সাহিত্য

জয়নুল আবেদিনের ছবি: গণমানুষের মুক্তির আন্দোলন

জয়নুল আবেদিন (২৯ ডিসেম্বর ১৯১৪-২৮ মে ১৯৭৬) গণমানুষের চিত্রশিল্পী। তিনি শিল্পী ও সংগঠক হিসেবে সফল। বাংলাদেশ চিত্রকলাচর্চার অগ্রপথিক জয়নুল আবেদিন। তৎকালীন মুসলিম গ্রামবাংলার জনগোষ্ঠীর সমকালের চিন্তা-ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর চিত্রকর্মে। তাঁর চিত্রকর্মে মানবতা ফুটে উঠেছে; ফুটে উঠেছে বাঙালি জাতির জীবন-সংগ্রাম, সুখ-দুঃখ, বেদনা-বঞ্চনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাস এবং শিল্পী জয়নুল আবেদিন একসূত্রে গাঁথা। তাত্ত্বিক অর্থে জয়নুল নিজেই শিল্পী। একটি পশ্চাদপদ সমাজের শিল্পমানসকে জয়নুল টেনে বের করে এনেছেন সমাজপটে। ব্যবহারিক জ্ঞান-কাঠামোর কেন্দ্র হলো প্রতিষ্ঠান। প্রাতিষ্ঠানিক-শিল্প শিক্ষা আন্দোলনের নায়ক জয়নুলই। তিনি একাধারে শিল্পী ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিত্ব। উভয়ক্ষেত্রে তিনি সফল। লোকসাধারণে জয়নুল অপরিচিত নন—শিল্পী হিসেবে তিনি অবিসংবাদিত। তিনি স্থানীয় লোক সংস্কৃতিকে প্রকৃতিকে ধারণ করেছেন, জনপ্রিয়ও হয়েছেন। শিল্পীদের কোনো জাত থাকে না, ধর্ম থাকে না। শিল্পের ভাষা আন্তর্জাতিক, মানবিক, কিন্তু গোষ্ঠীবদ্ধ নয়। জয়নুল আবেদিনও তাই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, ধারণ করতেন।

Advertisement

হেনরি মুর ১৯৪১ সালে লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া মানুষের চিত্র আঁকেন। ১৯৩৭ সালের এপ্রিলে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের শুরুতে বোমা হামলার পরে তৈরি হওয়া অবর্ণনীয় দৃশ্যের প্রকাশ করেন পাবলো পিকাসো তাঁর ‘গের্ণিকা’ চিত্রকর্মের মাধ্যমে। পেইন্টিংটি বিকাশের সাথে সাথে, যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট দুর্দশার মধ্যে পিকাসো ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন। নারীদের যন্ত্রণা, আহত ঘোড়ার বেদনা বা মৃত যোদ্ধার করুণ অবশেষ, চূড়ান্ত বিজয়ের অপ্রতিরোধ্য আশা—এসব চিত্রের মাধ্যমে বিশ্বকে জানানো সম্ভব হয়েছিল। এসব পেইন্টিংয়ে আবেগ এবং ক্রোধ প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাগুলোর প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল তাদের কাজের চালিকাশক্তি। জয়নুল আবেদিনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দুর্ভিক্ষের চিত্রমালায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কলকাতার ফুটপাতের আবর্জনার স্তূপ থেকে খাবারের জন্য কুকুরের সাথে মানুষের টানাটানির দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। জয়নুল আবেদিন তখন কলকাতায় যান। দুর্ভিক্ষের প্রভাবে পথে পথে মানুষের ভোগান্তি দেখার জন্য। ভয়ংকর মানব শোষণ ও অবক্ষয়ের ঘটনা জয়নুলের চিত্রকর্মে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া তিনি ১৯৭০ সালে সিরিয়া এবং জর্ডানে ফিলিস্তিন শিবির পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশেলে এবং শরণার্থীদের নিয়ে ৬০-৭০টি চিত্রকর্ম তৈরি করেন জয়নুল।

