‘রাষ্ট্র হিসেবেও আমাদের দেশ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়াতে খুব একটা উদ্যোগ নেয়নি। এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও সহিত্য নিয়ে বাংলা একাডেমির যে কাজ করার দরকার ছিল, তারাও এ বিষয়ে কাজ করছে না। ফলে নানা ভাবেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বায়নের পথে এগোতে পারেনি। অথচ এ বিষয়ে রাষ্ট্রেরই উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ছিল।’ বাংলায়ন সভার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এ কথা বলেন।
Advertisement
৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশ্বায়নে অন্তরায় এবং উত্তরণের পথ’ শিরোনামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘মানবতাবাদী মনীষীদের বিশ্বভাতৃত্বের মহাবয়ান আর বিশ্বায়নের ধারণা এক নয়। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বরাবরই চায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যেন বিকশিত না হয়। এ জন্য তারা নানাভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাখে। এমনকি বাংলাদেশও নানা দিক থেকে বিশ্বায়নের চাপে আছে। ফলে আমাদের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতিও বিশ্বায়নের চাপে আছে। সে কারণে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বময় খুব বেশি ছড়াতে পারেনি।’
অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয় অনুষ্ঠান। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্রচিন্তক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হাকিম আরিফ।
Advertisement
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হলে প্রতিটি দেশে বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বময় ছড়াতে হলে বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন।’
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হাকিম আরিফ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু এখনো আমাদের শিক্ষানীতিতে বাংলা ভাষার বিষয়টি অনুপস্থিত। তাই আমাদের নিজেদের যেমন বদলাতে হবে, তেমনই রাষ্ট্রকেও ভাষার প্রচার-প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০০ বছরে বিশ্বের যত ইনোভেটিভ ঘটনা ঘটেছে, তার অধিকাংশই হয়েছে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে। সে তুলনায় বাংলা ভাষার অনুবাদ একেবারেই কম। ফলে বিশ্বের মানুষ জানতেও পারছে না আমাদের সাহিত্যে কী ঘটছে। সে জন্য এখন দরকার বাংলা সাহিত্য বেশি বেশি ইংরেজিতে অনুবাদ করা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এসব উদ্যোগ রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’
আলোচনা শেষে ‘বাংলায়ন বার্ষিকী’ প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক ২৫টি প্রবন্ধ-নিবন্ধ স্থান পেয়েছে।
Advertisement
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলায়ন সভার সম্পাদক ফারুক সুমন, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক গাজী মুনছুর আজিজ ও লেখক সুরজিৎ রায় মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বাংলায়ন সভার মুখপাত্র শামস সাইদ।
দ্বিতীয় পর্বে কবিতা পাঠ করেন আদিত্য নজরুল, শাকিরা পারভিন, স্নিগ্ধা বাউল, আজিম হিয়া, শান্তা মারিয়া, বিধান সাহা, আশরাফ জুয়েল, সেঁজুতি বড়ুয়া এবং মামুন অপু।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি সৌম্য সালেক এবং চামেলী বসু। অনুষ্ঠানে রাত ৮টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন কবি-সাহিত্যিকসহ শতাধিক দর্শক-শ্রোতা।
এসইউ/জেআইএম