রুবেল মিয়া নাহিদ
Advertisement
শ্রাবণের আকাশজুড়ে ঘুরে বেড়ায় মেঘের দল। আপন খেয়ালে তারা ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে। সে বৃষ্টি কখনো ক্ষণিকের তরে, কখনো হয় মুষলধারে। এরপর রং বদলায় আকাশ। বাদলের ঝাপটা শেষে উঁকি দেয় রোদ্দুর। তার মধ্যেই বাসে দু’জন রওনা হলাম।
সকাল ৮টার দিকে আমরা বাগেরহাট স্টেশনে এসে নামলাম। সঙ্গে এক ছোট ভাইয়ের যুক্ত হওয়ার কথা। তার আসতে দেরি হওয়ায় আশপাশের এলাকা একটু ঘুরে দেখার সুযোগ পেলাম।
যাই হোক নাস্তা শেষ করে দ্রুত রওনা হলাম। গন্তব্য খান জাহান আলীর ষাট গম্বুজ মসজিদ। রাফি আমাদের গাইড। আমরা ষাট গম্বুজ মসজিদ এর পাশের বড় রাস্তায় নেমে তো আবাক! সত্যিই তাহলে ষাট গম্বুজ মসজিদ এর দেখা পেলাম!
Advertisement
টিকিট কেটে মসজিদ প্রাঙ্গনে ঢুকতেই চোখ পড়লো দুটো রাস্তা। বাম দিকে বিশাল মসজিদ আর ডানদিকে জাদুঘর। ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাটে অবস্থিত। ১৫ শতকের দিকে খান জাহান আলী নামের প্রখ্যাত সুফি দরবেশ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
প্রত্নস্থলটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। মসজিদটিতে ৮১টি গম্বুজ আছে। তাহলে এটি কেন ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত? এর নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায় না। এ মসজিদটি ছাড়াও এর আশপাশে আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে।
মসজিদের ঠিক পশ্চিমে সুবিশাল দিঘি ও পীর খান জাহান আলীর সমাধি উল্লেখযোগ্য। দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ খুব প্রসিদ্ধ। সারাবছরই সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।
প্রাচীন ইমারতের চোখধাঁধানো নির্মাণশৈলী আমাদের যারপরনাই বিস্মিত করে তোলে। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা। পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া।
Advertisement
জনশ্রুতি আছে, হজরত খানজাহান আলী (রা:) ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য সমুদয় পাথর সুদূর চট্টগ্রাম, মতান্তরে ভারতের ওডিশার রাজমহল থেকে তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতটির গঠনবৈচিত্র্যে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
এ বিশাল মসজিদের চারদিকের প্রাচীর ৮ ফুট চওড়া, এর চারকোণে ৪টি মিনার আছে। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির। এ মিনারে ওপরে ওঠার সিঁড়ি আছে। মসজিদটি ছোট ছোট ইট দিয়ে তৈরি। মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট ও উচ্চতা ২২ ফুট। মসজিদের সামনের দিকের মাঝখানে একটি বড় খিলান ও এর দু’পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ ২৬টি দরজা আছে।
মসজিদ দর্শনীয় স্থানে রূপান্তরিত হওয়ায় সামনের আঙিনাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি ফুল গাছের সমারোহে। এসব গাছের নানা রকম ফুলও দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মনে দোলা দিতে থাকে।ষা ট গম্বুজের পশ্চিম দিকে বিরাট একটি দিঘিও আছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ঘুরে আমরা অটো-রিকশা ভাড়া করে খান জাহান আলীর মাজার শরীফ দেখতে গেলাম। এই স্থানে মানুষের ভীড় একটু বেশিই থাকে সব সময়। দালানগুলোর যত্নআত্তিও বেশি। অনেক ফকির-সন্ন্যাসীর দেখা মেলে সেখানে গেলে। খাবারের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপহার সামগ্রীর দোকান পাবেন সেখানে।
মাজারের ঠিক সামনেই বিশাল আরেকটা দীঘি উৎসুক লোকজন দীঘির পাড়ে ভিড় করছে। আমরাও বিষয়টি দেখতে গেলাম। জানতে পারলাম কুমির পাড়ে উঠেছে। দীঘিতে কুমির আছে তাহলে।
কুমির দেখা শেষে আমরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারলাম চিংড়ি মাছ দিয়ে। তারপর বাগেরহাট থেকে মোংলায় গিয়ে সেখান থেকে মোটরচালিত নৌকায় চড়ে সুন্দরবনে ঘুরে দেখার পথে।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাস আছে বাগেরহাটে যাওয়ার।
গাবতলী থেকেও বাগেরহাটে যাওয়ার বাস ছাড়ে। যারা সময় নিয়ে যাবেন, তারা বাগেরহাট থেকে মোংলায় গিয়ে সেখান থেকে মোটরচালিত নৌকায় চড়ে সুন্দরবনে ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
বাগেরহাট শহরে এসি ও নন এসি বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। সরকারি গেস্ট হাউস আছে সেখানে। হাইওয়েতেও বেশ কিছু হোটেল আছে। বাগেরহাট শহর থেকে খুলনা মাত্র এক ঘণ্টার পথ। চাইলে খুলনা গিয়েও থাকতে পারেন।
জেএমএস/এমএস