সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ না হওয়ায় রাষ্ট্রের দেয়া সর্বোচ্চ (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রির সনদ রাষ্ট্রের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন লালমনিরহাটের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ রকম একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে জাগো নিউজে। ওই খবরে বলা হয়েছে- লালমনিহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সৈয়দ আলীর ছেলে মাহাফুজার রহমান জন্ম থেকেই ডান হাত সম্পূর্ণভাবে অক্ষম (অনুভূতিহীন)। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও স্কুলজীবন থেকেই লেখাপড়ায় দারুণ মেধাবী ছিলেন মাহাফুজার। উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারমাইকেল বিশ্বদ্যিালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে সম্মান ও পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তিনি বিভিন্ন ব্যাংক, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পরও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সর্বশেষে ২০১২ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি নির্বাচিত হন। সে বছর লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলা থেকে ৪৫ জন লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। চূড়ান্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য কোটা পূরুণ করা হলেও ওই সময় প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করা হয়নি। ফলে তিনি চাকরিও পাননি। এর প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মাহাফুজার রহমান নামের ওই প্রতিবন্ধী লিখিত একটি আবেদনসহ তার শিক্ষা জীবনের অর্জিত সকল মূল সনদ জমা দেন।সাধারণত কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয় সমাজের অনগ্রসর মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য। একদিকে কোটার পদ শূন্য থাকবে অন্যদিকে বেকারত্বের গ্লানি নিয়ে জীবন-যাপন করবে চাকরিপ্রার্থীরা এটা হতে পারে না। পাহাড়সম বেকারত্বের এদেশে চাকরি যেখানে সোনার হরিণ সেখানে একজন প্রতিবন্ধীর জন্য সেটা কত কঠিন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থায় তারা যদি বৈষম্যের শিকার হন এরচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। সরকার কর্তৃক কোটা পদ্ধতি চালু থাকার পরও কেন প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ হচ্ছে না সেটি বোধগম্য নয়। মাহাফুজার রহমান নামের ওই প্রতিবন্ধী যে বঞ্চনাজনিত অভিমান থেকে সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন সেটি আমলে নিতে হবে। ক্ষতিয়ে দেখতে হবে তার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কারো কোনো গাফিলতি আছে কি না। তার মতো সমাজের অনগ্রসর আরো কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসুক। এইচআর/পিআর
Advertisement