বর্ষা এলেই নখকুনির সমস্যা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে নখের চারপাশে লালচে হয়ে ফুলে যায়। সেইসঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথায় কষ্ট পান ভুক্তভুগীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যকটেরিয়া সংক্রমণের ফলেই নখকুনি হয়ে থাকে। নখের চারপাশের যেকোনো স্থানে এমন সমস্যা হতে পারে।
Advertisement
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’-এর পোডিয়াট্রিস্ট (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) জিওরজিয়ানি বুটেক জানান, নখের কোনো পাশের ত্বকে সৃষ্টি হওয়া ফাটলের মধ্য দিয়ে সহজেই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। নোংরা পানি বা ঘাম, ময়লা, ধূলা-বালি ইত্যাদি সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এর ফলে আরও যন্ত্রণা হতে থাকে।
কেন নখকুনি হয়?
অনেকেই নখ মুখে নিয়ে চুষেন বা কামড়ান। এক্ষেত্রে নখের চারপাশের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সুযোগে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে ত্বকের ওই স্থান দিয়ে। এ ছাড়াও ছোট করে নখ কাটা, ম্যানিকিউর করতে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, টাইট ফিটিং জুতা পরা, নখের চারপাশের কোথাও কেটে গেলে কিংবা নখ সবসময় আর্দ্র অবস্থায় থাকার কারণে নখকুনি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এসব কারণে ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে নখকুনির মতো যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
Advertisement
নখকুনির লক্ষণ
নখকুনি হলে নখে প্রচণ্ড ব্যথা, লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণ। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নখকুনি নিয়ে অবহেলা করা হয়; তাহলে এর থেকে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে। আর ইনফেকশন হলে নখের চারপাশ অতিরিক্ত ফুলে গিয়ে পুঁজ ও রক্ত বের হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমেই নখকুনির সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
নখকুনি সারানোর ঘরোয়া উপায়
>> হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখলে নখকুনির ব্যথা ও ফোলা কমে যায়। এক্ষেত্রে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন ১৫-২০ মিনিট। দিনে ৩-৪ বার এটি করতে পারেন।
Advertisement
>> গরম পানিতে পূর্ণ একটি বোলে ১ টেবিল চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে ওই মিশ্রণে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকুন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন।
>> এ ছাড়াও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান, জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
>> ২ কাপ হালকা গরম পানিতে এক কাপ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে ১৫ মিনিট নখকুনি আক্রান্ত আঙুলটি ডুবিয়ে রাখুন। তারপর মুছে নিন। দিনে ২-৩ বার এই উপায় অনুসরণ করলে দু-একদিনের মধ্যে সেরে যাবে নখকুনি।
>> পানির সঙ্গে অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ওই মিশ্রণে ৩০ মিনিট নখকুনি আক্রান্ত আঙুলটি ডুবিয়ে রাখুন। দ্রুত সেরে যাবে নখকুনি।
>> নখকুনি আক্রান্ত অংশে জায়গায় দু-এক ফোঁটা পাতিলেবুর রস লাগান। ২৫-৩০ মিনিট রেখে উষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। যত দিন না সারছে; তত দিন এই পদ্ধতি মেনে চলুন।
>> এক চামচ নারকেল তেলে দু-তিন ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। এই তেল তুলো দিয়ে নখকুনি আক্রান্ত অংশে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। দিনে দু-তিনবার ব্যবহার করলে দ্রুত সেরে যাবে নখকুনি।
নখকুনি প্রতিরোধে যা করবেন
>> নখ সব সময় সোজাভাবে কাটতে হবে, পায়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বাইরে থেকে আসার পর পা ও হাত ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে মুছে ফেলতে হবে, পরিষ্কার জুতা ও মোজা পড়তে হবে, আরামদায়ক ও পায়ের মাপ মতো জুতা পড়তে হবে, প্রতিদিন গোসলের সময় পায়ের নিচের শক্ত চামড়া পরিষ্কার করতে হবে।
>> নখ কাটার সময় গোলাকার ভাবে না কেটে সোজা ভাবে কাটুন। বিশেষ করে গোলাকার ভাবে কাটা নখের কোনা আঙ্গুলের ভেতর ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
>> সঠিক মাপের জুতা পরুন। টাইট জুতা পরার ফলে পায়ের নখে অনেক বেশি চাপ পড়ে, ফলে নখ আঙ্গুলের ভেতর ঢুকে যায়।
>> নখ কাটার জন্য কখনোই ব্লেড, কাঁচি বা এমন অপ্রচলিত কিছু ব্যবহার করবেন না। এ ছাড়া নখের ভেতর কাঠি বা কলমের ডগা ইত্যাদি দিয়ে খোঁচাবেন না। নেইল কাটার সেট পাওয়া যায়, সেখানে বিভিন্ন মাপের নেইলকাটার থাকে।
>> পেডিকিউর বা পার্লারে গিয়ে নখের পরিচর্যা থেকে বিরত থাকুন।
>> পা খোলামেলা রাখার চেষ্টা করুন। ধুলো বালি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। সারাদিন জুতা-মোজা পরে থাকবেন না। নিতান্তই বাধ্য হলে কিছুক্ষণ পর পর মোজা খুলে পায়ে বাতাস লাগার সুযোগ করে দিন।
সূত্র: ভেরি ওয়েল হেলথ/ মেডিকেল নিউজ টুডে
জেএমএস/জিকেএস