ভালোবাসা পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার মর্যাদা অনেক বেশি। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় অনেক উপদেশ দিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন চমৎকার ফজিলত। সেসব উপদেশ এবং ফজিলতগুলো কী?
Advertisement
মানুষকে পাস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্টকারীদের প্রতি অভিশম্পাত করেছেন। যারা সুসম্পর্ক নষ্ট করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে তাদের দোয়াও কবুল হয় না। মহান আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ক্ষমা করেন না। এ কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা বজায় রাখতে ঘোষণা করেছেন উপদেশ ও ফজিলত। তাহলো-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, যারা আমার মর্যাদার খাতিরে পরস্পর একে অপরের সঙ্গে ভালোবাসা স্থাপন করেছে, তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় স্থান দেব। আজ এমন দিন, আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম, মিশকাত)
২. হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেছেন- যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশে পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার উদ্দেশে দ্বীনি মজলিসে মিলিত হয়, আমার উদ্দেশে পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং আমার উদ্দেশ্যেই নিজেদের মাল-সম্পদ ব্যয় করে; তাদের জন্য আমার ভালোবাসা সুনিশ্চিত।’ (মুয়াত্তা মালেক, মিশকাত)
Advertisement
৩. হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ভাল এবং মন্দ লোকের সঙ্গে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে আতর বিক্রেতা ও কামারের হাঁপরে ফুঁক দানকারীর মতো। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু আতর দিতে পারে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু কিনে নিতে পার, অন্যথা তুমি তার (কাছে) সুঘ্রাণ পাবেই। আর কামারের হাঁপরের ফুলকি তোমার জামা-কাপড় জ্বালিয়ে দিতে পারে। এটা না হলেও তুমি তার ধোঁয়ার গন্ধ পাবেই।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত কাউকে ভালোবাসলে তা আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। আবার কাউকে ঘৃণা করলেও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা। মানুষ যখনই কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে, আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়।
মনে রাখা জরুরি
বন্ধুত্বের মর্যাদা ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপদেশ প্রদান করেছেন। আর তাহলো-
Advertisement
হজরত মিকদাদ ইবনে মাদিকারাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি অপর কোনো (মুসলমান) ভাইকে মহব্বত করে, তখন তাকে যেন জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে মহব্বত করে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মানুষের পাস্পরিক সুসম্পর্ক আরো বেশি মজবুত হয়। সৃষ্টি হয় ফেতনা-ফাসাদমুক্ত সমাজ। সুসম্পর্ক রক্ষায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসগুলোর স্মরণ ও আমল জরুরি। তাইতো নবিজী আরো ঘোষণা করেন-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘ঈমানদার ছাড়া কাউকেও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। আর পরহেযগার ছাড়া অন্য কেউ যেন তোমার খাদ্য না খায়।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে ভালোবাসা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত উপদেশ ও ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম