ইসমাঈল হোসেন নয়ন
Advertisement
পতেঙ্গা সাইক্লিস্ট চিটাগংয়ের আমরা দুজন সাইক্লিস্ট মিলে পরিকল্পনা করি দেশের সর্বোচ্চ দূরত্বের প্রায় ১০০০ কিলোমিটারের ক্রসকান্ট্রি রুট তেঁতুলিয়া টু টেকনাফ রাইডের। শুরুতে পরিকল্পনা করি আমি আর ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম।
তবে পরবর্তী সময়ে আমাদের পরিকল্পনা যোগ দেন পতেঙ্গা সাইক্লিস্টয়ের আরও দুজন সাইক্লিস্ট শহীদুল হক তানভীর ও মেহরাব হোসেন অভি। এই যাত্রায় আমরা দেশের মোট ১২টি জেলা ঘুরেছি। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-জয়পুরহাট-সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-গাজীপুর-ঢাকা-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার।
শুরুতে আমরা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে চলে আসি অলংকার মোড়ে। আগেই পঞ্চগড়ের বাস টিকেট বুকিং করে রেখেছিলাম। ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাইকেলসহ আমরা বাসে যাত্রা করি পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে। ২১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় আমরা পঞ্চগড় সদরে পৌঁছায়। তারপর দুপুরে রওনা দিই বাংলাবান্ধার উদ্দেশ্যে।
Advertisement
২১ শে ডিসেম্বর
প্রথম দিন বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে আমাদের দু’চাকায় যাত্রা শুরু হয় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে তারপর তেঁতুলিয়া জিরো পয়েন্ট এসে আমাদের মূল রাইডের সূচনা করি। কিছুক্ষণের মধ্যে পশ্চিমাকাশে কুয়াশার সঙ্গে লাল আভা সূর্য মামা দৈনিক নিয়মের বিদায়ক্ষণে।
তেঁতুলিয়া চা বাগানে থামলাম, চা বাগানে একটুখানি হাঁটাচলা করলাম। আঁধার ঘনিয়ে আসছে ফিরতে হবে পঞ্চগড়ের সদরে তাই মহান আল্লাহ তায়ালার নামে আবারো প্যাডেল চেপে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলছি। অন্ধকার নেমে এসেছে তাই নিরাপত্তার তাগিদে রিফ্লেক্ট জ্যাকেট, সিটের পিছনে লাইটিং করে দিলাম। কার স্থলবন্দর ও ইট ভাটার সব ভারী যানবাহন। ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট প্যাডেলিং করে আমরা এখন পঞ্চগড় সদরে।
হোটেল আগেই বুকিং করে রেখেছিলাম তাই সরাসরি হোটেলে উঠলাম। সবাই ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে রাতের ভোজন সেরে নিলাম। পঞ্চগড় সদরের মার্কেটে ঘুরাঘুরি করছি পেছন থেকে এক ভাই ডেকে বললেন, ‘কিছুক্ষণ আগে যে সাইকেল নিয়ে ঢুকলেন তারাই কি আপনারা?
