কৃষি ও প্রকৃতি

লাউ চাষে বছরে ৭০ হাজার টাকা আয়

দিগন্ত জোড়া লাউ ক্ষেত। মাচার উপরে সবুজ গাছ তার নিচে ঝুলছে শত শত লাউ। দেখলে চোখজুড়িয়ে যায়। এভাবে ২০ বছর ধরে লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন দুলাল খন্দকার (৬৫)। তিনি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা।

Advertisement

চলমান খরিপ-২ মৌসুমে বসত বাড়ির পাশেই চল্লিশ শতক জমিতে লাউয়ের আবাদ করে আসছেন তিনি। তার ক্ষেতের উৎপাদিত লাউ জেলা থেকে শুরু উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

লাউ চাষি দুলাল খন্দকার বলেন, বিশ বছর আগে অনান্য সবজির পাশাপাশি লাউয়ের আবাদ শুরু করি। তবে অনান্য সবজিতে তেমন লাভের মুখ না দেখলেও লাউ চাষে যথেষ্ট লাভবান হতে শুরু করি। তখন থেকেই লাউ চাষে ঝুঁকে পড়ি। লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়ে পরিবারের সকল সদস্যদের ভরণ-পোষণসহ সংসারের যাবতীয় খরচ বহন করে আসছি।

এছাড়াও লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়ে আমার তিন ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। বড় ছেলে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে পুলিশে চাকরি করছে। দ্বিতীয় ছেলে ডিগ্রি পাস করে এনজিওতে চাকরি করছে এবং তৃতীয় ছেলে মাস্টার্সে পড়ছে। লাউ চাষে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হইনি। বিশ ধরে লাউ চাষে যথেষ্ট লাভবান হয়েছি। এবারও ৪০ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছি।

Advertisement

আমার লাগানো লাউয়ের জাত হলো এসিআই ময়না। ৪০ শতকে জমি তৈরি, সার, সেচ, কীটনাশক, মাচা তৈরিসহ পরিচর্যা খাতে আমার ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তাতে প্রতি শতকে ব্যয় হয়েছে ২৫০ টাকা করে। ফলন ভালো হয়েছে। এবার মৌসুমের শুরুতেই আট হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। ৪শ টি লাউয়ের প্রতিটি ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

আশা রাখি এবার লাউ বিক্রি করে এক লাখ টাকা আয় করবো। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে এবং বাজার দর ভালো থাকে তাহলে লাউ বিক্রি করে ব্যাপক লাভবান হবো।

লাউ চাষি দুলাল খন্দকারের ছোট ছেলে মাস্টার্স পড়ুয়া আশিক খন্দকার (২৪) বলেন, আমি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে মাস্টার্সে পড়ছি। পড়ালেখার পাশাপাশি আমারমার বয়স যখন ৭-৮ বছর তখন থেকেই বাবার সাথে লাউ ক্ষেতে কাজ করি।

আমাদের লাউয়ের ফলন অত্যন্ত ভালো হয়। আমরা লাউ চাষ করে প্রতি বছর গড়ে ৭০ হাজার টাকা করে আয় করি। লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়েই আমাদের পরিবারের খরচ চলে।

Advertisement

কৃষক দুলাল খন্দকারের ছোট ভাই কৃষক নাজিমুল হক খন্দকার (৪৮) বলেন, আমরা প্রতি বছর আলু ও লাউয়ের চাষ করি। আমার বড় ভাই দীর্ঘদিন থেকে লাউয়ের চাষ করে আসছেন। লাউ চাষে আয়ের টাকা দিয়ে তিনি তার ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচ এবং সংসারের ব্যায় বহন করেন। তার লাউ চাষ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমিও লাউ চাষের চেষ্টা করতেছি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলমান মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলার ১ হাজার ১শ ৪৮ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। তবে সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে ১ হাজার ১শ ৯৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজির চাষ হয়েছে। এতে শাক-সবজির ভালো ফলন হয়েছে।

রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সম্পা আক্তার জানান, উপজেলায় এ মৌসুমে ৭শ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।

তবে এখনও অনেক জমিতে। শাক-সবজি চাষ না করায় লক্ষ্যমাত্রা এখনও পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। কিন্তু খরিপ-২ এ চল্লিশ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হওয়ায় লাউয়ের ফলন ভালো হয়েছে।

মো. মাসুদ রানা/এমএমএএফ/এএসএম