পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মামলা নিষ্পত্তির লক্ষে গঠিত বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা সঙ্কটে ভুগছে; যদিও এ সংক্রান্ত শত শত মামলা জমে জট তৈরি হয়ে আছে নিম্ন আদালতে। মূলত প্রসিকিউশনের দুর্বলতা, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে উদ্যোগের অভাব, নিম্ন আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তর না হওয়া এবং সরাসরি ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সুযোগ না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন ঝিমিয়ে চলছে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গঠিত এই ট্রাইব্যুনাল। ১৭টি মামলা নিয়ে বিএসইসি ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু ২০১৫ সালের ২১ জুন। এরপর গত বছর জুলাইয়ে চারটি ও পরবর্তীতে আরও দুটি মামলা নিম্ন আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে আসে। সব মিলিয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। এরপর পাঁচটি মামলার রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। তবে আসামিদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাকি মামলাগুলোর মধ্যে ১৫টির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত। দুটি মামলা ফেরত পাঠানো হয় ট্রাইব্যুনালের বিচারের এখতিয়ার বহির্ভূত কারণ দেখিয়ে। যাত্রা শুরুর ছয় মাস পেরিয়ে ট্রাইব্যুনালে এখন চলমান মামলার সংখ্যা একটিই। ১৯৯৬ সালের প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও এর পরিচালকদের ডিভিপি সংক্রান্ত মামলা সেটি। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর এই মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। আলোচিত এ মামলার আসামিরা হলেন- কোম্পানির চেয়ারম্যান ও র্যাঙ্কস গ্রুপের কর্ণধার এম এ রউফ চৌধুরী, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, পরিচালক ও এইচআরসি গ্রুপের কর্ণধার সায়ীদ হোসেন চৌধুরী ও অনু জায়গীদার।মামলা সংকট সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের মুখপাত্র সাইফুর রহমানের বক্তব্য, ট্রাইব্যুনালের ১৫টি মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। ফলে ট্রাইব্যুনালে মামলার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের আইন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব স্থগিতাদেশ নিয়ে কাজ করছেন।নিম্ন আদালতে বেশ কিছু মামলা পড়ে আছে অথচ ট্রাইব্যুনালে মামলা নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুর রহমান বলেন, আসলে ক্রিমিনাল মামলাগুলোই স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে নিস্পত্তি হবে। সিভিল মামলাগুলো এ ট্রাইব্যুনালে আসবে না।এদিকে পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি মামলার একজন সাক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে যেসব আইনজীবী বিএসইসি নিয়োগ করেছে তাদের আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তারা ’৯৬ কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে তেমন ভালো জানেন না। এ কারণে সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার কলা-কৌশল ও বিভিন্ন তথ্য স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন না। অর্থাৎ সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন তা প্রসিকিউশনের দুর্বলতার কারণে নেওয়া যাচ্ছে না। ওই সাক্ষী আরো বলেন, বিএসইসি যদি শেয়ার বাজারের ভালো চায় তাহলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন স্বক্ষমতা আরও বাড়ানো উচিৎ। সেক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো বোঝেন- এমন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তা নাহলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত রাঘব-বোয়ালরা পার পেয়ে যাবেন। প্রসিকিউশনের দু্র্বলতার বিষয়টি নিয়ে কার্যক্রম চলার সময় ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবির কয়েকবার তাগাদা দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিয়োগও দেয় বিএসইসি। কিন্তু দেখা যায়, তিনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত থেকেছেন। প্রসিকিউশনের দুর্বলতার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, এটি ঠিক নয়, আমরা ভালো, বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছি। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম সংক্রান্ত ৫৩৫টি মামলা দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।এসআই/ এনএফ/পিআর
Advertisement