Advertisement
আমরা বললাম, হ্যাঁ আমরাই ছিলাম। তারপর আমাদের রাইড সম্পর্কে জানতে চাইলেন, বিস্তারিত বললাম। তারপর উনি অনেক সাইক্লিস্ট, হাইকারসের ছবি দেখালেন। যাদেরকে তিনি সাহায্য করেছেন। এদের সবাই আমাদের পরিচিত।
এই ভাইয়ের নাম হৃদয়। তিনি চায়ের দাওয়াত দিতেই একসঙ্গে চা পান করলাম। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। এবার আর দেরি নয়, চলে যাওয়া যাক ঘুমের দেশে।
২২ ডিসেম্বর
দ্বিতীয় দিন ভোরে পঞ্চগড় সদর থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। ঘড়ির কাঁটায় এখন সময় সকাল ৭টা। জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম চারদিকে সাদা দেখছি, চোখ মুছে আবারো দেখলাম, দেখি কুয়াশার চাদরে মোড়ানো পঞ্চগড়।
ভাবলাম ৮টার মধ্যে হয়তো মোটামুটি কুয়াশা কমবে এই ভাবনা মাথায় নিয়ে প্রস্তুত হয়ে সকালের ভোজন করতে গেলাম। পেটপূজা শেষ করে এসে দেখি ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা ১০মিনিট কিন্তু কুয়াশার জন্য ৫ মিটারের সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সাইক্লিং খুবই ঝুকিপূর্ণ।
অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে সকাল ৯টা অতিক্রম করলো কিন্তু কুয়াশা কমছে না। এবার আর অপেক্ষা নয়, লাইট কালারের জ্যাকেট পরিধান করে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। প্যাডেল চেপে ছুটে চলছি সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে উঠছে পঞ্চগড়।
মানুষ ছুটছে কর্মস্থলে বা কর্মের খোঁজে। চোখ আটকালো নারীদের সাইকেল চালিয়ে কাজে, স্কুল ও কলেজে যাওয়ার দৃশ্যে। বিষয়টি যদিও আমার আগে থেকে জানা ছিল উত্তরবঙ্গের নারী-পুরুষের দৈনন্দিন কাজে যে সাইকেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
কুয়াশার মধ্যে প্যাডেল চেপে ছুটে চলতে একটু কষ্ট অবশ্যই হচ্ছে বিপরীত দিক থেকে আসা ভারী যানবাহন তো আরো বিপদজনক। তারপরও আমরা খুব সতর্কভাবে সাইক্লিং করছি ঠাকুরগাঁও এর কাছাকাছি চলে এলাম। অবশেষে ঠাকুরগাঁও সদরে আমরা। নাশতা বিরতি নিলাম সদরে তার আগে সার্কিট হাউস ঘুরে আসলাম।
এবার যাত্রা শুরু দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। কুয়াশার আড়ালে সূর্য মামা একটু একটু উঁকি মারছে মোটামুটি ৩০-৪০ মিনিট পর নিজের অস্তিত্বের জানান দিলো সূর্য মামা। দিনাজপুর জেলাতে প্রবেশ করলাম যদিও সদর এখনো অনেক দূরে মাঝপথে ঠাকুরগাঁও জেলার একজন ব্যবসায়ী ভাই আমাদের রাইড সম্পর্কে জানতে চাইলেন অনেকক্ষণ আলাপ হলো তারপর ভাই চায়ের দাওয়াত করলো।
চা খেতে খেতে তিনি বললেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ঠাকুরগাঁও থেকে বাইক চালিয়ে চট্টগ্রাম যাবো, রাঙামাটি সাজেক ভ্যালি যাবো, তোমাদের দেখে বেশ অনুপ্রাণিত হলাম। চা খাওয়া শেষে তার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ছুটছি দিনাজপুর সদরের দিকে।
হাবিপ্রবির ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়লাম। এরিয়াটা বেশ ভালো লেগেছে সাইকেল চালিয়ে মোটামুটি ঘুরে ফেললাম হাবিপ্রবি। এবার ছুটছি সদরের দিকে। এক ছোটভাই রাস্তা দেখিয়ে বলল, এই পথে সদর কাছে হবে। এখন আমরা দিনাজপুর সদরে, সদরে এসে একটা বিপদের সম্মুখীনও হলাম এই গল্প অন্যদিন লিখবো। মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে বিপদ কাটিয়ে হোটেল বুকিং করলাম।
রাতের ভোজন করতে বের হয়ে দিনাজপুরের সদরের এক অন্যরুপ দেখলাম ভাবনার দিনাজপুরের চেয়েও বাস্তবের দিনাজপুর অনেক এলিট। দেশীও ও ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতির মিক্সিং সব আছে এইখানে, দিনাজপুর নিয়ে আমার ধারণাটাই পাল্টে গেলো। সুখ ও বেদনার মুহুর্ত কাটিয়ে ঘুমের দেশে যাচ্ছি দিনাজপুর থেকে!
