জলপ্রপাতের সৌন্দর্য প্রকৃতির এক বিস্ময়। পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আসছে দুধ সাদা জলের ধারা। বিস্ময়কর এক অনুভূতির শিহরণ জাগে জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়ালে। শরীর ও মনের ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দেয় জলপ্রপাতের সৌন্দর্য।
Advertisement
জলপ্রপাতের পানি, পাহাড় ও সবুজ অরণ্যের দৃশ্য সবার মনোযোগ কাড়ে। আপনি সুযোগ পেলেই ঘুরে আসতে পারেন দেশের বেশ কিছু জলপ্রপাত অর্থাৎ ঝরনায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের সর্বাধিক মনোমুগ্ধকর ৫ জলপ্রপাত বা ঝরনা সম্পর্কে-
নাফাখুম ঝরনা
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় নাফাখুম ঝরনার অবস্থান। বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ৭৯ কি.মি. দূরে যেতে হবে এই ঝরনার দৃশ্য দেখতে। থানচি বাজার সাংগু নদীর তীরে অবস্থিত। থানচি থেকে নদীপথে নৌকায় যাওয়ার সময় নদীপথ রেমাক্রি খালের দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে।
Advertisement
অর্থাৎ রেমাক্রি হতে সাংগু নদীর পথ বেশ কিছুটা ঢালু। রেমাক্রি খাল ছোট খাটো একটি জলপ্রপাত। এখানের পাথর গুলোও অনেকটা ছোট ছোট সিঁড়ির মত। অভূতপূর্ব এই পাহাড়ি পথের বিশুদ্ধ সৌন্দর্যে আপনি মোহিত হতে বাধ্য।
অনেকে নাফাখুম যাওয়ার পথে তিন্দুর সৌন্দর্যে বিমহিত হয়ে থানচিতে না থেকে তিন্দুতে রাত্রিযাপন করেন। যদিও থানচি ও তিন্দু দুই স্থানই সুন্দর। রেমাক্রি বাজার থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাস্তা হেঁটে পাড়ি দেওয়ার পর আপনি পৌঁছে যাবেন নাফাখুম নামের আশ্চর্য সুন্দর সেই জলপ্রপাতে।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা টু বান্দরবানের ১০-১২ টি বাস সার্ভিস চালু আছে। আপনি ঢাকা টু বান্দরবান যেতে পারবেন বাস করে। নন এসি বাস ভাড়া জন প্রতি ৭২০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া জন প্রতি ৯৫০ টাকা। এরপর চাঁদের গাড়ি করে বান্দরবান থেকে থানচি যেতে হবে। সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা।
Advertisement
থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার উদ্দেশ্যে নৌকা ঠিক করে নিতে হবে। নৌকাটি আপনাদের থানচি থেকে তিন্দু হয়ে রেমাক্রি বাজার পৌছে দেবে।
রেমাক্রি বাজারে ১ টি রেস্ট হাউস ও ২০/২৫ টি বাড়ি আছে যেখানে আপনারা রাত্রিযাপনের জন্য রুম ভাড়া পাবেন। রেমাক্রি বাজার থেকে প্রায় দু ঘণ্টা পায়ে হেঁটে গেলেই আপনারা নাফাখুম পৌঁছে যাবেন।
খৈয়াছড়া ঝরনা
নয়টি ধাপ বিশিষ্ট খৈয়াছড়া ঝরনার নান্দনিক সৌন্দর্য দেখতে পাবেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। এই ঝরনা মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া বাজার থেকে ৪.২ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশের এই ঝরনাকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঝর্ণা রানি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে অনেকগুলো বাস সার্ভিস চালু আছে। ইউনিক, হানিফ, এনা এসব পরিবহনে নন এসি ৪২০-৪৮০ টাকা ভাড়া। আপনার পছন্দমতো যেকোনো একটি বাসে চড়ে মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নেমে যেতে হবে। এখান থেকে ১০০ টাকা সিএনজি ভাড়া করে খৈয়াছড়া ঝরনার ঝিরির কাছে যেতে পারবেন।
ধুপপানির ঝরনা
রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ি উপজেলার ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত এই ঝরনার। কথিত আছে, ২০০০ সালের দিকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ধুপপানি ঝরনার নিচে ধ্যান শুরু করেন।
এক নাগারে প্রায় ৩ মাস ধ্যান করার পর ব্যাপারটি স্থানীয় লোকজনের নজরে পরে। স্থানীয়রা সন্ন্যাসীকে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেবা করতে গেলে ক্রমে ক্রমে তখন এই ঝরনাটি জনসম্মুখে পরিচিতি লাভ করে।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে প্রথমে কাপ্তাই যেতে হবে বাসে করে। জন প্রতি বাস ভাড়া ৫৫০ টাকা করে হবে। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে যেতে হবে বিলাইছড়ি। জন প্রতি ভাড়া পরবে ৫৫ টাকা আর রিজার্ভ ১০০০-১৫০০ টাকা।
বিলাইছড়ি থেকে আরো ২ ঘণ্টা পাহাড়ি ঢলের নদী পার হতে হবে ওড়াছড়ি পর্যন্ত। এখানে অবশ্যই গাইড নিতে হবে। গাইড ফি ৫০০ টাকার মতো পরবে।
নাপিত্তাছড়া ঝরনা
এই ঝরনার অবস্থানও চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে। নাপিত্তাছড়া ঝরনা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি স্থান। এখানে খুব কাছাকাছি দূরত্বে তিনটি ঝরণা আছে কুপিটা খুম, মিঠাছড়ি, বান্দরখুম। যদি আপনি এখানকার গ্রাম থেকে গাইড সঙ্গে নেন; তাহলে একদিনেই সবগুলো ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
এখানে প্রথমে আপনাকে পাহাড়ি পথ হেঁটে যেতে হবে। এসময় বনমোরগ আর হনুমান আপনার নজরে পরতে পারে। ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার পরই প্রথম ঝরনা কুপিটাখুমে আপনি পৌঁছে যাবেন। কিছুটা হাঁটার অভ্যাস থাকলে একদিনেই গিয়ে ঘুরে দেখে আসতে পারেন একসঙ্গে নাপিত্তাছড়ার তিনটি ঝরনা।
কীভাবে যাবেন?
বর্ষাকাল এসব জলপ্রপাতের সৌন্দর্ উপভোগ করার সেরা সময়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো একটি বাসে উঠে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে নেমে যেতে হবে। নিজেদের সুবিধার জন্য নয়দুয়ারী বাজার থেকে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নিতে পারেন।
জাদিপাই ঝরনা
বান্দরবানের জাদিপাই ঝরনা রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং, জংছিয়া ও জাদিপাই এ তিনটি পাহাড়ি ঝিড়ি একসঙ্গে মিলিত হয়ে জাদিপাই ঝরনার সৃষ্টি করে। এটি প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে ঝর্ণার স্বচছ পানির ধারা নিচে নেমে এসে সাংগু নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান শহরে গিয়ে চান্দের গাড়ি করে রুমা যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে চান্দের গাড়ি ভাড়া প্রায় ৪০০০ টাকা পরবে। রুমা যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টার মত।
রুমা বাজার নেমে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে হবে কমলা বাজার পৌঁছানোর জন্য। এখান থেকে পায়ে হেঁটে বগালেকে উঠে হেঁটে কেওক্রাডং এবং এরপর পায়ে হেঁটে জাদিপাই ঝরনায় পৌঁছাতে পারবেন।
জেএমএস/এমকেএইচ