এটিএম বুথে জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে এক বিদেশিসহ চারজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বস্তিদায়ক। আশা করা যাচ্ছে এরফলে জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। বেরিয়ে আসবে মূল হোতারাও। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত রোববার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। গতকাল সোমবার জালিয়াতির একটি মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদের ছয় দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সংবাদ ব্রিফিংয়ে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানায়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন শজেপ্যান মাজুরেক ওরফে পিটার, ঢাকা সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা মোকসেদ আলম ওরফে মাকসুদ, রেজাউল করিম ওরফে শাহীন ও রেফাত আহমেদ ওরফে রনি। পিটার জার্মানির নাগরিক। সাইবার জালিয়াতির ঘটনায় এই প্রথম কোনো বিদেশিকে গ্রেফতার করা হলো।পুলিশের ভাষ্য মতে, ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া পিটার আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্রের সদস্য। ব্যাংক কর্মকর্তারা এটিএম বুথে জালিয়াতিতে তাদের সাহায্য করেছেন। জালিয়াতচক্রের আরো দুজন বিদেশি সদস্য কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। গ্রেফতারের পর ডিবির কাছে পূর্ণ নিরাপত্তা চেয়ে পিটার বলেছেন, ‘আমি সব সত্য বলে দেব। কিন্তু ওরা (আন্তর্জাতিক চক্র) বড় শক্তিশালী, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তোমরা আমাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দাও।’ এ বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে আন্তর্জাতিক একটি চক্র এই জালিয়াতির সাথে জড়িত। এদের হাত অনেক শক্তিশালী। এবং এরা অনেকটা আদা-জল খেয়েই অপরাধে নেমেছে। প্রশ্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের এই রকম এক বা একাধিক বিদেশি সদস্য কী করে বাংলাদেশে আসলো। তারা এদেশে অবস্থান করে এদেশের বিরুদ্ধেই অপরাধ করে যাচ্ছে। অনেকদিন থেকেই চক্রটি ক্রিয়াশীল সেটিও বুঝতে বাকি থাকে না। এছাড়া এদেশের লোকজনও তাদের সহযোগিতা করেছে। এমনকি খোদ ব্যাংকের লোকজনও এর সাথে জড়িত। আমরা পূর্বেও এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে এটা বলেছিলাম যে বিদেশিদের জড়িত থাকার বিষয়টি একটি অশনি সংকেত। অপরাধের জাল কতোটা বিস্তৃত হলে বিদেশিরা তার সঙ্গে জড়িত হয় সেটি ভাবতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে গোয়েন্দা তৎপরতা এক্ষেত্রে কতোটা কি ছিল সেটিও পর্যালোচনা করতে হবে। জঙ্গিবাদসহ নানা ইস্যুতে এমনিতেই নিরাপত্তাহীনতার বোধ কাজ করে মানুষের মধ্যে। এর মধ্যে বিদেশি অপরাধী চক্র যদি জায়গা করে নেয় সেটি হবে আরও ভয়াবহ ব্যাপার। যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কাছ থেকে তথ্য বের করতে হবে। ঘটনার পেছনে কারা কিভাবে জড়িত সেটিও জনসাধারণকে জানতে দিতে হবে। বিশেষ করে পিটার ‘সব সত্য বলে দেওয়ার’ যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে সেটিও দেশের মানুষ জানতে চায়। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টিও উদ্বেগজনক। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকা অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। আমরা আশা করবো এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের মূল হোতারা বেরিয়ে আসবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এ ধরনের অপরাধ রোধ করতে। এইচআর/পিআর
Advertisement