২৩ ডিসেম্বর
তৃতীয় দিনে দিনাজপুরে ঘুম ভাঙলো সকাল ছয়টায়। তড়িঘড়ি করে গুগলে সার্চ করে দেখলাম সূর্যোদয়ের সময়, দেখি ৬টা ৪৮মিনিটে সূর্যোদয় হবে। আলহামদুলিল্লাহ আজ আর ফজরের নামাজ মিস হয়নি।
নামাজ শেষ করে সকাল সাতটার দিকে নাশতা করতে বের হলাম। বের হয়ে চোখে পড়লো সে চিরচেনা কুয়াশা, দারুণ উপভোগ করছি ততক্ষণে আমরা নিশ্চিত যে আজও ৯টার আগে বের হওয়া সম্ভব না। নাশতা সেরে হোটেলে ফিরলাম সবকিছু গুছিয়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এখন সময় সকাল ৯টা কুয়াশার চাদরে মোড়ানো দিনাজপুর সদর। এই দিনাজপুর কারণে অকারণে আমার কাছে প্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠে এসে ছবি তুলে রাখলাম নিজের সঙ্গে। এবার যাত্রা শুরু করছি রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলার উদ্দেশ্যে। জয়পুরহাট থেকে দিনাজপুর যাওয়ার গল্পটা আলাদাভাবে লিখবো।
আমরা দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, বিরামপুর, হাকিমপুর ও পাঁচবিবি হয়ে জয়পুরহাটের কাছাকাছি এখন। দু’পাশে বিস্তৃত বিল আর প্রায় জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। একদম হলুদ হয়ে আছে বিলগুলো পাঁচবিবি প্রবেশ করার আগে সাইকেল থেকে নেমে একটা সেলফি তুলে রাখলাম।
আমরা এখন জয়পুরহাট সদরে, আমি আর তানভীর ভাই হোটেল খোজা খুঁজি করছি সন্ধ্যা হয়ে অন্ধকার নেমেছে। অবশেষে ৪০০ টাকায় দরাদরি করে করে ডাবল বেড একটি রুম ম্যানেজ করি। হোটেলে গিয়ে গোসল সেড়ে নামাজে দাঁড়ালাম তারপর রাতের ভোজন করতে বেরিয়ে জয়পুরহাট সদরে পায়চারি করছি।
রাতের ভোজন যে হোটেলে করলাম সে হোটেলে আবার চা নাই। চা খাওয়ার জন্য অন্য হোটেলে গেলাম সেখানে গিয়ে মিষ্টি, সন্দেশ টেস্ট করলাম। উত্তরবঙ্গে এসে বেশি মিষ্টান্ন পান করা হচ্ছে, আমি তো উত্তরবঙ্গের মিষ্টির প্রেমে মজেছি। রুমে ফিরে আড্ডায় বসেছি, আড্ডা শেষে জয়পুরহাট থেকে চলে যাচ্ছি ঘুমের দেশে!
২৪ ডিসেম্বর
চতুর্থ দিনে জয়পুরহাটে খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে ফজর সালাত আদায় করে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি। জানতাম কুয়াশা থাকবে প্রচুর, ঠিক তাই ছিলো ঠান্ডাও লাগতেছে বেশ। সকালের নাশতা করতে সদরের দিকে গেলাম। নাশতা সেড়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, আজকের গন্তব্য বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ।
বগুড়া দিকে যাচ্ছি কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো জয়পুরহাট, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না তবুও চলছি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিছু দূর পরপর বাজার মিলে বাজারে মানুষের কৌতূহল সৃষ্টি হয় আমাদের নিয়ে তাদেরকে রাইড সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে কৌতূহল ভাঙাতে হয়, এটা করতে বেশ উপভোগ করি।
বগুড়া সড়ক বিভাগে প্রবেশ করেছি, আজ আমরা বগুড়ায় প্রচুর ঘুরবো হ্যাঁ প্রচুর। মসৃণ পিচঢালা রাস্তায় চালাতে বেশ লাগে কিন্তু প্যারা খাইলাম বগুড়ার কিছক বাজারের পর থেকে। রাস্তার কাজ চলছে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত! এই রাস্তায় প্রচুর সময় লস হয়ে যায়। গন্তব্য প্রথমে বগুড়ার মহাস্থানগড়।
