টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৌচাষিরা। উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের বর্তা গ্রামে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসছেন বিভিন্ন জেলার মৌচাষিরা। এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু আহরণও আশানুরূপ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌচাষিরা।
Advertisement
এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩১০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মৌ বাক্স থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার কেজি মধু আহরিত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের বাসিন্দা মৌচাষি নুর আলম জানান, তারা কয়েকজন মিলে কালিহাতী উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের বর্তা গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ১৭০টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন তারা।
এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যাচ্ছে। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
Advertisement
তিনি জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বাক্স। যার ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে।
বক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। পরে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি।
যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে।
তিনি আরও জানান, মৌমাছিতে টইটুম্বুর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেই সব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা।
Advertisement
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯০০ হেক্টর।
কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে প্রায় ২ হাজার কৃষককে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ, রাজস্ব প্রদর্শনী ও ফলোআপ কার্যক্রমসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা-৪ ও বিনা-৯সহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে।
এছাড়া বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩১০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মৌ বাক্স থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার কেজি মধু আহরিত হয়েছে। প্রতি কেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে।
তিনি জানান, সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে ও মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।
তিনি আরও জানান, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি। প্রতি বছরই ৩৫-৪৫ ভাগ জমিতে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়। সরিষার বাজার ভালো থাকায় চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের জন্য প্রয়োজনে আবারও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
আরিফ উর রহমান টগর/এমএমএফ/এমএস