মতামত

বিদেশেও ভয়ঙ্কর রোহিঙ্গা

বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রবাহ অনেকটাই সচল থাকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে। বিদেশ বিভুঁইয়েও যারা দেশের জন্য অবদান রাখছেন তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে নজর দেওয়া যে কতখানি জরুরি তা আবার প্রমাণিত হল এ সংক্রান্ত একটি খবর থেকে। মালয়েশিয়ায় দুই বাংলাদেশি যুবককে গলা কেটে হত্যা করার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। জাগো নিউজে প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়েছে- বৃহস্পতিবার রাতে মালয়েশিয়ার একটি পাহাড় থেকে দুই জনের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।  নিহতরা হচ্ছেন- কালকিনি উপজেলার নতুন চরদৌলত খান গ্রামের চুন্নু খানের ছেলে মো. রাসেল খান (৩০) ও রমজানপুর এলাকার শাহজাহান খানের ছেলে বিজয় খান (২২)।প্রায় ৮ বছর আগে রাসেল খান মালয়েশিয়া যান। তিনি সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছিলেন। গত ২৮ নভেম্বর মোটরসাইকেলযোগে কাজে যাওয়ার সময় রাসেল ও বিজয়কে অপহরণ করা হয়। পরে মালয়েশিয়া থেকে রাসেলের পরিবারের কাছে ফোনে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এ জন্য ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার আনসার উল্লাহ নামে ব্যক্তির ২১৩৩৮ হিসাব নাম্বর দেয়া হয়। রাসেলের পরিবার মুক্তিপণ বাবদ কালকিনি উপজেলার গৌরনদীর টরকী বন্দর শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা পাঠায় ওই একাউন্টে। কিন্ত অপহরণকারীরা ২৯ নভেম্বর থেকে রাসেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। রাসেলের পরিবার বিষয়টি কালকিনি পুলিশকে জানায়। তারা (কালকিনি পুলিশ) মুক্তিপণের টাকা পার্শ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর শাখা থেকে পাঠানোর অজুহাত দেখিয়ে গৌরনদী পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। পাঁচ লাখ টাকা পাঠানোর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে মালয়েশিয়ার একটি পাহাড় থেকে রাসেল ও বিজয়ের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ গত বুধবার টেকনাফ থেকে মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা পাঠানো একাউন্টের মালিক আনসার উল্লাহকে (২৭) গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে  মালয়েশিয়া পুলিশ  ইউনুস ও সাকেরসহ তিন বাংলাদেশিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং মরদেহের সন্ধান দেয়। আর তাদের দেয়া তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে গলাকাটা মরদেহ দুটি উদ্ধার করে মালয়েশিয়া পুলিশ। ইউনুস ও সাকেরসহ আটক তিনজনের বাড়ি টেকনাফ জেলায়। তারা রোহিঙ্গা শরণার্থী। বাংলাদেশি পরিচয়ে তারা মালেশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার অনেকগুলো দিক আছে। প্রথমত বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার একটি চিত্র এর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। দ্বিতীয়ত এই হত্যার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। মানবিক কারণে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশে নানা অপরাধকাণ্ডের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে বিদেশেও এরা সমান তৎপর। এরা বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়ে জড়িত হচ্ছে নানা অপরাধের সঙ্গে। মানবপাচার থেকে শুরু করে এহেন অপরাধ নেই যা তারা করছে না। দুঃখজনক হচ্ছে, রোহিঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও এরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রও রয়েছে এদের। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ৫০০ টাকায় মেলে পরিচয়পত্র। পাসপোর্টও সংগ্রহ করে এরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। এভাবে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে বাংলাদেশি পরিচয়ে। এদের অপৎপরতার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এমনকি জীবনও যাচ্ছে।  রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়া থেকে শুরু করে বিদেশ পাড়ি জমানোর জন্য একটি বিশাল সিন্ডিকেট কাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, দুর্বল পুলিশ ভেরিফিকেশন, সত্যায়নকারীর অসাধুতা ও অবহেলা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা দালাল চক্রের সহায়তা, প্রকৃত রোহিঙ্গা চিহ্নিতকরণ জরিপ না করা এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি কিছু রাজনৈতিক দলের সমর্থনের কারণে তারা পাসপোর্ট পাচ্ছে। অসাধু সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যেই যারা বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। দূতাবাসগুলোকেও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাওয়া বন্ধ করতে হবে সবার আগে। এর সঙ্গে জড়িতদের কাঠোর শাস্তির আওতায় আনা গেলেই কেবল এটি সম্ভব। মনে রাখা প্রয়োজন এর সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয়টিও জড়িত। এইচআর/এমএস

Advertisement