আমরা এখন মহাস্থান কাঁচা বাজারে। কাঁচা বাজারের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষি দেখতে লাগলাম। তারপর চলে গেলাম মহাস্থানগড়, এইখানে প্রবেশ করতে বিশ টাকার টিকেট কাটতে হয়েছে। পরিবেশটা সুন্দর তবে নব্য কাপলদের আনাগোনা তার উপরে পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরা দম্পতি দেখে মন খারাপ অনেকেরই।
মহাস্থানগড়ে ছবি তুলে আমরা রওনা দিই বগুড়ার বেহুলা বাসরঘরের দিকে। ওইখানেও ২০ টাকার টিকেট কেটে ঢুকতে হলো। বেহুলা বাসরঘরেও দেখি প্রচুর মানুষজন। বেহুলা বাসরঘরের অনেক দর্শনার্থী আমাদের কাছে এসে আমাদের রাইড সম্পর্কে জানতে চাইলেন পূর্বের মতো আমরা সবাইকে জানানোর ব্যাপারটা উপভোগ করতে করতে বিস্তারিত বললাম। এবার বেহুলা বাসরঘরকেও বিদায় বলে দিলাম যাচ্ছি বগুড়া সদরের দিকে।
বগুড়া সদরের দিকে যাওয়ার পথে এক সাংবাদিক ভাই আমাদের ফলো করেন। এরপর বগুড়া সার্কিট হাউসে এসে সাংবাদিক ভাই আমাদের নিয়ে প্রতিবেদনের শুট শুরু করেন। আমি, তানভীর ভাই তাদের প্রশ্নের উত্তর ও রাইড সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরি।
এখন সময় বিকেল সাড়ে ৪টা! আমরা এখনো দুপুরের ভোজন করেনি। বগুড়ার বনানীতে একটি হোটেলে খাওয়া দাওয়া সেড়ে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সময় এখন ৫টা, অন্ধকার নেমে আসছে।
হাইওয়ের কাজ চলছে ওয়ান বাই রোড চালু আছে ভারী সব যানবাহন প্রচুর গাড়ি ছুটছে সঙ্গে আমরাও ছুটছি আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যার পর ননস্টপ প্যাডেলিং করে আমরা সিরাজগঞ্জ সদরের কাছাকাছি চলে আসি, বর্তমানে আমরা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছি।
আমরা আজ রাতে সিরাজগঞ্জ সদরে থাকবো সেখানে সিরাজগঞ্জ সাইক্লিস্ট ভাইয়েরা আমাদের জন্য হোটেল ঠিক করে রাখছে। অন্ধকারের মধ্যে প্যাডেলিং করে সিরাজগঞ্জ সদরে পৌঁছে যায় সেখানে আমাদের স্বাগত জানায় সিরাজগঞ্জের সাইক্লিস্ট ভাইয়েরা।
সেখানে ছিলেন ইন্ডিয়া থেকে আগত সাইক্লিস্ট পাপ্পু ভাইও সবাই চা খেলাম একসঙ্গে! তারপর হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হলাম, তারপর খাওয়া-দাওয়া এরপর রুমে এসে সিরাজগঞ্জ সদর থেকে ঘুমের দেশে চলে গেলাম।
২৫ ডিসেম্বর
পঞ্চম দিন ঘুম ভাঙলো সূর্যোদয়ের পর! সকাল ৭টায় আমাদের খোঁজখবর নিতে চলে আসেন সিরাজগঞ্জের সাইক্লিস্ট ভাইয়েরা। গতকাল রাতে ১১টায় আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে ভাইয়েরা বাড়ি ফিরেছিলো আর এখন সকাল না হতে সবাই চলে এলো আমাদের গাইড করতে। সিরাজগঞ্জের ভাইদের এই আন্তরিকতা ভুলার মতো নয়।
ধন্যবাদ নয়, ভালোবাসা জানাই সিরাজগঞ্জ সাইক্লিস্ট এর এডমিন রায়হান ভাই, নাঈম ভাই’সহ উপস্থিত সব সিরাজগঞ্জের সাইক্লিস্টদের। ভাইদের নিয়ে যাত্রা শুরু সিরাজগঞ্জ সদর থেকে সিরাজগঞ্জ অনেক সুন্দর, সরিষা ক্ষেত, পিচঢালা মসৃণ রাস্তা বেশ ভালো লেগেছে।
কিছুদূর যাওয়ার পর সবাই দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তুললাম, ভাইদের আন্তরিকতার একদম কমতি ছিলো না। যমুনা সেতুর টোলে এলাম আমরা পতেঙ্গা সাইক্লিস্টয়ের চারজন সহ ইন্ডিয়ান সাইক্লিস্ট পাপ্পু দাদা। নাঈম ভাই যোগাযোগ করে আমাদের জন্য গাড়ি আনানোর ব্যবস্থা করলেন। তারপর আমরা যমুনা সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জ কে বিদায় জানালাম।
প্যাডেলিং শুরু টাঙ্গাইলের মাটিতে শুরুতে বাতাস আমাদের বিপক্ষে ৮/৯ কিলোমিটার সাইক্লিং করে অবস্থা খারাপ। এলাম এলেঙ্গা পাপ্পু দাদা যাবে ময়মনসিংহের দিকে এলেঙ্গা থেকে দাদাকে বিদায় জানালাম। এবার মোটামুটি বাতাস কম ধরছে চালানো যাচ্ছে সাইকেল।
টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসের দিকে গেলাম, পাশাপাশি বাজার ঘুরলাম। টাঙ্গাইল - গাজীপুর মহাসড়কে প্যাডেলিং করছি এবার ছন্দ ফিরে এসেছে। বাতাস বিরোধিতা করছে না আমাদের আহা খুব জোরসে চলছে সাইক্লিং।
এবার ক্ষুধা লাগছে মহাসড়কের পাশে একটি ইন্টারেস্টিং হোটেলে চোখ আটকালো, সেটি বাঁশের তৈরি। দুপুরের ভোজন সেড়ে নিলাম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে প্যাডেলিং করছি।
গাজীপুরের শুরু থেকে বিভিন্ন কলকারখানা, ফ্যাক্টরি চোখে পড়ছে এসব দেখে বুঝতে পারছি গাজীপুরে বাজে অভিজ্ঞতা হতে চলছে৷ গাজীপুরের কোনাবাড়ি তে থামলাম হোটেল খুঁজছি, হোটেল দেখলাম কন্ডিশন আগে যতগুলো তে থাকলাম ওইগুলোর মতোই কিন্তু ভাড়া ওইগুলোর চেয়ে তিনগুণ বেশি।
পঞ্চগড়, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ হোটেল গুলোর প্রাইজ ছিল ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে কিন্তু গাজীপুরে ভাড়া চাচ্ছে হাজার ২০০০ এর উপরে। অনেক খোজাখুজির পর ৮০০ টাকার মধ্যে একটি হোটেল ম্যানেজ করলাম। এই ব্যাপারে গাজীপুর সাইক্লিস্ট এর একজন ভাই সহোযোগিতা করেছিলো। খাওয়া দাওয়া করে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে ঘুমের দেশে।
২৬ ডিসেম্বর
ষষ্ঠ দিন গাজীপুরে ঘুম ভাঙলো ভোরে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে নিলাম! গতরাতের অভিজ্ঞতা থেকে গাজীপুরে নাশতা না করে ঢাকার দিকে নাশতা করার পরিকল্পনা করা হয়। গাজীপুর থেকে সকাল ৯টায় রওনা দিলাম আজকের গন্তব্য কুমিল্লা জেলা।
যাত্রার শুরুর দিকে সাইকেল চালাচ্ছি বেশ কিন্তু, যতই ঢাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছি ততই হ্যাচাল বাড়তেছে রাস্তা ভাঙা, প্রচুর ধুলাবালি তার উপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে জ্যাম লেগে আছে একদম অসহ্য লাগছে। কোনোভাবে টঙ্গী এসে ফ্লাইওভার দিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে দিয়ে ঢাকা মহানগর বাইপাসে ঢুকে পড়লাম।
এতোদিন রোদ গায়ে লাগেনি পানির তৃষ্ণাও তেমন পেত না। তবে এখন প্রচুর গরম লাগছে তৃষ্ণাও পাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে চলে এলাম। দুপুরের ভোজন এখনো হয়নি মসৃণ পিচঢালা রাস্তা পেয়ে পোলাপান জোরসে প্যাডেলিং করছে। মেঘনা সেতুতে দাঁড়ালাম পরিবেশটা সুন্দর নদীর পানিও বেশ স্বচ্ছ।
২০-৩০ মিনিট সেতুর রেলিংয়ে বসে কাটালাম। তারপর আবার রওনা চলছে প্যাডেলিং ততক্ষণে খবর এসেছে আমাদের এই মিশনে প্রত্যেকদিন চট্টগ্রাম বসে সহোযোগিতা করতে থাকা ভাইটি কুমিল্লায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে। ভাইটিকে নিয়ে বিস্তারিত লিখবো।
এখন সময় বিকাল চারটা কুমিল্লা থেকে আমরা ৬০-৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছি। হাইওয়ের পাশে একটি হোটেলে দুপুরের ভোজনের জন্য ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে গেল। হাইওয়ের পাশে হোটেল মানে সব গলাকাটা হিসেব নিকেশ এসব হোটেলে। সাদা ভাতের বিল যেটার দাম আমরা জিগ্যেস করিনি সেটার দাম ভাউচার করছে ২৪০ টাকা! এই প্রথম খাবারের বিল ৮০০ টাকার বেশি আসলো। যাক, সব যে মধুর ও সুন্দর হবে তা তো কথা নেই।
