পুলিশের নির্যাতনের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বির দুই চোখে ঘুম নেই। ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রাব্বি কিছুতেই দু`চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। চিকিৎসকের পরামর্শে ঘুমের ওষুধ খাইয়েও ঘুম পাড়ানো যাচ্ছে না তাকে।হঠাৎ করে উচ্চরক্তচাপও বেড়ে গেছে। এলোপাতারি কিল, ঘুষিতে ঘাড়ে ও লোহার রডের আঘাতে পায়ের ব্যাথাতে বারবার কুঁকড়ে উঠছেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীরা সব সময় পাশে থেকে সান্ত্বনা দিলেও ভয়ঙ্কর সেই রাতের পুলিশের দানবরূপী আচরণ ও নির্যাতনের ঘটনা কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছে না রাব্বি।ঘটনার তিনদিন পরও ক্ষণেক্ষণে সে আতঁকে উঠছে। পরিচিত কেউ তার কাঁধে হাত রাখলেই দু`চোখ বেয়ে কান্না ঝরছে তার। দিন কয়েক আগেও সম্পূর্ণ সুস্থ হাসিখুশি মনের উচ্চশিক্ষিত ও ভদ্র একজন সরকারি কর্মকর্তার এহেন দশা দেখে সকলেই চিন্তিত।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মনোচিকিৎসক ডা. হেলালউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, তাদের ভাষায়, একিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (তীব্র মানসিক চাপ) জনিত সমস্যার কারণে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।তীব্র মানসিক চাপের কারণে এ ধরনের রোগীদের স্বাভাবিক ঘুম নষ্ট হয়। চোখের সামনে পুরোনো ঘটনা বার বার ভেসে ওঠে। মোবাইল বাজার শব্দে কেউ কেউ ভয় পেয়ে যায়। তিনি রাব্বিকে একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেন।রাব্বির বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের সহপাঠী রনি রাত সোয়া ১০টায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সুচিকিৎসার্থে রাব্বিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি বিভাগে ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।চিকিৎসকরা প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে ব্যথা হ্রাস ও ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন। তাদেরকে ডেকে বলেছেন, তার পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। রাতে তাকে ঘুমানোর ওষুধ খাইয়ে দেয়ার পরও সে ঘুমাতে চাইছে না।রনি বলেন, শুধু আজকেই নয়, ঘটনার রাতের পর সে ভালোভাবে এতটুকু ঘুমাতে পারেনি। একটু চোখ লাগতেই ভয়ে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ছে।তিনি জানান, ঘটনার পর থানা পুলিশে দৌড়ঝাপ ও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে টের না পেলেও আজ থেকে তার ঘাড়ে ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা টের পাচ্ছে। তাকে সেই রাতে মোহাম্মদপুর পুলিশের সাব ইন্সপেক্টও মাসুদসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা চড়, ঘুষি, লাথি ও সম্ভবত রড দিয়ে পায়ে আঘাত করেছিল। পায়ের আঘাতটা নীল হয়ে ফুলে উঠেছে বলে তিনি জানান।উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প এলাকা থেকে আসাদ গেইট পর্যন্ত হয়রানির শিকার হন রাব্বি। নগদ ৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেয় পুলিশ। পরে রেডিও ধ্বনির সাংবাদিক জাহিদ হাসানসহ তিনজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেন।তবে অভিযুক্ত এসআই মাসুদ রাব্বিকে নির্যাতনের ঘটনা নিছক মিথ্যা বলে দাবি করছেন। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।এমইউ/বিএ
Advertisement