পোশাক শিল্পের রফতানিকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার জন্য কল-কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ নিয়মিত সরবরাহ করা হলেই সম্ভব বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনরা। শনিবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে বিজিএমই ও ডেইলি স্টারের যৌথ উদ্যেগে আয়োজিত তৈরি পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় অর্জনে বা টার্গেট পূরণে কি কি দরকার এ সংক্রান্ত এক গোল টেবিল বৈঠকে তারা এ মতামত দেন। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদোনসহ দেশি-বিদেশি আলোচকরা।বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় অর্জন করতে হলে আগামী পাঁচ বছরে তৈরি পোশাকের বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার ৫ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। সে জন্য সরকারকে কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, ভৌত অবকাঠামো, প্রতিযোগিতামূলক সুদ হারে ঋণ প্রদান করতে হবে। গ্যাস সংকট নিরসন ও সরবরাহের জন্য শিল্পেদ্যাক্তাদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার।ইএবির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, দাম বৃদ্ধির পরও পাওয়া যাচ্ছে না গ্যাস। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে কমেনি। এছাড়া ক্রেতারা দিচ্ছে পণ্যের ন্যায্যমূল্য। তবে এসব নিশ্চিত হলে লক্ষমাত্রা অর্জন সম্ভব।সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কারখানা স্থানান্তরে কি পরিমাণ জমি, কোন স্তরে কত সংখ্যক দক্ষ জনবল দরকার তা বিজিএমইএ নির্ধারণ করবে। তাতে সরকারের পলিসি গ্রহণে সুবিধা হবে। তবে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের শর্তানুযায়ী কারখানায় যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে; সে পরিমাণ লাভ হবে কি-না তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন ছোট উদ্যোক্তারা। এদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে হবে। একই সাথে কর্মপরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারেও অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সকে ভূমিকা নিতে হবে। পলিসি রিসার্চ ইন্সিটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মুনসুর বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো যায় কি-না সে বিষয়ে বিজিএমইএর চিন্তা করা দরকার। শ্রমিক নেত্রী নাজমা বেগম বলেন, লক্ষমাত্রা অর্জনে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এছাড়া ক্রেতাদের শর্তানুযায়ী ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পিয়ারে মায়াদন বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্ভব তবে এই জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আর্থিক সহায়তাদানকারী বিদেশি সংস্থাগুলোর তহবিলে থাকা প্রায় ২শ’ মিলিয়ন ডলারকে বিনিয়োগমুখী করতে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে। বাড়াতে হতে প্রযুক্তিনির্বর উৎপাদন। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের বন্ধুসুলভ সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরি। শ্রমসচিব মিকাইল শীপার বলেন, ক্রেতাদের শর্তানুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারা এখন অনেক নিরাপদ।আলোচকরা ভিশন-২০২১ অর্জনের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ক্ষেত্রে কারখানার স্থানান্তরের জমি, জ্বালানি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তাকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বলে জানান। বিজিএমএই নেতা, অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন সহযোগী, ক্রেতা প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী পাঁচ বছরের বিশাল আকারের এই রফতানি লক্ষ্য পূরণ অবশ্যই অর্জনযোগ্য। তবে এর জন্য প্রয়োজন, সরকারের নীতি সহায়তা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, কারখানা স্থানান্তরের জমি, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, শ্রমিক নিরাপত্তা, কারখানার পরিবেশ উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন নীতি, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ জ্বালানির নিশ্চয়তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা, ইউরোপ, আমেরিকার বাজারে ডিউটি ও কোটা মুক্ত সুবিধা, এবং সর্বোপরি গার্মেন্টস পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ। এতে মূল প্রধন্ধ উপস্থাপণ করেন অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বিজিএমএর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড. শরীফ এস সাবের। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন; এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, পিআরআইএর নির্বাহি পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন, আইএলও প্রতিনিধি শ্রীনাভাস রিদ্দি ও শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার। এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement