পরিবার-পরিজন মারা গেলে শোক প্রকাশের অনুমোদন রয়েছে ইসলামে। কান্না করা যাবে; অশ্রু বিসর্জন দেওয়া যাবে। তবে বিলাপ করা যাবে না। বিলাপ ছাড়া শোক প্রকাশ ও কান্না করায় কোনো দোষ নাই। তাই আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি বা পরিচিত কেউ মারা গেলে শোক প্রকাশ করা নৈতিক দায়িত্ব। আর শোক প্রকাশে দোয়া পড়া উত্তম। কিন্তু শোক প্রকাশে কী দোয়া পড়বেন? এ সময় করণীয় সম্পর্ক ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?
Advertisement
কেউ মারা গেলে তার জন্য শোক প্রকাশ করা এবং শোক প্রকাশে দোয়া পড়া উত্তম। তাহলো-
أَعْظَمَ اللهُ أَجْرَكَ وَ اَحْسَنَ عَزَائَكَ وَ غَفَرَ لِمَيِّتِكَ
উচ্চারণ : ‘আজামাল্লাহু আঝরাকা ওয়া আহসানা আযাআকা ওয়া গাফারা লিমায়্যিতিকা।’
Advertisement
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতিদান বাড়িয়ে দিন। তোমাকে উত্তম সান্ত্বনা দিন। তোমার মৃতব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন।’ (নববি : আল আযকার)
শোক প্রকাশ ও ধৈর্যধারণ প্রসঙ্গে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের মেয়ে হজরত যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত উসামা ইবনে জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক কন্যা ( হজরত যায়নাব) তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) কাছে লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের কাছে আসুন। তিনি (দূতকে) বলে পাঠালেন, (তাঁকে) সালাম দেবে এবং বলবে-
إِنَّ للهِ مَا أَخَذَ وَلَهُ مَا أَعْطَى وَكُلٌّ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ
Advertisement
আল্লাহ যা নিয়ে যান; সেটি তাঁর; যা দান করেন; সেটিও তাঁর; তাঁর কাছে সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে; সুতরাং সে যেন ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর কাছে প্রতিদান কামনা করে।’
দূত মারফত এ খবর শুনে (হজরত যায়নাব) ওই দূতকে তাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আসেন। তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য ওঠে) দাঁড়ালেন। আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন হজরত সাদ ইবনু উবাদাহ, মুয়াজ ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কাব, জায়েদ ইবনু সাবিত (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এবং আরও কয়েকজন।
তখন (হজরত যায়নাবের বাড়ি গেলে) শিশুটিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তুলে দেওয়া হল। তখন সে (শিশুটি) ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি এ কথা বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (শব্দ হচ্ছিল)। আর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই চোখ বেয়ে বেয়ে অশ্রু ঝরছিল।
হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! (বিশ্বনবির অশ্রু দেখে বললেন) একি? তিনি বললেন, ‘এ হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন। আর আল্লাহ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং মানুষের উচিত, আল্লাহ যা দেন ও যা নেন; সবই তাঁর এ বিষয়টি বিশ্বাস করা। মানুষের মৃত্যুর বিষয়টিও এমনই। আর এ সময় ধৈর্যধারণ করা এবং এর প্রতিদান কামনা করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যে কারো মৃত্যু হলে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে শোক বিনিময়ে উল্লেখিত দোয়া পড়ে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানোর তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। অপরের কষ্ট ও মৃত্যুতে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস