হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের নাম ইসরাইল আলাইহিস সালাম। বনি ইসরাইলকে এ কথাই বলা হচ্ছে যে, তোমরা আমার সৎ ও অনুগত বান্দারই সন্তান। সুতরাং তোমাদের সম্মানিত পূর্বপুরুষদের মতো তোমাদেরও সত্যের অনুসরণ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা নিজেই বনি ইসরাইলকে তাদের ধর্ম গ্রন্থে শেষ নবি ও রাসুল আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন, যাতে তাঁর আগমনে ইসলামকে তাদের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণে করে। যা কুরআন কারিমের সুরা বাক্বারার ৪০ ও ৪১ আয়াতে উল্লেখ করার মাধ্যমে স্মরণ করে দিয়েছেন।ইসরাইল বংশের সত্যয়নরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের একটি দলকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের নাম যে ইসরাইল ছিল, তা কি তোমরা জান? তারা সবাই বলেছিল, ‘আল্লাহর শপথ! এটা সত্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।’বনি ইসরাইলদের প্রাপ্ত নিয়ামাতইসরাইল অর্থ হচ্ছে আল্লাহ বান্দা। তাই আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে অনেক বড় বড় ক্ষমতার নিদর্শনের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শুধুমাত্র তার সঙ্গে করা ওয়াদা তথা অঙ্গিকার পূরণের জন্য। বড় বড় অনুগ্রহের মধ্যে রয়েছে- পাথর হতে নদী প্রবাহিত করা, মান্না ও সালওয়া নামক আসমানী খাদ্য অবতরণ করা, ফিরাউনের দলবল থেকে তাদেরকে রক্ষা করা, তাদের মাঝে সর্বাধিক নবি ও রাসুল প্রেরণ করা এবং তাদেরকে সম্রাজ্য ও রাজত্ব দান করা। এ কথাগুলো উল্লেখপূর্বক তাদেরকে আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূরণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।ইসলাম দাওয়াতইসলামের দাওয়াত প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, আমার অঙ্গীকার পুরণ করো অর্থাৎ তোমাদের কাছে যে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করবেন এবং তাঁর উপর আমার কিতাব অবতীর্ণ হবে তখন তোমরা তাঁর উপর ও কুরআনের উপর ঈমান আনয়ন করবে।ইসলাম গ্রহণের উপকারিতাক. যখন তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তবেই তিনি তোমাদের বোঝা হালকা করবেন, তোমাদের শৃংখল ভেঙে দিবেন এবং তোমাদের গলাবন্ধ দূরে নিক্ষেপ করে দিবেন। আর আমারকৃত অঙ্গীকারও পূর্ণ হয়ে যাবে এভোবে যে, তোমাদের ধর্মে কঠিন বিষয়গুলো, যা তোমাদের উপর নির্ধারণ করা রয়েছে তা রহিত হয়ে যাবে এবং শেষ যুগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে তোমরা একটি সহজ ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা পেয়ে যাবে।খ. অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা যদি নামাজ প্রতিষ্ঠিত করো, জাকাত আদায় করো এবং আমাকে উত্তম ঋণ প্রদান করো, তবে আমি তোমাদের অমঙ্গল দূর করবো এব তোমাদের প্রবাহমান নদী বিশিষ্ট বেহেশতে প্রবেশ করাবো।গ. এ আহবানের ভাবার্থ হচ্ছে যে, তাওরাতে অঙ্গীকার করা হয়েছিল যে, হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের সন্তানদের মধ্যে এমন এক বড় মর্যাদাসম্পন্ন রাসুল সৃষ্টি করবো, যার অনুসরণ করা সমগ্র সৃষ্টি জীবের প্রতি ফরজ (আবশ্যকীয়) করে দেবো। এবং দ্বিগুণ প্রতিদান প্রদান করবো।পরিশেষে....বান্দা ও আল্লাহর অঙ্গীকারের মর্মার্থ ব্যাখ্যায় ইমাম রাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় তাফসিরে উল্লেখ করেন, বান্দার অঙ্গীকারের অর্থ হচ্ছে ইসলামকে (জীবন বিধান হিসেবে) মেনে নেয়া এবং তার উপর আমল করা। আর আল্লাহ তাআলার অঙ্গীকার পূর্ণ করার তাৎপর্য হচ্ছে- বান্দার কর্মে সন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে সফলতা দান তথা বেহেশত প্রদান করা।সুতরাং আল্লাহ বাণী ‘আমাকেই ভয় কর’ অর্থাৎ বান্দাগণের আল্লাহ তাআলাকেই ভয় করা উচিত। তাঁকে ভয় না করলে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মতো তাদের উপর এমন শাস্তি এসে পড়বে যে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা ইসলাম গ্রহণকারীদের নাজাত দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস
Advertisement