আমি আর তানভীর ভাই একই ছন্দে প্যাডেলিং করছি অভি খানিকটা লুস হয়েছে তাই সাইফুল তাকে সঙ্গ দিচ্ছে মাঝখানে আমাদের ডিস্টেন্স বেশি হয়ে গেল। তাই মাঝপথে আমি আর তানভীর ভাই ওদের দু’জনের অপেক্ষায় বসে পড়লাম একটি টং দোকানে, চা খেতে খেতে অপেক্ষা করছি তারা এলে প্যাডেলিং শুরু করলাম। কুমিল্লার কোটবাড়ি যাবো বর্তমানে যেখানে আছি সেখান থেকে কোটবাড়ির দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার।
কুমিল্লায় জয়দা’র বাসায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো। জয়দা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র। তার মাধ্যমিক জীবন কেটেছে পতেঙ্গা হাইস্কুলে। উনার আতিথিয়তা মুগ্ধ আমরা, ব্যাচেলর থাকেন আমাদের জন্য খাবারের আয়োজনও করলেন। জয় দা’র জন্য ভালোবাসা।
২৭ ডিসেম্বর
সপ্তম দিনে কুমিল্লায় খুব ভোরে ঘুম ভাঙেনি! ঘুম ভেঙেছে সকাল ৭টার পর ফ্রেশ হতে হতে সকাল ৮ টা অতিক্রম হয়ে গেল, আজ আমরা কুমিল্লা বিশ্বিবিদ্যালয় ঘুরে দেখবো।
এই কি মুষলধারে বৃষ্টি হতে লাগলো কুমিল্লায়, ৩০-৪০ মিনিট বৃষ্টি পড়ছে এখন থেমেছে তারপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ডিপার্টমেন্টের জয়দা আমাদের তার ক্যাম্পাসে ঘুরতে নিয়ে গেলেন। সকাল নয়টায় আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, কুয়াশাচ্ছন্ন ক্যাম্পাস দেখতেই বেশ লাগছিল।
ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরির পর নাশতা করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, দারুণ টান কাজ করছে আপন শহরের টান। মাঝপথে বৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিচ্ছে, চলছে প্যাডেলিং ফেনীর দিকে ছুটছি। একদম টানা সাইকেল চালিয়ে কুমিল্লা থেকে ফেনী চলে এলাম। এক আঙ্কেলের দোকানে দাঁড়িয়ে কলা, হানিকম্ব, আম দুধ ও প্রাণ দুধ খাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর আঙ্কেল আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের গন্তব্য কোথায় ও রাইড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলেন। আঙ্কেল বেশ অভিজ্ঞ একজন মানুষ আমাদের প্রচুর উৎসাহ দিলেন। তার থেকে বিদায় নিয়ে ব্রিজ ক্রস করতে ফেনী সাইক্লিস্টয়ের ছোটভাই বিশ্বজিৎ আমাদের স্বাগত জানালেন তার শহর ফেনীতে। আমাদের নিয়ে গেলেন প্রথমে ফেনী সার্কিট হাউসে ওইখানে আমাদের অপেক্ষায় ছিল ফেনীর আরও বেশ কয়েকজন সাইক্লিস্ট, সবার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে ফেনীর বড়দিঘীর বৈঠকখানায় বসলাম। এখন সময় প্রায় ৩টা ফেনীকে বিদায় জানাতে হবে কারণ, আজকের গন্তব্য চট্টগ্রাম।
চলছে প্যাডেলিং চালাতে হবে আরো একশো কিলোমিটার। মিরসরাইয়ের আগে দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। খাওয়া দাওয়া করে সময় তখন ৪টা বেজে ৫০ মিনিট। ওই জায়গা থেকে আমাদের আরও ৮৫ কিলোমিটার সাইক্লিং করতে হবে।
অন্ধকার নেমে এসেছে সন্ধ্যা হয়েছে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে রিফ্লেকশন জ্যাকেট পরিধান করে সাইক্লিং করছি। একটানা সাইক্লিং করে একদম সোজা ভাটিয়ারী এসে গেলাম, পিঠে একটু ব্যথা দিয়েছে বলে দাঁড়ালাম। মিনিট পাঁচেক বিশ্রাম নিয়ে আবারো দু’চাকায় ভর আপন শহরের দিকে ছুটছি।
আলহামদুলিল্লাহ চলে আসলাম চট্টগ্রাম সিটি গেইট! টিমের সবাই একে অপরের সাথে হ্যান্ডশেইক করলাম। পতেঙ্গায় আমাদের টিম পতেঙ্গা সাইক্লিস্ট আমাদের অপেক্ষায় আছেন। পতেঙ্গা আসতেই ভাইয়েরা স্বাগত জানালেন, হালকা নাশতাও করালেন। ভাইদের জন্য ভালোবাসা!
