দেশে প্রথমবারের হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন-২০১৪ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আজ (মঙ্গলবার) অধিদফতরের ওয়েবসাইটে জাতীয় ক্যান্সার রিসার্চ ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) ইপিডেমিওলজি বিভাগের উদ্যোগে ২০১৪ সালে ক্যান্সার হাসপাতালে আগত মোট ১১ হাজার ১শ’ ৮ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি হয়। পিডিএফ ফরম্যাটে নিবন্ধন প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ক্যান্সার আক্রান্ত মোট পুরুষ ও নারী রোগীর মধ্যে শতকরা প্রায় ১৮ ভাগ লাং ক্যান্সারে আক্রান্ত। নারীদের মধ্যে শতকরা ১২ দশমিক ৫ ভাগ ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৬৮ ভাগ ধূমপায়ী ও প্রায় ২২ ভাগ নারী রোগী গুল জর্দা (চিবিয়ে খেতে হয় এমন টোব্যাকো) খেতেন।লাং ও ব্রেস্ট ক্যান্সার ছাড়াও লিম্ফোটিক ও লিম্পনডে, জরায়ু, এসোপিগাস, স্টমাক, লিভার. পায়ুপথ, চিবুক/মুখগহ্বর ও গলব্লাডার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। শতকরা প্রায় ৬৮ ভাগ ক্যান্সার রোগী হিস্ট্রোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হয়েছে।প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ক্যান্সারে আক্রান্তদের শতকরা প্রায় ৯৪ ভাগ মুসলমান ও প্রায় ৮৯ ভাগ বিবাহিত। আক্রান্তদের মধ্যে চার সহস্রাধিক অশিক্ষিত ও প্রায় সমসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে অধিকাংশের পেশা কৃষিকাজ ও নারীদের মধ্যে গৃহবধূর সংখ্যাই বেশি।জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে আগত মোট রোগীর সংখ্যার মধ্যে শতকরা ৪৪ ভাগ ঢাকা বিভাগ, শতকরা ২২ ভাগ চট্টগ্রাম, শতকরা ১১ ভাগ বরিশাল, শতকরা প্রায় ১০ ভাগ খুলনা, শতকরা ৮ ভাগ রাজশাহী ও সিলেটে প্রায় তিন ভাগ রোগী আসে। সবচাইতে কম শতকরা দুই ভাগ রোগী এসেছে রংপুর বিভাগ থেকে।ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একটি কার্যকর ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, আক্রান্তের হার, কোন ক্যান্সারে কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, কোন বয়সে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার খুবই জরুরি।তিনি জানান, সীমিত পরিসরে হলেও এটিই দেশের প্রথম হাসপাতালভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে সারাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তদের সামগ্রিক চিত্র হয়তো পাওয়া যাবে না কিন্তু দেশের ক্যান্সাার পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যাবে।দেশের সামগ্রিক চিত্র কীভাবে পাওয়া সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, সত্যিকার অর্থে ক্যান্সারে আক্রান্ত ও মৃতের হার বের করতে হলে জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এটা করতে দীর্ঘ সময় লাগবে তাই আপাতত জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিটউটের নিবন্ধন কার্যক্রমকে জোরদার করতে হবে।তিনি আরও জানান, বর্তমানে অ্যানালগ পদ্ধতিতে তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে সংগ্রহে ইলেকট্রনিক ডাটাবেজ পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। এরপর দেশের পুরোনো ১৪টি সরকারি মেডিকেল কলেজে সেই কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। ২০১৬ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া নতুন স্বাস্থ্য সেক্টর কর্মসূচিতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।এমইউ/বিএ
Advertisement