গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার ম্যাট্রিক্স সোয়েটার কারখানায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক, উলের সুতাসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগুনে অত্যাধুনিক ওই কারখানার অষ্টম তলা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের গাজীপুর, শ্রীপুর, টঙ্গী, কালীগঞ্জ, কালিয়াকৈর, সাভার ইপিজেড ও ঢাকা সদর দপ্তরসহ ২৪টি ইউনিট পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুর ১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গত পাঁচ দিনে ওই কারখানায় দুবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। আগুন লাগার পর আশপাশের এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দেড় শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।আমাদের রফতানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। মূলত বিদেশিরাই তৈরি পোশাকের ক্রেতা। তাদের পক্ষ থেকে পোশাক কারখানার নিরাপত্তাসহ সার্বিক কর্মপরিবেশ সুন্দর, সুষ্ঠু রাখার তাগিদ আছে। এর মধ্যেই মাঝেমধ্যে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। কোনো দুর্ঘটনার ওপর কারো হাত থাকে না। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা কতোটা দুর্ঘটনা আর কতোটা অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীনতাজনিত সেটি নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি। ম্যাট্রিক্স সোয়েটার কারখানায় দাহ্য পদার্থ ছিল। ফলে আগুনের ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক সরঞ্জাম থাকলেও ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যায়নি। তাহলে এসব সরঞ্জাম থাকার মানে কি? পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড তো নতুন কোনো ঘটনা নয়। তাজরীন ফ্যানশসের অগ্রিকাণ্ডে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির দুঃসহ স্মৃতি এখনো আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়।যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেতে বাংলাদেশের পোশাক-কারখানাগুলোকে নানা শর্ত দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ঘটলো ম্যাট্রিক্স সোয়েটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা যে বায়ারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সময় কোনো শ্রমিক সেখানে ছিল না। এ কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এটা স্বস্তির বিষয়। আমরা আশা করবো দ্রুত কারখানাটি খুলে দেয়া হবে। এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় সে ব্যাপারে আরো সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি তদন্ত করে দেখতে হবে কোথায় কি ত্রুটি ছিল। এইচআর/পিআর
Advertisement