেও একটি ঘাটতি থেকে যাবে।’

বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে অমর একুশে বইমেলায় প্রতিদিন নতুন লেখকদের ন্যূনতম ২০০ থেকে ২৫০টি নতুন বই প্রকাশ হলেও এবার সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে। চলতি বছর অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন ২১টি, তৃতীয় দিন ৯৬টি, চতুর্থ দিন ১১৩টি এবং আজ রোববার পঞ্চম দিন ৭৩টিসহ এ পর্যন্ত ৩০৩টি নতুন বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন>>শুধু ঘোরাঘুরি নয় অন্তত একটি বই কিনুন

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা কম হলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভাটা পড়েনি। বাঙালির ভাষা ও ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বইমেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসছেন। হাতে-মাথায় বাহারি ফুলের মালায় নিজেকে সাজিয়ে মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী নারীরা। অনেকে সপরিবারে এসেছেন প্রাণের মেলায়।

এবছর মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের স্টল ও প্যাভিলিয়নে শুরু থেকেই কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিপরীত দৃশ্য অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশনীর স্টলে। অন্যান্য বছর মেলার মধ্যে নতুন লেখকদের সমাগম ও আড্ডা থাকলেও এবছর নতুন বইয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই দৃশ্য চোখে পড়েনি।

এমএইচএম/ইএ/জিকেএস