কেয়ামতের দিন বিচার-ফয়সালার সময় অবিশ্বাসীদের উপস্থিত করে বলা হবে- ‘যদি তোমাদের কাছে জমিনভর্তি স্বর্ণ থাকে; তবে তোমরা কি এর বিনিময়ে পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তি কামনা করবে?
Advertisement
তখন এ কঠিন শর্তেও তারা বলবে, ‘হ্যাঁ’। তখন তাকে বলা হবে যে, তোমার কাছে এর চেয়েও সহজ জিনিস চাওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না কিন্তু তুমি তা মানতে রাজি হওনি। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ مَاتُوۡا وَ هُمۡ کُفَّارٌ فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡ اَحَدِهِمۡ مِّلۡءُ الۡاَرۡضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افۡتَدٰی بِهٖ ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ وَّ مَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَনিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা গেছে, তাদের কেউ মুক্তির বিনিময় হিসেবে জমিনভর্তি স্বর্ণ দিতে চাইলেও কখনো তা গ্রহণ করা হবে না। এসব লোকের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং এদের কোনো সাহায্যকারীও নেই।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯১)
এটি কোরআনুল কারিমের তৃতীয় সুরা আল ইমরানের ৯১তম আয়াত। এ আয়াতে পরকালের কঠিন শাস্তির সময় অবিশ্বাসীরা কঠিন শর্ত ও বিনিময় দিয়ে হলেও তা থেকে মুক্তি চাইবে, যা সেখানে কোনোভাবেই বিনিময় হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।
দুনিয়াতে যারা মহান আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক করে তাদের ব্যাপারে এ আয়াতটি নাজিল করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ একজন জাহান্নামীকে বলবেন, ‘যদি তোমার কাছে সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তাহলে জাহান্নাম থেকে বাঁচার বিনিময়ে সে সমস্ত স্বর্ণ কি তুমি দিতে পছন্দ করবে?’ সে বলবে, ‘হ্যাঁ।’ আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমি তো দুনিয়ায় এর থেকেও সহজ জিনিস তোমার কাছে চেয়েছিলাম। কেবল এই যে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। কিন্তু তুমি শিরক থেকে বিরত থাকনি।’ (মুসনাদ আহমাদ, বুখারি ও মুসলিম)
Advertisement
কোরআনের ঘোষণা ও হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কাফেরের জন্য হবে জাহান্নামের চিরস্থায়ী আজাব। সে দুনিয়াতে কোনো ভাল কাজ করে থাকলেও কুফরীর কারণে তার সে ভাল কাজ বরবাদ হয়ে যাবে। বিষয়টি হাদিসে এভাবে এসেছে-‘আব্দুল্লাহ ইবনে জাদআন; যে বড়ই অতিথিপরায়ণ, গরীব-অভাবীদের প্রতি উদার এবং ক্রীতদাস স্বাধীনকারী ছিল।’ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এই ভালো কাজগুলো তার কোনো উপকারে আসবে কি?নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’। কারণ সে একদিনও স্বীয় প্রভুর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি।’ (মুসলিম)
সুতরাং এভাবে যদি কেউ কেয়ামতের দিন সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও বিনিময় স্বরূপ দিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায়; তাও সম্ভব হবে না। কারণ-প্রথমত : সেখানে মানুষের কাছে থাকবেই বা কি? আর যদি ধরে নেওয়া যায় যে, তার কাছে পৃথিবী পরিমাণ ধন-ভান্ডার আছে; যা দিয়ে সে নিজেকে আজাব থেকে বাঁচিয়ে নিতে চাইবে। তবুও সে বাঁচতে পারবে না। কারণ, তার কাছ থেকে বিনিময় গ্রহণ করাই হবে না। এ বিষয়টি একাধিক আয়াতে এভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে-قُلۡ لِّعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُنۡفِقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ یَوۡمٌ لَّا بَیۡعٌ فِیۡهِ وَ لَا خِلٰلٌআমার বান্দাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী তাদেরকে বল, ‘তারা যেন নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; সেদিন আসার আগে- যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না এবং থাকবে না কোন বন্ধুত্ব।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩১)
وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا لَّا تَجۡزِیۡ نَفۡسٌ عَنۡ نَّفۡسٍ شَیۡئًا وَّ لَا یُقۡبَلُ مِنۡهَا عَدۡلٌ وَّ لَا تَنۡفَعُهَا شَفَاعَۃٌ وَّ لَا هُمۡ یُنۡصَرُوۡنَ‘তোমরা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো উপকারে আসবে না, কারো কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ গৃহণ করা হবে না। কোনো সুপারিশ কারো পক্ষে লাভজনক হবে না এবং তারা কোনো সাহায্যও পাবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৩)
মূল কথা হলোযারা তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতে অবিশ্বাসী। তারা যত ভালো কাজই করুক না কেন, তারা পরকালে কোনোভাবেই মুক্তি পাবে না। পরকালের মুক্তির জন্য দুনিয়ায় আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেসালাত ও পরকালকে বিশ্বাস করা আবশ্যক। এর ব্যতিক্রম হলে কোনো বিনিময়েই মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে তুলে ধরেছেন।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইসলাম ও রেসালাতের বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। তাওহিদ ও রেসালাতের প্রতি অবিশ্বাসের পরিণতি থেকে সবাইকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস