বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই কিডনি রোগের অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। সোমবার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপি ১১তম জাতীয় সম্মেলন ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা। তারা বলেন, বর্তমানে দেশের দুই কোটি লোক উচ্চ রক্তচাপে এবং ৮০ লাখ লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৪০ থেকে ৬০ ভাগ এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের ৫০ থেকে ৬০ ভাগই জানেন না যে তাদের এসব রোগ হয়েছে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ ধরা পরেছে অথচ নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের ১৫ থেকে ২০ ভাগ এবং যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ক্রমান্বয়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। এছাড়াও বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও ২০ থেকে ২৫ ভাগের একুইট কিডনি ফেইলর ধরা পরে। বক্তারা জানান, বর্তমানে দেশে দুই কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত ও ৪০ থেকে ৫০ হাজার রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। কিডনি রোগে চিকিৎসা ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যয়বহুল এবং তা মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ বহন করতে পারে। ৭৫ শতাংশ টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না। তবে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত চিকিৎসা নিলে, এসব বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করা গেলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ বহুলাংশেই সম্ভব। কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন; সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কিডনি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ ওয়াহাব, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মুহিবুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনি ফেরদৌস রশিদ প্রমুখ। সম্মেলনে দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিডনি রোগ ও প্রতিরোধ, হেমো ডায়ালাইসিস ও পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, কিডনি সংযোজন প্রভৃতি নিয়ে সেমিনারে আলোচনা করেন। এতে দেশের প্রায় ৩ শতাধিক চিকিৎসক অংশ নেন।প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান বলেন, আমাদেরকে যাকাত প্রদানের মতো সামাজিক কর্মকাণ্ডেও আড়াই শতাংশ সময় ব্যয় করতে হবে। তিনি কিডনি রোগ প্রতিরোধে সারাদেশে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা যে জেলায় বসবাস করেন সেখান থেকেই সচেতনতামূলক মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করুন। কেননা কিডনি রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে নিরাময় করা সম্ভব। এজন্য কিডনি রোগ হবার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো-প্রথম দিকে এর কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু যখন উপসর্গ ধরা পড়ে ততক্ষণে কিডনির প্রায় ৭৫ ভাগই বিকল হয়ে পড়ে। তিনি জানান, কিডনি রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। এজন্য কিডনি রোগ হবার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, অতিরিক্ত লবণ পরিত্যাগ, ফাস্ট ফুড, চর্বি জাতীয় ও ভেজাল খাবারসহ ধূমপান বর্জন করার পরামর্শ দেন তিনি।এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement