চেঙ্গিস খানকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন! ইতিহাসের এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব চেঙ্গিস খান। তিনিই মঙ্গোলিয়ার জনক। ইতিহাসের মহা আলোচিত নায়ক চেঙ্গিস খানই হলেন তেমুজিন। কারো কাছে তিনি লুটতরাজ, খুনি কিংবা প্রতিশোধ পরায়ণ এক পাগল রাজা। আবার কারো কারো কাছে তিনি নায়ক!
Advertisement
১১৫০-১১৬০ সালের মধ্যে কোন এক সময়ে (মতান্তরে ১১৬২ সালে) ওনান নদীর তীরবর্তী (মঙ্গোলিয়ার) বোরজিগিন বংশে। চেঙ্গিস খান মহান উপাধি পান ১২০৬ সালে।
মাত্র ৬ বছর বয়সেই তিনি নিজ গোত্রের সঙ্গে শিকার অভিযানে বের হন। ৯ বছর বয়সেই পুরো পরিবারকে হারান তিনি। শুধু তার মা বেঁচে যান। তখনই নিজের পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। এ বয়সেই তিনি তার সৎ ভাইকে হত্যা করেন ও জেলে যান।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ওই বয়সেই মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিয়েই মাঠে নেমে পড়েন এই অকুতোভয় ব্যক্তি। ১২০৬-১৩৬৮ দিকে মঙ্গোল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করেন তিনি। তারপর মঙ্গোল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটান তিনিই। এটিই ছিল ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সম্রাজ্য।
Advertisement
চেঙ্গিস খান ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন। সাম্রাজ্য বাড়াতে গিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন তিনি। তার সাম্রাজ্য প্রায় দেড়শ বছর টিকে ছিল। চেঙ্গিস খান ১২২৭ সালে মারা যান। তবে আজও জানা যায়নি তার সমাধি কোথায়! তবে বিজ্ঞানীরা সমাধিটি খুঁজে বের করতে হাজারও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার মৃত্যুর পর জানা যায়, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার সমাধি হয় মঙ্গোলিয়ার কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, চায়না অথবা মঙ্গোলিয়াতে তার কবর আছে বলে সন্দেহ করা হলেও এর সত্যতা আজও পাওয়া যায়নি।
প্রচিলিত তথ্যমতে, চেঙ্গিস খানের সমাধির সব চিহ্ন মুছে দিয়েছে সেনারা। এ জন্য তারা সমাধির ওপর দিয়ে এক হাজার ঘোড়া চালিয়ে দেয়। ঐতিহাসিকদের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞরা চেঙ্গিস খানের সমাধি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
মজার বিষয় হলো, চেঙ্গিস খানের সমাধি খোঁজার আগ্রহে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশিরাই বারবার যুক্ত হয়েছেন। মঙ্গোলিয়ানদের মধ্যে চেঙ্গিস খানের সমাধি খোঁজার আগ্রহ দেখা যায়নি। বেশ কয়েকজন গবেষক জানান, চেঙ্গিস খান নিজেই চেয়েছিলেন তার সমাধি যেন লুকানোই থাকে। আর তা-ই ঘটেছে।
Advertisement
কী আছে চেঙ্গিস খানের সমাধিতে?
জানা যায়, পৃথিবীর অর্ধেক ধনসম্পদই নাকি গচ্ছিত আছে মহান এই ব্যক্তির সমাধিতে। চেঙ্গিস খানের সব ধনদৌলত এমনকি ৭৮ রাজার মুকুটও সেখানেই নাকি রাখা আছে। জাপানের এক প্রত্নতত্ত্ববিদ একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সমাধিটি খুঁজে বের করার। তিনিও অন্যান্যদের মতো ব্যর্থ হন।
সর্বশেষ ১৯৯০ সালে মঙ্গোলীয়ার রাজধানীতে অবস্থিত উলানবাটার স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. দিমাজাব আরডেনেবাটারি একটি উদ্যোগ নেন। জাপানের সঙ্গে যৌথ এ উদ্যোগের নাম ছিল ‘তিন নদী প্রকল্প’। সেটিও ব্যর্থ হয়। আজও চেঙ্গিস খানের সমাধির রহস্যের সমাধান মেলেনি।
সূত্র: বিবিসি
জেএমএস/জিকেএস