কানিছ সুলতানা কেয়া
Advertisement
একসময় বাচ্চাদের স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। সন্তান জন্মানো এবং তার দেখাশোনার জন্য সেটিও ছেড়ে দিয়ে হয়। করোনায় স্বামীর চাকরিও চলে যায়। পরিবারের আর্থিক সাহায্য করার জন্যই মূলত নিজের কিছু একটা করার প্রয়োজন ছিল। ১০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন ব্যবসায়ের পুঁজি প্রায় লাখ টাকা। জাগো নিউজকে এমনটাই জানান চড়ুইভাতি অনলাইন পেইজের স্বত্বাধিকারী সাবিহা জামান।
সাবিহা জামান কাজ করছেন ফ্রোজেন খাবার, মশলা এবং পিঠাপুলি নিয়ে। চাকরি ছেড়ে বাসায় থেকে কিছুটা হতাশায় ভুগছিলেন সাবিহা। একসময় খোঁজ পান উই গ্রুপের। সেখানে অন্যান্য নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প অনুপ্রাণিত করে সাবিহা জামানকে। কিন্তু তিনি কি করবেন?
কোনো কিছু নিয়ে যে ব্যবসা শুরু করবেন তেমন পুঁজিও ছিল না তার কাছে। ছিল না কোনো কাজের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণও। তখনই মনে আসে, তিনি তো পিঠা তৈরি করতে পারেন। ২০২০ সালের অক্টোবরের ১৫ তারিখ। নিজের তৈরি চার রকম পিঠা আর রুটির ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেই উই গ্রুপে।
Advertisement
অনেকে সাধুবাদ জানালেও কোনো অর্ডার পাননি তখন। কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন তিনি।
এর ঠিক এক সপ্তাহ পর অর্ডার পান সোনাই পিঠার। খুব বেশি পরিমাণে না হলেও প্রথম অর্ডারটি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল তার। খুব খুশি হয়েছিলেন সাবিহা। একমাস পর দিনটি ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ, সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ৪৪টি ফ্রোজেন রুটি অর্ডার পান সাবিহা জামান।
এর এক সপ্তাহ পর একই জন ১০০ এবং ১ মাস পর একই কাস্টমারের কাছ থেকে পান একবারে ২০০ রুটির অর্ডার। ইংল্যান্ড থেকে একজন ঢাকায় থাকা তার মায়ের জন্য রুটিগুলো অর্ডার করেছিলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাবিহাকে। তখন থেকেই একের পর এক অর্ডার পেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
নিজের হাতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে সব খাবার তৈরি করেন সাবিহা জামান। বাজার করতে স্বামী সাহায্য করেন। মায়ের পাশে আছেন নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে এবং পাঁচ বছরের ছেলে। যে যেভাবে পারেন সাবিহার কাজে সহযোগিতা করেন। আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী সবার কাছ থেকেই সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
Advertisement
বর্তমানে সাবিহা জামানের বিক্রির তালিকায় যুক্ত হয়েছে মরিচ, হলুদ, জিরা, ধনিয়ার গুঁড়ো, ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা, নারকেলের নাড়ু, রুটি, পরোটা, সিঙ্গারা, সমুচা। শুকনো মসলা নিজে উপকরণ কিনে এনে পরিষ্কার করে রোদে শুকান তিনি। এরপর নিজে ভাঙ্গিয়ে এনে প্যাকেটজাত করেন।
এসব মসলা ঘরের তাপমাত্রায় ৩-৬ মাস এবং ফ্রোজেন খাবার ১ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় বলে জানান সাবিহা। সব পণ্যের
দাম নির্ধারণ করতেও সবার কথাই মাথায় রাখেন তিনি। সব ধরনের ক্রেতা যাতে কিনতে পারেন এবং ঘরের খাবারগুলোই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান তিনি।
সাবিহা মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। এখন সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় লাখ টাকায়। কয়েক মাসেই অর্ডার পেয়েছেন ১০০ এরও বেশি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে সাবিহার হাতে তৈরি মসলা, পিঠা-পুলি। সাবিহার পেইজের সিগনেচার পণ্য তার বানানো ফ্রোজেন রুটি ও পরোটা।
বেশিরভাগ চাকরিজীবী নারী যারা রুটি বানানোর সময় পান না; তাদের জন্য সাবিহার ফ্রোজেন রুটি সময় ও পরিশ্রম বাঁচিয়ে দিয়েছে। অনেকে বৃদ্ধ বাবা মায়ের কথা চিন্তা করেও তাদের জন্য এগুলো অর্ডার করেন। সাবিহা তার ফ্রোজেন খাবারের অর্ডার নিয়ে থাকেন ঢাকার মধ্যেই।
দূরত্ব এবং সময়ের জন্য এই ফ্রোজেন খাবারগুলো ঢাকার বাইরে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। দূরে হলে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাবিহা জানন,
‘নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া খুবই জরুরি। যে যে কাজ পারে সেটাকেই পুঁজি করতে পারেন তারা। তবে হতাশ হয়ে ভেঙে পড়লে চলবে না। লেগে থাকতে হবে। ধৈর্য্য আর অধ্যাবসায় থাকলে সফলতা আসবেই।’
সাবিহা আরও জানান, ‘ব্যবসায় ঝুঁকি নিতেই হবে। অর্ডার আজ না আসুক, কাল আসবে, না হয় পরশু। ধৈর্য হারালে চলবে না। যেখানে যে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেখানেই কাজ করা উচিত। ভয় পাওয়া যাবে না। নারীদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া খুবই জরুরি।’
জেএমএস/জিকেএস