আমরা জানি, জয়নুল আবেদিন বাংলার দুর্ভিক্ষের স্কেচের জন্য পরিচিত। তিনি আঁকেন মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের স্কেচের সিরিজ; যার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বাংলায় লক্ষাধিক মানুষ মরার খবর। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে জানা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বার্মাসহ বেশিরভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো দখল করেছিল; অনুমান করা হয়েছিল যে বাংলার পতন হবে। সম্ভাব্য শত্রুর দখলের প্রস্তুতির জন্য, সরকার বাঙালি ধানের মজুদ অপসারণ করে, দেশের নৌযান ধ্বংস করে, নদী-যোগাযোগকে অচল করে দেয়। এ সমস্ত পদক্ষেপগুলো খাদ্য সরবরাহকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিতে অনুঘটকের কাজ করে। আধুনিক শিল্পের প্রবর্তক জয়নুল আবেদিন তাঁর বাংলার ‘দুর্ভিক্ষের স্কেচ’র জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। কালি এবং প্রয়োজনে বুরুশ ব্যবহার করে তিনি স্কেচ তৈরি করেছিলেন; যা পরে মানুষের দুঃখ-কষ্টের আইকনিক চিত্র হয়ে ওঠে। কাগজ বা কার্ডবোর্ডে ব্রাশ দিয়ে, কালো কালি দিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রের বস্তুনিষ্ঠতা এবং একটি শৈল্পিক শক্তি রয়েছে; যেটিতে স্বতঃস্ফূর্ততা, আন্তরিকতা এবং বাস্তবতা রয়েছে। দীর্ঘকাল অতিবাহিত একটি অভিজ্ঞতার সচিত্র উপস্থাপনা জয়নুলের তুলিতে ধরা দিয়েছে। তাঁর চিত্রের মূলশক্তি বা চালিকাশক্তি হচ্ছে আবেগ; আবেগ ঢেলে দেওয়া। দুর্ভিক্ষের স্কেচগুলো ছিল নিষ্ঠুরতা এবং দুর্ভিক্ষের চিত্র মৃত্যুর বণিক এবং শিকারের সম্পূর্ণ অসহায়ত্ব ইত্যাদির চিত্র। দুর্ভিক্ষের অশুভ চেহারাও দেখিয়েছে; মানুষের কঙ্কালের পরিসংখ্যান মানবসৃষ্ট অনাহারে মারা যাওয়ার ভাগ্য, দুর্দশা ইত্যাদির মতো মর্মান্তিক ছবিগুলো মানব মমতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। স্কেচগুলো প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার দৈনিক ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায়। তার পরই জয়নুল আবেদিন সারা ভারতে পরিচিতি লাভ করেন। দুর্ভিক্ষের স্কেচ কঙ্কালের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে অশুভ মুখ দেখিয়ে মানবসৃষ্ট সমস্যাটির জন্য অনাহারে মারা যাওয়ার দৃশ্য তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৪৪ সালে এগুলো প্রদর্শিত হলে তিনি ভারতবর্ষ পেরিয়ে বিশ্বদরবারে অধিক প্রশংসিত হন। ক্ষোভ থেকেই দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো এঁকেছেন তিনি। তখনকার মনুষ্যসৃষ্টি সে সময়ের দুর্ভিক্ষের অবস্থার প্রতিবাদ হিসেবে তাঁর মতামত উঠে এসেছে বলে তিনি মনে করেন। মানুষের যন্ত্রণা, ক্ষুধার জ্বালার উপলব্ধি ইত্যাদি জয়নুলের হৃদয়কে স্পর্শ ও নাড়া দিয়েছিল। সে সময়ে কলকাতায় গিয়েছিলেন বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে। তিনি আরও দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। ফিলিস্তিন ও জর্ডানের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিজ চোখে দেখেছেন। পরবর্তী সময়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ উগড়ে দিয়েছেন তুলির মাধ্যমে।

জয়নুল আবেদিনকে বাংলাদেশের শিল্পকলার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জয়নুল যখন হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন তখনই ছবি আঁকা ও ছবি আঁকার দক্ষতা গড়ে ওঠে। তিনি অসামান্য প্রতিভার একজন শিল্পী ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর শৈল্পিক এবং দূরদর্শী গুণাবলীর জন্য তাকে বাংলাদেশে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি দেওয়া হয়। ব্রহ্মপুত্র নদী তার চিত্রকর্মে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং তাঁর কর্মজীবনে অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে। জয়নুল ১৯৩৮ সালে জলরঙের একটি সিরিজ করেছিলেন, যা একটি সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে গভর্নরের স্বর্ণপদক অর্জন করেছিল। আমরা জয়নুলের শিল্পকর্মের কারণে সেই সময়ের বিপর্যয় সম্পর্কে জানি। আগেই বলেছি, জয়নুল তখনকার (১৯৪৩) সামাজিক পরিস্থিতি নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছিলেন। প্রাকৃতিক এবং সামাজিক বিপদেও সহজ অথচ মহিমান্বিত প্রক্ষেপণের জন্য পরিচিত জয়নুল। জয়নুলের ‘মনপুরা’ ৩০ ফুট দীর্ঘ একটি স্ক্রোল পেইন্টিং। এটি ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে শত এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর স্মরণে করা হয়েছিল। তিনি ১৯৬৯ সালে নবান্ন (ফসল) প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। সেখানে প্রাচুর্য থেকে দারিদ্র্য পর্যন্ত গ্রামীণ পূর্ব পাকিস্তানের পর্যায়ক্রমে চিত্রিত একটি ৬৫ ফুট দীর্ঘ স্ক্রোল। এটি পাকিস্তান শাসনের বিরুদ্ধে তুমুল অসহযোগ আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে। প্রদর্শনীটি ছিল শিল্পীদের প্রতিবাদের প্রতীক। যা সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে একটি মাইলফলক বলে বিবেচিত হয়।