এবার যাচ্ছি বাড়ির দিকে আম্মু অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে আমার জন্য। এর আগে এতোদিন আমি বাসার বাইরে থাকিনি ঘুরাঘুরির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আম্মু জড়িয়ে ধরলেন। এই মুহুর্তগুলো লিখে বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই।
২৮ ডিসেম্বর
অষ্টম দিন নিজ বাসায় ঘুম ভাঙলো ভোর পাঁচটা ত্রিশ মিনিটে। আজকে তাড়াতাড়ি বের হবো সে পরিকল্পনায় ছিল আগে থেকে। সকাল ৬টা হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি শুরু তা দেখে আমার চোখ কপালে উঠলো।
অপেক্ষা করছি বৃষ্টি থামবে কিন্তু সকাল ৮টা অতিক্রম হয়ে গেল। বৃষ্টি থামছে না এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। সকাল ৯টার দিকে বের হলাম সবাই। এখন আমরা পতেঙ্গা নদী পারাপারের ১৫ নং ঘাটে।
আকাশ এখনো মেঘলা, নদী পার হলাম রাইড শুরু করছি আনোয়ারা থেকে। রাস্তা ভাঙা বৃষ্টির কারণে কাদা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাইক্লিং করতে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম। চৌমুহনীর আগে আবারো বৃষ্টির জন্য থামতে হলো এখন সময় সকাল ১০টা।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর প্যাডেলিং শুরু করলাম, চৌমুহনীর মোড়ে পানি জমে আছে বেশ আমাদের টিমের দু’জনের পা ভিজে গেল। তার উপরে শু পড়া যার কারণে পুরো কক্সবাজার আসা পর্যন্ত সাইক্লিং করতে কষ্ট হয়েছে।
তৈলার দ্বীপ সেতু অতিক্রম করছি, এবার আমাদের জন্য ভিলেন হলো বিপরীত দিক থেকে আসা বাতাস। বাতাসের জন্য সাইক্লিং করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বাঁশখালীর একটি চায়ের দোকানে বিরতি দিলাম।
সিদ্ধান্ত নিলাম স্লো চালিয়ে গন্তব্যে যাবো, তারপর থেকে ধীরে ধীরে চালিয়ে চাম্বল বাজার-পেকুয়া হয়ে চকরিয়া চলে আসলাম এখন সময় দুপুর আড়াইটা। দুপুরের ভোজন চকরিয়ার একটি হোটেলে করছি।
বাকি আরও ৬০ কিলোমিটার মতো, এখনো বাতাস আমাদের বিরোধিতা করছে তার উপরে চকরিয়া-কক্সবাজার রোডে তিলে তিলে আপহিল সঙ্গে ভারী যানবাহনের চাপ তো আছেই। টানা ৩৫ কিলোমিটার সাইক্লিং করে কক্সবাজার ২৫ কিলোমিটারে বিরতি নিলাম।
চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে, রিফ্লেক্ট জ্যাকেট পরিধান করে সাইক্লিং করছি। ঘণ্টা দেড়েক পর আমরা ডলফিন মোড়ে চলে আসলাম, তারপর সরাসরি কক্সবাজার সার্কিট হাউসে।
হোটেল ঠিক করতে হবে রাতে থাকার জন্য ৪০০ টাকার মধ্যে হোটেল ম্যানেজ করলাম একটা। রাতের খাওয়া দাওয়া সেড়ে বিচে যাওয়ার প্ল্যানিং ছিল। তবে মুষলধারে বৃষ্টি সে পরিকল্পনা ভেস্তে দিলো আলহামদুলিল্লাহ সমস্যা নাই।
