ফিট থাকার জন্য বিশ্ববাসী শরীরচর্চা আর খাদ্যাভাস পরিবর্তনের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন! সেখানে আদিবাসী এক সম্প্রদায়ের মানুষেরা মোটা হওয়ার লড়াই করে চলেছেন। কি অদ্ভুত এক বিষয়! অস্বাভাবিকভাবে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়ানোই তাদের মূল লক্ষ্য। কারণ ভুঁড়িই তাদের সম্বল। এই আদিবাসীরা এজন্য কতটা কাঠখড় পোড়ায়, চলুন তা জেনে নেওয়া যাক-
Advertisement
ইথিওপিয়ার ওমো উপত্যকার প্রত্যন্ত কোণে বসবাস করে এই উপজাতি গোষ্ঠী। তাদের জীবণাচরণ খুবই অস্বাভাবিক। যুবক থেকে পুরুষ হওয়ার লড়াইয়ে বিরাট ভুঁড়ি বানিয়ে দেখাতে হয় তাদের। তবেই মেলে আসল পুরুষের মুকুট। নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে নিয়মিত গরুর রক্ত এবং দুধের মিশ্রণ পান করেন তারা।
এজন্য ছয় মাসের জন্য আলাদা এক ঘরে থাকেন। সেখানেই আসল পুরুষের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেন ইথিওপিয়ান বোদি উপজাতির পুরুষরা। বেশ কয়েকজন অবিবাহিত পুরুষদের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে মোটা ও ভুড়িওয়ালা প্রতিযোগীকে বেছে নেওয়া হয়। এরপর তার মাথায় পড়ানো হয় সেরা’র মুকুট। সব উপজাতিরাই সারাজীবন এই মোটা ব্যক্তিকে সমাদর করেন।
নববর্ষের সময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইথিওপিয়ার এই আদিবাসীরা এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছয় মাসের প্রস্তুতির পর মোটা ব্যক্তিদের নিয়েই আয়োজন করা হয় আরম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের। প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে অবিবাহিত পুরুষ এই প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করেন।
Advertisement
নির্বাচিত হওয়ার পর ওই ব্যক্তি সারাজীবনের জন্য অবসর গ্রহণ করেন। তিনি যা চান, তা-ই হাতের কাছে পেয়ে যান। তার সব চাহিদা পূরণ করেন বোদি উপজাতিরা। তিনি নিজের খুশিমতো যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন। এমনকি বিয়ে ব্যাতীত পছন্দিই একাধিক বোদি উপজাতি নারীর সঙ্গে সহবাসও করতে পারেন। এভাবেই তার জীবন কাটে।
মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী যুবকরা ৬ মাস আগে থেকেই গরুর রক্ত এবং দুধের মিশ্রণ নিয়মিতভাবে পান করে থাকেন। তবে তারা গরুগুলোকে হত্যা করে না। কারণ গরু তাদের কাছে পবিত্র প্রাণী। এজন্য বোদি গোত্রের মানুষেরা বর্শা বা কুড়াল দিয়ে গরুর শরীরে জখম করে রক্ত সংগ্রহ করে। রক্ত যাতে শুকিয়ে না যায়, এজন্য যত দ্রুত সম্ভব ১ লিটার রক্ত ও ১ লিটার দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে পান করেন পুরুষরা।
প্রতিদিন দুই লিটার করে দুধ-রক্তের মিশ্রণ খেতে হয় তাদের। সকালে সূর্যোদয়ের সময় এই মিশ্রণটি পান করেন তারা। প্রথম দিকে এটি পান করার সময় অনেকে বমিও করেন। আবার দ্রুত না পান করলেও জমাট বেঁধে যায়, এ কারণে বমি হলেও তাদের ২ লিটার এই মিশ্রণ পান করতেই হয়।
এভাবেই ছয় মাস কাটার পর একেকজন পুরুষরা অত্যাধিক মোটা হয়ে ওঠেন। অতিরিক্ত মোটা ও ভুড়ির কারণে অনেক মোটা পুরুষরা হাঁটতে পর্যন্ত পারেন না। অনুষ্ঠানের দিন নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর আগে নিজেদের পুরো শরীরে ছাঁই মাখেন প্রতিযোগীরা। সেখানে পৌঁছানোর পর একটি পবিত্র গাছের চারপাশে হাতে হাত ধরে সবাই গোল হয়ে কয়েক ঘণ্টা বিরতিহীনভাবে ঘুরতে থাকেন।
Advertisement
এরপর তাদের ভুঁড়িওয়ালা পেট মাপা হয়। যার পেট যত বড় হবে তিনিই নির্বাচিত হবেন। একবার সবচেয়ে মোটা ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হলে, একটি বিশাল পবিত্র পাথর ব্যবহার করে গরু জবাইয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। তারপরে গ্রামের প্রবীণরা ওই ব্যক্তির ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে কি-না, তা দেখার জন্য পেট এবং রক্ত পরীক্ষা করেন।
অনুষ্ঠানের পর, পুরুষদের জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। বেশিরভাগই কয়েক সপ্তাহ অল্প পরিমাণে খেয়ে ওজন ও পেট কমিয়ে নেন। প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মোটা হয়ে ওঠা বোদি পুরুষদের জন্য একটি স্বপ্নের চেয়ে কম নয়। কারণ ভুঁড়িওয়ালা হলেই তিনি আসল পুরুষ হিসেবে বিবেচিত হবেন!
সূত্র: ডেইলিমেইল
জেএমএস/এএসএম