Advertisement

জয়নুল আবেদিন ১৯৩২ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। জয়নুল তখন ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পেছনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন এবং ১৯৪৯ সালে এর অধ্যক্ষ হন। ইনস্টিটিউটটি পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পরিণত হয়। ইনস্টিটিউটটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চারুকলা চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তিনি স্বেচ্ছায় ১৯৬৭ সালে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং ইনস্টিটিউট কর্তৃক শিল্পাচার্য সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত হন। জয়নুল লন্ডনের স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্ট থেকে দুই বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখানে থেকে রপ্ত করা আধা-বিমূর্ত উপস্থাপনা, জ্যামিতিক আকার এবং প্রাথমিক রঙের ব্যবহারসহ লোকশিল্পের ফর্মগুলোকে সমন্বিত করে ‘বাঙালি শৈলী’ নামে একটি নতুন শিল্পশৈলী শুরু করেন। তিনি লোকশিল্পের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করে দৃষ্টিভঙ্গির বোধের অভাব অনুভব করেছিলেন এবং প্রকৃতি, গ্রামীণ জীবন এবং মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। শিল্পকে বাস্তবসম্মত চেহারায় কিন্তু আধুনিক এবং শৈল্পিক-শৈলীর পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। লোকশিল্পের অনুরাগী হিসেবে জয়নুল চারু ও কারু শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন এবং তার জীবদ্দশায় বিপুল সংখ্যক ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প, সিরামিক কাজ, নকশি কাঁথা সংগ্রহ করেন; যা তিনি ১৯৭৫ সালে সোনারগাঁতে লোকশিল্প জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন। তিনি একই বছর ময়মনসিংহে ‘জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা’ প্রতিষ্ঠা করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন; বাঙালি পরিচয়কে শক্তিশালী করার জন্য একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর জয়নুল আবেদীন ছয়জন শিল্পীসহ বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম সচিত্র কপি ডিজাইন করার জন্য কাজ করেন।

১৯৩৮ সালে চিত্রপ্রদর্শনীতে ‘নিখিল ভারত’ স্বর্ণপদক পান। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে মর্যাদাকর খেতাব হেলাল-ই ইমতিয়াজ পান। ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা ১৯৬৮ সালে জয়নুল আবেদিনকে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি দেয়। ১৯৭৩ সালে জয়নুল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা দেয়। ১৯৭৫ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ‘আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন’ বুধ গ্রহের বিভিন্ন গহ্বরগুলোকে মানবতার অবদানের জন্য সম্মান জানাতে ইয়েটস, বাচ, বালজাক, বিথোভেন এবং পাবলো নেরুদা মহান ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সেরা শিল্পী জয়নুল আবেদিনের নামেও নামকরণ করা হয়েছে। ‘আবেদিন’ গহ্বরের জন্য বাঙালিও গর্বিত; বাঙালি এখন বুধ গ্রহেও। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা জয়নুল আবেদীন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মারা যান। শিল্পীর চিন্তার জগৎ বুঝতে তার শিল্পকর্ম আর যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণের বিকল্প নেই। আমেরিকায় গিয়ে পাশ্চাত্য শিল্প অন্বেষণ করার সুযোগ পান তিনি। গ্রাফিক্সে ক্ষুধার উপর একটি সিরিজ বলা যেতে পারে। আধুনিক শিল্পের মর্ম বুঝতে তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, চিন্তার গুণগত মান। গুণগত মান বলতে মানবকেন্দ্রিকতা। দ্বিতীয়ত শিল্পের প্রকাশভঙ্গি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন প্রকাশভঙ্গিকে লড়াই হিসেবে দেখেননি। দেখেছেন রাজনৈতিক সচেতনতার জায়গা থেকে। কেননা তাঁর অঙ্কিত ইমেজ অস্তিত্বের সংকটের সম্মুখীন বা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংস্কৃতিতে ব্যস্ত। আর তৃতীয়ত আঙ্গিকের কাঠামো। আঙ্গিকের ক্ষেত্রে জয়নুল আধুনিক। শিল্পাচার্য শুধু একজন স্বনামধন্য শিল্পী ছিলেন না। তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন শিল্পী-নেতা যিনি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার লোক। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের চিত্রশিল্পে একটি মজবুত প্লাটফর্ম গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। ব্রিটিশমুক্ত হওয়ার পর মুসলিম শাসনের প্রথম দিকেই চিত্রশিল্প নিয়ে আশা করা কঠিন ছিল। কিন্তু জয়নুল পেরেছিলেন। তাঁর এ সফল প্রচেষ্টা শিল্প, সংস্কৃতি ও বাংলা ঐতিহ্য লালন করে। বাস্তববাদের তার দেশীয় ব্র্যান্ড, তাঁর সামাজিক অনুসন্ধানের সাথে মিলিত এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন মুহূর্তে প্রতিবাদ অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চিত্রকর্মের মাধ্যমে উত্তরাধিকারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর চিত্রকর্মের এটাই বড় সফলতা।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক।

এসইউ/এমএস

Advertisement