তরুণ রাসেল
Advertisement
যদিও কথাটি প্রবাদ হয়ে গেছে যে, বই পড়ে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয় না। কিন্তু কেউ দেউলিয়া হোক বা না হোক আমি হই। তবে আমি দেউলিয়া হই বইপড়ার অভ্যাসের কারণে বই কিনে কিনে। এতে আমি বরং আনন্দই পাই। যখন পকেটের শেষ আধুলিটাও শেষ করে বাসায় ফেরার টাকাটাও পকেটে না রেখে, অমর একুশে বইমেলা কিংবা পল্টন-নীলক্ষেতের ফুটপাত থেকে বহুদিন ধরে খুঁজে ফেরা বই কিনে পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে পা বাড়াই! ঠিক ওই সময়ে নিজেকে কেমন জানি সক্রেটিস বা প্লেটো মনে হয়। মনে হয় বিরাট কোনো দার্শনিক বা জ্ঞানী হতে চলেছি আমি।
যদিও জানি, আমার ক্ষেত্রে সে আশায় গুঁড়েবালি। কেননা যেখানে মহাজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন নিজেকে নিয়ে বলে গেছেন, ‘আমি কেবল জ্ঞানসমুদ্রের সৈকতের ধারে সামান্য বালুকণার সন্ধান পেয়েছি।’ সেখানে আমি বা আমরা তো অদ্যবধি জ্ঞানসমুদ্রের ঠিকানাই জানতে পারিনি। তবে আমি নিরাশ নই, জ্ঞান অন্বেষার আশায় প্রতিদিন আমি ঘরের বাহির হই। জানার অদম্য ইচ্ছে নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন বই পাঠকেন্দ্রে নিত্য নতুন বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকি। চারপাশে আরও হাজার বইয়ের স্তূপের পাশে।
আমার মাথায় একটি চিন্তা ঘুরপাক খায় সব সময়; সেটি হলো, এই যে লেখকেরা এত এত পরিশ্রম করে দীর্ঘসময় ব্যয় করে একেকটি বই লিখেছেন, আমরা কি পারি না মাত্র দু’তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে বইগুলো পড়ে জানার পরিধি বাড়াতে? আর সেই চিন্তা থেকেই আমি নিয়মিত নিত্য নতুন বই সংগ্রহ করে যাই, পাঠ করি। অনেকের অনেক রকম শখ থাকে। তবে আমার শখ দুনিয়ার যাবতীয় বই সংগ্রহ করা এবং অবসরে বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখা এবং পাঠ করা। যাঁরা অনেক বেশি পড়েন, তারা হয়তো অনেক কিছু জানেন। কিন্তু আমি জানি, আমি এখনো জানার মতো তেমন কিছুই জানি না।
Advertisement
আরও পড়ুন: কেমন হবে ২০২৩ সালের বইমেলা?
আমার নিজের সম্পর্কে এ সত্যটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক অনেক বিষয় আমার অজানা। আর সেই অজানাকে এতটুকু হলেও জানার জন্য এখনো আপ্রাণ চেষ্টা করছি। সেই লক্ষ্যে গড়ে তুলেছি একটি ব্যক্তিগত পাঠাগারও। যেখানে এ পর্যন্ত প্রায় বারো হাজারেরও বেশি বই সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এগুলোর অর্ধেকটা আমার নিজের পয়সায় কেনা এবং বাকিগুলো বিভিন্নজনের কাছ থেকে পাওয়া উপহার, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রাপ্ত পুরস্কার। ঢাকা শহরের যানজটযুক্ত যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি পেতে কিংবা দূরের যাত্রায় আমার নিত্যসঙ্গী হিসেবে থাকে বই।
প্রতি বছরের মতো মহান ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন লেখক, কবি-সাহিত্যিক এবং আমার মতো হাজারো জ্ঞানপিপাসু পাঠক সমবেত হবেন বইমেলায়। দেশের বাইরে থেকেও আসেন অনেকেই। লেখক-পাঠকের এই সুবিশাল মিলনমেলায় শুদ্ধ চিন্তায় মাতোয়ারা হয় সবাই। উৎসবমুখর পরিবেশে ফেব্রুয়ারির প্রতিটি দিন বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ পরিণত হয় জ্ঞানমেলায়। মিলন ঘটে জ্ঞানী-গুণী, লেখক-পাঠকের। মননে-মগজে জাগরণ হয় জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা, অজানাকে জানার স্বদিচ্ছা।
বইমেলাকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে ওঠে শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো এলাকা। প্রাণের আবেগে সবাই খুঁজে ফেরেন তার প্রিয় লেখকের নতুন বইটি। কেউ বা প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন পায়ের ছাপ ফেলেন লেখক-কবির আড্ডাখানায়। সারামাসের প্রাণের মেলার শেষলগ্নে ২৮ ফেব্রুয়ারির শেষ বিকেলের আড্ডায় সবাই চান বইমেলা যেন ভঙ্গ হয়ে না যায়। গাদা গাদা পছন্দের বই হাতে ঘুরে বেড়ায় মেলা চত্বরে, এখানে-ওখানে।
Advertisement
আরও পড়ুন: নতুন বই প্রকাশে অনীহা লেখক-প্রকাশকদের
আজ পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হলো আমাদের প্রাণের মেলা, জ্ঞানের মেলা, অমর একুশে বইমেলা। আমার মতো যারা প্রিয় বইমেলার আশায় সারাবছর অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের সবাইকে আবারও করি আহ্বান, চলো যাই জ্ঞান আহরণে...
লেখক: সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মী।
এসইউ/জেআইএম