যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফ্যাশন ট্রেন্ডেও পরিবর্তন আসে। তবে ফ্যাশন ট্রেন্ডের স্রোতে গা ভাসানোর ফলাফল যদি হয় মারাত্মক, তাহলে তা বিপজ্জনক ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ সৌন্দর্যের খাতিরে কষ্ট সহ্য করার কোনো মানেই হয় না।
Advertisement
তবুও যুগে যুগে পৃথিবীতে এমন সব ফ্যাশন অনুষঙ্গের চল এসেছে, যা মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক। জানেন কি, পোশাক, হিল এমনকি করসেট পরার কারণেও অতীতে অনেক নারীর মৃত্যু ঘটেছে! এজন্যই এগুলোকে ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ফ্যাশন ট্রেন্ড বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আধুনিক ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসেবে যেমন বিকিনি ওয়াক্সিং বা ভ্রু প্ল্যাক করা বেদনাদায়ক ঠিক তেমনই অতীতের সৌন্দর্যচর্চাও ছিল কঠিন ও ভয়ঙ্কর। ইতিহাসে এমন কিছু ফ্যাশন ট্রেন্ড ছিল যা রীতিমতো ভয়ঙ্কর ও যন্ত্রণাদায়ক। জেনে নিন ইতিহাসের বিপজ্জনক সব ফ্যাশন ট্রেন্ড সম্পর্কে-
করসেট
Advertisement
সব নারীই নিজেকে স্লিম দেখাতে চান। বিশেষ করে কোমরের দিক দিয়ে পাতলা হওয়ার চেষ্টা অতীত থেকে আজও চলমান। তবে পেট ও কোমরের অংশেই সবচেয়ে বেশি মেদ জমে। তাই মেদ কমিয়ে আকর্ষণীয় ফিগার পাওয়া বেশ পরিশ্রম আর দীর্ঘদিনের বিষয়।
এ কারণে উদ্ভাবিত হয় করসেট। যা পরে চিকন কোমর দেখানো প্রবণতা চালু হয়। এটি এখনও বিদ্যমান। তবে অনেক বিপজ্জনক এক ফ্যাশন ট্রেন্ড। কারণ করসেট অনেক টাইট হয়ে থাকে। এটি পরলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে না। অনেক নারীই করসেট দীর্ঘক্ষণ পরে থাকার কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়েন- এমন ঘটনা নেহাত কম নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করসেট পরলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে অনেকেরই ইন্টারনাল বা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। সেইসঙ্গে ভাঙা পাঁজর, হজমের সমস্যা, হিস্টিরিয়া, বিষণ্নতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যসহ মোট ১০০টি রোগ হতে পারে করসেট পরলে।
পাঁজরের হাড় অপসারণ
Advertisement
নিজেকে সুন্দর দেখাতে পাঁজরের হাড় অপসারণ করাও একসময় ফ্যাশন ট্রেন্ড ছিল। ভিক্টোরিয়ান যুগে এই ট্রেন্ড চালু হয়। এক্ষেত্রে সার্জনরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাঁজরের হাড় অপসারণ করতেন। যা পরবর্তীতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াত।
ক্রিনোলিন
১৮৫৬ সালে আরসি মিলিয়েট এই ভয়ঙ্কর পোশাকটির উদ্ভাবক। ভিক্টোরিয়ান পোশাক ক্রিনোলিন ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইতিহাস বলছে, ভয়ঙ্কর এই পোশাক পরে প্রায় ৩০০০ নারী মারা যান।
যার মধ্যে ছিলেন উইলিয়াম ওয়াইল্ডের কন্যা এমিলি এবং মেরি। যারা ক্রিনোলিন গাউন পরিহিত অবস্থায় পোশাকে আগুন লেগে পুড়ে মারা যান। ক্রিনোলিন পোশাকগুলো অনেক ঘের ও কয়েক স্তরের হয়ে থাকে। এ জাতীয় পোশাকের কাপড় সাধারণত টিস্যু বা সিল্কের হয়ে থাকে। যাতে সহজেই আগুন লেগে যেতে পারে।
এ ছাড়াও এ পোশাক পরে হাঁটতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এমনকি যানবাহনের গাড়ির চাকায় জড়িয়েও অঘটন ঘটেছে অনেক। ক্রিনোলিন গাউন পরলে তা বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে এটি পরে বাইরে বের হলে চলাচল করার সময় যেকোনো বিপদ ঘটতে পারে।
চপাইন হিল
ফ্যাশনে হিলের চাহিদা অতীতেও ছিল আর এখনও এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিভিন্ন স্টাইলের হিল আছে বাজারে। তবে জানেন কি, অতীতে এমন এক হিল ছিল যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকেই ভয়ঙ্কর এই হিল পরে নিজের প্রাণ হারিয়েছেন।
কখনও ভাবতে পারেন, জুতাও মৃত্যুর কারণ হতে পারে! গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫-১৭ মতকের দিকে চপাইন হিলের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। হাই হিলের আদিম রূপ হলো চপাইন। তখনকার সমাজে চপাইন নারীদের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অবস্থানের প্রতীকী ছিল।
৭ থেকে শুরু করে ২০ ইঞ্চি উঁচুও চপাইন ছিল। অধিক উচ্চতার এই হিল পরে যে কতজনের পা মচকে গেছে, তার কোনো হিসাব নেই। এমনকি চপাইন পরে মারা গেছেন এমন ব্যক্তিদের সংখ্যাও কম নয়।
পা বাঁধাই
পা আবার বাঁধাই করাও যায়! জানলে অবাক হবেন, চীনা নারীরা পা ভাঁজ করে রাখার অভ্যাস গড়তে ছোট জুতা পরতেন। ছোটবেলা থেকেই এ অভ্যাস করার দরুন পায়ের আঙুগুলো ভাঁজ হয়ে থাকত। একসময় পায়ের নখগুলো অবশ হয়ে যেত।
সম্রাট লি ইউ’র সময় থেকে পা বাঁধানোর ইতিহাস শুরু হয়। তখন ছোট পায়ের কদর করা হত এবং যার পা যত ছোট তিনি তত সুন্দরী বলে বিবেচিত হতেন। এটি খুবই বেদনাদায়ক প্রক্রিয়া ছিল। তবুও নারীরা সৌন্দর্য বর্ধনে এই যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়াটি বংশ পরম্পরায় অনুসরণ করতেন।
৪-৯ বছর পর্যন্ত পা বাঁধানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকত। এর ফলে পায়ের হাড় ভেঙে ঘোড়ার খুরের মতো আকার ধারণ করত। এর থেকে সংক্রমণ হয়ে অনেক শিশুরই মৃত্যু ঘটত। আর যারা বেঁচে থাকতেন তারাও আজীবন শারীরিক সমস্যা নিয়েই বেঁচে থাকতেন।
সূত্র: দ্য ভিনটেজ নিউজ
জেএমএস/এএসএম