২৯ ডিসেম্বর
কক্সবাজারে রাতে বৃষ্টি হয়েছে, তাই ভালোই ঘুম হয়েছে সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে হতে সকাল ৮টা অতিক্রম। আজ অনেক খুশি আমরা ঘণ্টা পাঁচেক পর আমাদের স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। খুশি মনে প্রস্তুতি সেড়ে নাশতা করতে গেলাম। নাশতা করে রওনা দিলাম টেকনাফের উদ্দেশ্যে।
ডলফিন মোড় অতিক্রম করে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডে প্রবেশ করলাম। সৈকতঘেঁষা মেরিন ড্রাইভে শোনা যায় সমুদ্রের গর্জন, একই সঙ্গে নীল ঢেউয়ের হাতছানি। অন্যদিকে সৈকতের বিপরীতে অরণ্যঘেরা পাহাড়। একপাশে সবুজ পাহাড়, অন্যপাশে নীল সমুদ্র, মাঝে এঁকে-বেঁকে বয়ে গেছে দীর্ঘ পিচঢালা মসৃণ পথ। সব মিলিয়ে প্রকৃতির দারুণ মেলবন্ধন।
কলাতলীর ডলফিন মোড় পার হয়ে একটু এগোলেই মেরিন ড্রাইভের শুরু। এ ড্রাইভের শুরুর দিকে হ্যাচারি জোন। এরপর দরিয়ানগর থেকে শুরু রামু উপজেলা। আর এখান থেকেই মেরিন ড্রাইভের আসল সৌন্দর্য শুরু। কারণ এখান থেকে ড্রাইভের পূর্ব পাশে অরণ্যঘেরা পাহাড় ও পশ্চিমে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত।
এ দুইয়ের মাঝেই পিচঢালা মসৃণ পথ। যে পথ দিয়ে চলায় সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনের হুঙ্কার, মনে অদ্ভুত অনাবিল আনন্দের শিহরণ জাগে। কলাতলী থেকে বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের দৈর্ঘ্য ৮০ কিলোমিটার।
আমরা ইনানী বীচের পর বিরতি নিলাম যেহেতু কক্সবাজারের লাবনী, সুগন্ধা বীচে লোকে লোকারন্য তাই একটুখানি নিরিবিলি যেখানে কেউ নেই সেখানে বসে নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছি। আমরা চারজনেই গল্পে মেতেছি।
তারপর আবারো প্যাডেলিং শুরু শাপলাপুর এখন আমরা, কিছুদূর পরপর জেলেদের নৌকাগুলো দেখে বেশ ভালো লাগে। একটি ভাসমান দোকানে দেখতে পেলাম একদম ফকফকা হলুদ কলা, দেখেই লোভ লাগলো এক ডজন নিয়ে আমরা খেয়ে ফেললাম।
যতোই যাচ্ছি ততই ভালোলাগা কাজ করছে নিজ হাতে নিজ স্বপ্ন কে ছুঁয়ে ফেলবো কিছুক্ষণ পর। এই মুহুর্তে আমরা টেকনাফ বিচ পয়েন্টে, এই পয়েন্ট থেকে আমাদের যেতে হবে শাপলা চত্ত্বরে ওইটাই টেকনাফ জিরো পয়েন্ট।
আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে আমরা টেকনাফ জিরো পয়েন্টে। আমরা স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলেছি। এই মুহুর্তের অনুভূতি লিখে প্রকাশ করার মতো না, আমরা একসাথে উদযাপন করছি আমাদের এই বিজয়। এই যাত্রায় আমরা সবমিলিয়ে ১০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়েছি। এবার বাড়ি ফেরার পালা।
জেএমএস/জিকেএস