সোমবার, ভোর ৫টা ৮ মিনিট। প্রচণ্ড আকারে মাটি কেঁপে উঠলো। পাত্রে রাখা পানি ঢেউয়ের মতো করে নড়ে উঠলো। নিশ্চয় পুকুর-নদী-সমুদ্রের পানিতে প্রচণ্ড ঢেউ উঠেছে। বড় বড় প্রাসাদ ইমারাতে বসবাসকারী মানুষ কে কার আগে বাইরে বেরিয়ে আসবে, সে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। সবাই ডাক চিৎকার দিয়ে বলছিল ভূমিকম্পের কথা।এত সুন্দর বাড়ি, আসবাব-পত্র, প্রাণাধিক প্রিয় স্ত্রী-সন্তান, তাদেরকে একটু সময় নিয়ে বের হওয়ার সময়ও বিলম্ব করতে চাইছে না। দুনিয়ার সামান্য কয় সেকেন্ডের ভূমিকম্পে যদি এমনি ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়, তবে কিয়ামাতের ভয়াবহতায় কি অবস্থা হবে। আল্লাহ তাআলা সুরা যিলযালের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে এ ভূমিকম্পের ধরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন- যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে।` (সুরা যিলযাল : আয়াত ১-২)আল্লাহ তাআলা বলেন ভূমিকম্পের মাত্রা এমন ভয়াবহ হবে যে পৃথিবী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। যার ফলে পৃথিবীর গর্ভে সকল মৃত মানুষ এবং ধন-সম্পদসহ যাবতীয় জিনিস বেরিয়ে পড়বে। তাই মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাকে সতর্ক করার জন্য কিয়ামাতের সামান্য আলামাত প্রকাশ করে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের সংকেত প্রদান করেন।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনে মানুষ প্রতিযোগিতা করবে, গচ্ছিত সম্পদের আমানতে খেয়ানত করবে, জাকাত দেয়াকে জরিমানা মনে করবে, ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে বিদ্যা অর্জন করবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে, মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, পিতাকে বাদ দিয়ে বন্ধুকে আপন করে নিবে, মসজিদে শোরগোল করবে, জাতির দূর্বল ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্ব দিবে। নিকৃষ্ট ব্যক্তি জননেতায় পরিণত হবে, খারাপ কাজে সুনাম অর্জন করবে এবং এ খারাপ কাজের ভয়ে ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর অবাধ বিচরণ হবে, মদ পান করা হবে এবং বংশের শেষ প্রজন্মের লোকজন পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দিবে। সে সময়ে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে একটি ভূমিকম্প ভূমিকে তলিয়ে দিবে। (তিরমিজি)এ হাদিস ভূমিকম্পের কারণগুলো উঠে এসেছে, যা বর্তমান পৃথিবীতে অহরহ হচ্ছে। আর এ কার্যকারণগুলো কিয়ামাতের আলামতও বটে। যাতে মানুষ মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে পাপ কর্ম ছেড়ে দিয়ে খারাপ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়।পরিশেষে ভাবনার বিষয়...সামান্য ভূমিকম্পে যদি বহু শখের সম্পদের মায়া ছেড়ে মানুষ দুনিয়ার স্বল্প জিন্দেগির জন্য রাস্তায় নামতে পারে। তাহলে প্রচণ্ড ভূমিকম্পের যে সমস্ত কারণ ও কিয়ামাতের ঘোষণা কুরআন ও হাদিসে এসেছে যে, সে সময় বান্দার অবস্থা কিরূপ হবে? যে সময় মানুষ উলঙ্গ/বস্ত্রহীন অবস্থায় উঠবে। কেউ কারো দিকে দৃষ্টি দেয়ার ফুসরত পাবে না। তাদের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সম্পদের দিকে তাকানোর মানসিকতা থাকবে না।স্তন্যদানকারী মা তার সন্তানকে কোল থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে। গর্ভবর্তী মায়ের সন্তান নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বেরিয়ে আসবে। স্বামী তার সুন্দরী, গুণবতী রমণী থেকে পলায়ন করবে। না। শুধুমাত্র নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। সে প্রচণ্ড ভয়াবহতার পূর্বেই আল্লাহর অবাধ্যতা ছেড়ে দিয়ে তাঁর দিকে ফিরে আসার জন্য বান্দাকে সতর্ক করছেন মাত্র।সুতরাং দুনিয়ার বর্তমান ভূমিকম্প নিয়ে বৈজ্ঞানিক বা অন্যান্য গবেষণায় বা তর্কে লিপ্ত না হয়ে কুরআনের বাণীর প্রতি লক্ষ্য করে প্রত্যেকে তাওবা করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার। যেহেতু ভূমিকম্প কিয়ামাতের সামান্য নির্দশন মাত্র। তাই কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বীয় অপরাধ বুঝার তাওফিক দান করুন। তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খাটি তাওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement