মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
Advertisement
অফিস থেকে এসেই বারান্দায় গাছের কাছে ছুটে যান রফিক আহমেদ। বারান্দায় তিনি কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রেখেছেন। জায়গা অল্প, তবে সাজানো-গোছানো তার বাগান। টবে, র্যাকের ওপর, গ্রিলে ঝুলিয়ে গাছ রেখেছেন। লতা জাতীয় গাছে গ্রিল সেজেছে দারুণ রূপে। চোখ ফেরানো মুশকিল। সারাদিনের খাটাখাটুনি, মানসিক চাপ—সবকিছুই একটুখানি সবুজের ছোঁয়ায় পালিয়ে যায়। সতেজ হয়ে ওঠে মন-প্রাণ।
যান্ত্রিক এ নগরীতে রফিকের মতো অনেকেই সবুজে সুখ খুঁজে পান। আহামরি টাকা-পয়সা খরচ হয়, তাও না। সৌখিন কাজে ইচ্ছেটাই আসল। পরিত্যক্ত জিনিসে বারান্দা ভরে রেখে কী লাভ? একটুখানি সবুজের উপস্থিতি পাল্টে দিতে পারে বহুদিনের ধুলো জমা বারান্দার চিত্র। সেটাই বলছিলেন ইভা রহমান। তিনিও বারান্দায় ইনডোর প্ল্যান্ট রেখেছেন। সাথে আছে বসার জায়গাও। স্বামী-স্ত্রী সেখানে বসে চা-নাস্তা খান। বুদ্ধি করে তিনি খাঁচায় এক জোড়া পোষাপাখিও রেখেছেন। প্রাকৃতিক একটা আবহ এখন তার বারান্দাজুড়ে। মেহমান এলে ঘরে বসার চেয়ে এখানে বসতে পছন্দ করেন।
অথচ কিছুদিন আগেও এই বারান্দায় বসার উপায়ই ছিল না। বারান্দা, বসার ঘর, সিঁড়ি, রান্নাঘর, পড়ার টেবিল, ছাদে গাছ রাখছেন অনেকেই। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বয়স্ক, প্রবীণ যারা—সবাই একটুখানি সবুজের প্রতি ঝুঁকছেন। মানসিক প্রশান্তি মিলছে গাছের ছোঁয়ায়। গাছ ঘরের তাপমাত্রা যেমন কমিয়ে রাখে; তেমনি সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। অবসরটা হয়ে ওঠে রঙিন। ইনডোর প্ল্যান্টের আহামরি যত্ন লাগে না। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হয়। মিডিয়া (মাটির মিশ্রণ) যেন ভালো হয়। গাছের পাতায় ধুলো জমলে পরিষ্কার করা দরকার। পানি স্প্রে করলেই হয়। একটুখানি ইউরিয়া সার পানিতে গুলে স্প্রে করলে গাছ বেড়ে ওঠে। দুই মাস পর পর করতে হয়। মোটাদাগে এগুলোই ইনডোর প্ল্যান্টের যত্ন—বলেন এক্সপার্ট বাগানি জাকিয়া সুলতানা।
Advertisement
আসলে শখের বাগানিরা সমস্যায় পড়েন অন্য জায়গায়। ভালো গাছ খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। অনলাইনে অনেকেরই ভরসা হয় না। দেখায় এক জিনিস, দেয় অন্য জিনিস। অমিলটা আকাশ-পাতাল। আবার নার্সারি, ফুটপাতের গাছের ব্যবসায়ীরা যেন-তেন গাছ ধরিয়ে দিতে বেশ পটু। এই যখন অবস্থা; তখন উপায়টা কী? নতুন বাগানীরা কী করবেন? তারা তো আর সেভাবে গাছ চেনেন না। তবে অনলাইনে কিছু বিশ্বস্ত সেলার আছে। যারা কথা ও কাজে মিল রাখেন। এমনকি কুরিয়ারে পাঠানো গাছ নষ্ট হলে তা পাল্টেও দেন। বিক্রির পরে খোঁজখবর রাখেন। বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পিছু হটেন না। ব্যবসাটাই তাদের কাছে সব না। ক্রেতা সন্তুষ্টি, সবুজের প্রসার হোক—এমনটাই চান তারা। শুধু রিভিউ নয়। তারা গাছের নানা গ্রুপ দ্বারা বিশ্বস্ত বিক্রেতার পরিচিতি পেয়েছেন। গাছের গ্রুপগুলোই এদের বিশ্বস্ত হিসেবে সেলার কোড দিয়েছে।
এবার জেনে নিন এমন কিছু পেজের খবর। ‘অরণীর’ পেজের প্রায় বারো হাজার ফলোয়ার্স। পছন্দের সব প্ল্যান্ট এখানে খুঁজে পাবেন। ‘গ্রিনডেকোর’ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বুশরা ইসলাম নামে এক তরুণীর গাছের সম্ভার। অন্য গাছের পাশাপাশি এখানে প্রায় সব প্রজাতির পাথোস পাওয়া যাবে। ‘বিউটি গ্রিন বিডি’র ফলোয়ার্স প্রায় চল্লিশ হাজার। শুধু গাছ নয়। গাছের সঙ্গে আনুষঙ্গিক সবকিছু তারা বিক্রি করেন। এ ছাড়া আছে ‘জঙ্গল বাড়ি’, ‘চক্কর’, ‘গ্রিন-ই বিডি’, ‘আসিফ দ্য ক্যাকটো বয়’, ‘অ্যালকোভ’ ইত্যাদি। কাঁটামুকুট, বাগানবিলাসে যাদের একটু আগ্রহ বেশি। তারা গ্রিন-ই বিডি পেজে যোগাযোগ করতে পারেন।
ঢাকার মধ্যে হলে বেশিরভাগ বিক্রেতা ক্যাশ অন ডেলিভারি করেন। অর্ডার দেওয়ার এক কিংবা দুদিনের মধ্যে গাছ পৌঁছে যায় বাসায়। ঢাকার বাইরে তারা কুরিয়ারে গাছ পাঠান। সে ক্ষেত্রে অগ্রিম পেমেন্ট করতে হয়। বিশ্বস্ত বিক্রেতার প্রায় সবাই কুরিয়ারে গাছ নষ্ট হলে পরে টাকা ফেরত দেন। অথবা পুনরায় গাছ পাঠিয়ে দেন।
পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত গাছের দাম আছে। চারা কিনলে কম দাম। পরিণত, বয়স্ক, ঝোপালো গাছের দাম খানিকটা বেশি। গাছের বয়স, প্রজাতি, সাইজ, মান ইত্যাদি ভেদে দাম ওঠানামা করে।
Advertisement
ইনডোর অথবা আউটডোর—যেটাই হোক না কেন। গাছ কিনেই যেমন লাগানো যাবে না; তেমনি অন্য গাছের সঙ্গে মেশানো যাবে না। কমপক্ষে সাত দিন এক জায়গায় রেখে দিতে হবে। সম্ভব হলে ছত্রাকনাশক অথবা পানিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পানিতে গুলে স্প্রে করা যেতে পারে।
লেখক: ইনডোর প্ল্যান্টকারী এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশন্স, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।
এসইউ/জিকেএস