সাহিত্য

মধু মন্ডলের বইপোকার ১৩ বছর

মোহাম্মদ রায়হান

Advertisement

কখনো রাস্তার পাশে, কখনো ক্যাম্পাসে, কখনো চারুকলা, কখনো লাইব্রেরির পথে বই ফেরি করেই কাটে ‘বইপোকা’র দিন। দিনের আলোয় চারুকলার রাস্তা, দিন পেরোলেই ক্যাম্পাসের আঙিনা, কখনো ডাকসু—এভাবেই চলছে মধু মন্ডলের বইয়ের ভ্যান ‘বইপোকা: মঙ্গল আলোকের ধারক ও বাহক’।

দিনের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তার পাশে এক গাদা বই সাজিয়ে ভ্যান নিয়ে বসেন মধু মন্ডল। পড়াশোনার গণ্ডি পেরোতে না পারলেও বইকে করে নিয়েছেন জীবিকা এবং আত্মার খোরাক। শাহবাগ চত্বর থেকে টিএসসি অভিমুখে জাদুঘর, সেন্ট্রাল পাবলিক লাইব্রেরি পার হয়ে হেঁটে আসতেই চোখে পড়বে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ বইয়ের দোকান। যার মাঝে নজর কাড়ে মধু মন্ডলের ‘বইপোকা’ও।

বইপোকা আপনার চোখে ভাসিয়ে তুলবে এক যুবকের বই নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা। বইয়ের দিকে নিষ্পলক তাকানো আর তিন চাকার ভ্যানে থরেথরে সাজানো বইয়ের দৃশ্য। মধু মন্ডলের ভ্যানে চারশ বই আছে। নিজে বিজ্ঞানের ছাত্র না হয়েও বিজ্ঞান বিষয়ে সৃষ্টি হয়েছে তার প্রবল আগ্রহ।

Advertisement

ধানমন্ডি ল’ কলেজে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারেননি পড়াশোনার গণ্ডি। মানবিক শাখার শিক্ষার্থী হয়েও শেষে ভ্যানে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা রকম বই সাজাতে সাজাতেই বিজ্ঞানে ঝোঁক। তাই বিজ্ঞান বিষয়ক নানা বই ঠাঁই পাচ্ছে মধু মন্ডলের ভ্যানে। শুধু তা-ই নয়, ভ্যানে মায়া ছড়াচ্ছে সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস, অনুবাদগ্রন্থসহ নানা রকম বই। প্রায় ১৩ বছর ধরে মধু মন্ডল ভ্রাম্যমাণ বই বিক্রির সাথে জড়িত। শুরুর দিকে মাটিতে মাদুর পেতে বই বিক্রি করতেন নজরুল সমাধির সামনে। পরে ভ্যানে বই বিক্রি শুরু করেন। ২০১৩ সালে মধু মন্ডলের বইয়ের দোকান ‘বইপোকা’ নামে যাত্রা শুরু করে।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধু মন্ডলের কাছের এক ভাই, যাকে মধু রিপন ভাই বলে ডাকেন। দু’জন মিলে এই বইপোকা নামটি ঠিক করেন। বইয়ের প্রতি টান, আকর্ষণ থেকেই তারা নামটি ঠিক করেন। মধু মন্ডলের দাবি, বইয়ের প্রতি আকর্ষণ থেকেই তাদের দু’জনেরই প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

আইন বিষয়ে পড়তে এসে বই বিক্রির সাথে জড়িত হলেন কেন—এমনটি জানতে চাইলে মধু মন্ডল বলেন, ‘ল’ পড়তে আসি, এসেই যুক্ত হয়ে গেলাম বইয়ের সাথে। তারপর পড়ার সুযোগ। পড়ে দেখলাম, নিজের যে অজ্ঞতা ছিল; সেগুলো দূর হলো। আমি যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছি বা হচ্ছি, সেখান থেকে প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করতে এ কাজে আসি। বই আসক্তি থেকেও এখানে আসি। আমি ভেবেছি, আইন বিষয়ে পড়ে ন্যায় বিচারে কাজ করবো। এখানে দেখলাম, জ্ঞান বা বই পড়ার মাধ্যমে মানুষকে সমৃদ্ধ করা যায়। আইন পড়ে ক’জনকেই বা সাহায্য করা যায়। কিন্তু বইয়ের মাধ্যমে জাতিকে সমৃদ্ধ করতে পারছি। বইপড়ার মাধ্যমেই অন্যায়ের মূলোৎপাটন করা যায়। সে জায়গা থেকেই আমি বই বিক্রি করছি।’

প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি বই বিক্রি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়। বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন মধু। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এ দিয়েই সংসার চালাচ্ছি। হয়তো পড়াশোনা করা আমার বন্ধু-বান্ধবের মতো চলতে পারছি না। মানুষের মস্তিষ্ককে বিকশিত করাই মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। আমি এখানে থেকে সেদিক দিয়ে বাকিদের চেয়ে আগানো।’

Advertisement

এসইউ/এএসএম