রাজধানীর শাহজাহানপুরে পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের জারি করা রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।তবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ উল্লেখ করেননি আদালত। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে ক্ষতির পরিমাণ এবং সরকারি কোন সংস্থা কত দেবে তা নির্ধারণ করে বলে দেয়া হবে।রুলের শুনানিতে রিটকারী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম নিজে শুনানি করেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিমের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জারি করা রুলের উপর শুনানি শেষে আদালত এই সংক্ষিপ্ত রায় দিল। রায়ে একইসঙ্গে অরক্ষিত ও উন্মুক্ত পাইপ, কূপ, টিউবওয়েল, স্যুয়ারেজ পাইপ, গর্ত এবং পানির ট্যাঙ্কের তালিকা রায় প্রকাশের পর সংশ্লিস্ট সংস্থাকে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অবহেলাজনীয় মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী থাকবে এবং ক্ষতিপূরণ কারা দেবে সে বিষয়েও একটি গাইডলাইন দেবেন হাইকোর্ট। রায়ের পর রিট আবদেনকারীপক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, জিহাদের মৃত্যুর জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষই দায়ী। সাংবিধানিক আইনে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।১৯৮৩ সাল থেকে ভারতে মৌলিক অধিকার লংঘিত হওয়ার ঘটনায় ওই দেশের আদালত এ জাতীয় রায় দিত উল্লেখ করে তিনি বলের, বাংলাদেশে এই প্রথম এ জাতীয় রায় পেলাম। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় রেলওয়ে মাঠের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জিহাদের মরদেহ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে। পরে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বেলা তিনটার দিকে জিহাদের মরদেহ উদ্ধার করে।এ ঘটনায় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে জিহাদকে উদ্ধারে সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার চিত্র উঠে। পাশাপাশি জিহাদের পিতাকে পুলিশ কর্তৃক আটকের ঘটনাও প্রকাশ পায়। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট আবেদন করা হয়। এর মধ্যে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের করা রিট আবেদনে আদেশ দিলেন আদালত।এছাড়া সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি হওয়ায় শিশুটির মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে এবং সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। রুলে সারাদেশে অরক্ষিত ও উন্মুক্ত পাইপ, কূপ, টিউবওয়েল, স্যুয়ারেজ পাইপ, গর্ত এবং পানির ট্যাঙ্কের তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, আদালত তাও জানতে চেয়েছেন।রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র ও রেলওয়ে সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, রেলওয়ের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স), ওয়াসা চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার ও শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।এফএইচ/আরএস/এবিএস
Advertisement