কৃষি ও প্রকৃতি

জলবায়ু পরিবর্তনে বছরে ৩০-৪০ লাখ হেক্টর জমি খরায়

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি খরায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাজার হাজার একর জমির পাকা ধান আকস্মিক বন্যায় নষ্ট হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষকদের আগাম সতর্ক করা গেলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো সম্ভব।

Advertisement

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ধানগাছের কঁচি থোড় থেকে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে ধানে চিটা হয়ে যায়। অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতার কারণে গাছের ছত্রাক রোগ বাড়ে। পোকামাকড়ও বেড়ে যায়। কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ব্রি আয়োজিত ‘ইন্টিগ্রেটেড রাইস অ্যাডভাইজরি সিস্টেমস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে। এতে সংস্থাটির কৃষি আবহাওয়া এবং ক্রপ মডেলিং ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আবহাওয়ার পূর্বাভাস মেনে কৃষি পরামর্শ সেবা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শস্যের ফলন ৭ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ শতাংশ কমিয়ে কৃষকের আয় ৩১ থেকে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করা যেতে পারে।

Advertisement

এতে আরও বলা হয়, এখন বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ ধান চাষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ সেবা নিচ্ছেন। সবাই এ পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ করলে ধানের ফলন কমপক্ষে ৭ শতাংশ বাড়বে। যা জাতীয় খাদ্য ঝুড়িতে দশমিক ১৭ মিলিয়ন টন ধান যোগ করবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস ধান উৎপাদন ব্যবস্থায় সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ১ টাকা বিনিয়োগে ৫১ থেকে ৭৩ টাকা আয় করা সম্ভব বলেও মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরাও বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে ধান উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কৃষকদের ফলনের ক্ষতি কমাবে। পূর্বাভাসের মাধ্যমে দুর্যোগ সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারলে কৃষকদের ক্ষতি কমিয়ে টেকসই উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলা রঞ্জন দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান, ব্রির পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক ও পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান।

Advertisement

এছাড়া এক্সপার্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন সিমিট-বাংলাদেশ’র কনসালটেন্ট ড. মইনুস সালাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এগ্রোমেট ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক ড. শাহ কামাল খান, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ এস এম কামরুল হাসান এবং রাইমস-বাংলাদেশ’র কান্ট্রি প্রোগ্রাম লিড রায়হানুল হক খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমলা রঞ্জন দাস বলেন, বাংলাদেশের কৃষি এবং কৃষকেরা ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ। দেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি কৃষি সম্প্রদায়ের জীবিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। ফলে জাতীয় কৃষিনীতিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য সতর্কীকরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে।

ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ধানের ৬০ ভাগ ফলন নির্ভর করে সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের তৈরি করা ধান চাষাবাদ এবং আবহাওয়া বিষয়ক পূর্বাভাস ও পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে কৃষকেরা উপকৃত হবে এবং তা ধানের ফলন ও সামগ্রিক উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে।

এনএইচ/এমকেআর/এএসএম