আব্দুল্লাহ আল মারুফ
Advertisement
বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। লেখক-পাঠকের মেলবন্ধনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে এ উৎসবের আসর। নতুন বইয়ের স্নিগ্ধ ঘ্রাণে যেন মাতোয়ারা হয় পাঠকের মন। প্রশান্তি আসে লেখক-প্রকাশকের অন্তরে।
তবে গত দুই বছর করোনার অভিঘাতে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে বইয়ের বাগান। করোনা এ বছর অনেকটা স্বাভাবিক। আশা করা যায়, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হবে বইমেলা। তবে এ বছরও রয়েছে হতাশার শঙ্কা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কাগজের দাম বৃদ্ধি, বইয়ের প্রতি পাঠকের অনীহা, প্রকাশনীগুলোর বিমুখ অবস্থানে শঙ্কিত সবাই।
এরই মধ্যেই শোনা যাচ্ছে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা বাড়লেও কমছে বইয়ের সংখ্যা। যা বইপ্রেমী পাঠকের পাশাপাশি প্রকাশনীগুলোর জন্যও কষ্টদায়ক বার্তা। এমন অবস্থায় প্রাণের মেলায় প্রাণ ফেরাতে সবার অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। আমাদের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে দ্বায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরই।
Advertisement
আরও পড়ুন: বই প্রকাশ কি কমে যাবে?
জানা যায়, দেশে আমদানি করা কাগজের ওপর অনেক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশের বেশি ধরা হচ্ছে। চার মাস আগেও যে কাগজের রিম ১৫০০ টাকায় পাওয়া যেত, তার দাম এখন ৪০০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের কাগজ ব্যবহার হয়। বইপত্র ছাপানো বা পড়াশোনার কাজে হালকা কাগজ, যার পুরোটাই উৎপাদিত হয় দেশে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লেখা ও ছাপার কাজে চাহিদা বছরে ১০ লাখ টন। দেশেই এর বেশিরভাগ উৎপাদন হয়। তবে খাতটি পড়েছে চরম সংকটে। ক্যালেন্ডার, প্যাকেজিং বা গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ভারী কাগজের দরকার হয়ে থাকে। যা আমদানি হয় অন্য দেশ থেকে। আবার ডলারের মূল্যবৃদ্ধির মারাত্মক প্রভাবও পড়েছে পাল্প আমদানিতে। সেই সঙ্গে দুই বছর করোনার কারণে দেশীয় উৎস থেকে রিসাইকেল করার মতো কাগজও পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে কাগজ তৈরির কিছু উপকরণ দুষ্প্রাপ্যও হয়ে গেছে।
দেশে পেপার মিল আছে ২০৬টি। চালু আছে ৮০টির মতো। ছাপার কাগজের কাজ করে মাত্র ৩০-৩৫টি কারখানা। নানা সূত্র বলছে, গুটিকয়েক কারখানা ছাড়া আর কারও কাছে কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত পাল্প নেই। পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় কেউ বাজারে কাগজের জোগান দিতে পারছে না।
Advertisement
আরও পড়ুন: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কেমন প্রভাব পড়বে বইমেলায়?
গত বছরের শুরুতে ৮০-১০০ গ্রাম অফসেট কাগজ ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তার দাম হয়েছে ৩৩০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। ১০০ গ্রাম অফসেট কাগজের দাম ১৭০০ থেকে ১৭৫০ টাকার জায়গায় ৪২০০ থেকে ৪৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। নিউজ প্রিন্ট কাগজের দাম ৪৫-৫০ টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে কেজিতে ১০৮ টাকা করে ধরা হচ্ছে।
সাধারণত কাগজের মূল্যের ওপর নির্ভর করে বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সমিতিভুক্ত প্রকাশক ও বিক্রেতারা ফর্মাপ্রতি ২৫ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে ৬৫০ টাকা দামের বই এখন ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে তাদের।
অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। জ্বালানি-সংকটের কারণে কাগজসহ বেড়েছে পরিবহন খরচ। পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায় এ সময়টা ছাপাখানায় ব্যস্ততা থাকার কথা থাকলেও অলস সময় পার করছেন কর্মীরা।
আরও পড়ুন: অর্থনৈতিক সংকটেও কি জমবে বইমেলা?
গত বছরের বইমেলায় যে কাগজ রিমপ্রতি দাম ছিল দেড় হাজার টাকা, সেটি বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার। গত বইমেলায় ছোট প্রকাশনীগুলো ১০-১৫টি বই আর বড় প্রকাশনীগুলো ৫৫-৬৫টির বেশি বই প্রকাশ করতে পারেনি।
কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, শিশু সাহিত্য-সংস্কৃতি, ভ্রমণ, বিজ্ঞান, নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতাসহ নানা বিষয়ে জানার অন্যতম উপকরণ বই। তাই বইয়ের প্রয়োজনীয়তা পরিমাপ করা অনর্থক। সুতরাং সুন্দর এবং আদর্শ জাতির প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে বইয়ের ভূমিকা অপরিহার্য।
আশা করবো, সবার সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে অমর একুশে বইমেলা। সুতরাং সরকারিভাবে প্রণোদনা এবং আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। প্রাণের বইমেলা হয়ে উঠুক আরও প্রাণবন্ত। এ প্রত্যাশা লেখক-প্রকাশক-পাঠকের।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/এমএস