জাগো জবস

যেভাবে শূন্য থেকে শুরু করবেন বিসিএস প্রস্তুতি

গাজী মিজানুর রহমান

Advertisement

বিসিএস প্রিলিতে পাস করা কি আসলেই খুব কঠিন? আসলে বিসিএস প্রিলিতে পাস করা একদম সহজও নয়, আবার খুব কঠিনও নয়। বিসিএস প্রস্তুতি যদি পরিকল্পিতভাবে ঠিকঠাক করা যায়, তাহলে হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব। বিসিএস প্রিলিতে পাসের জন্য পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু টেকনিক অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিসিএসে ২ ধরনের পরীক্ষার্থী থাকেন, তাহলে দুই ধরনের পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি দুই ধরনের হওয়া উচিত। যেমন সব রোগের জন্য কেবল নাপা খেলে কাজ হবে না; ঠিক একইভাবে সবার প্রস্তুতির স্টাইল একই রকম হলে কাজ না-ও হতে পারে।

১. বিসিএসে এ ধরনের পরীক্ষার্থীর একটি হলো- একেবারে নতুন (যারা প্রথমবারের মতো বিসিএস দেবেন)।২. আরেক ধরনের পরীক্ষার্থী আছেন, যারা এর আগেও বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন। মানে, অভিজ্ঞ বা কিছুটা অভিজ্ঞ।

Advertisement

এখন প্রথমে আসি যারা একেবারে নতুন, মানে ৪৩তম বিসিএস হবে প্রথম বিসিএস; তারা কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন। যারা এবার প্রথম বিসিএস দেবেন, তারা হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না- ঠিক কোথা থেকে কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন? হয়তো ভাবছেন, আগে তো তেমন কিছু পড়িনি, এখন কি ভালো করা সম্ভব?

প্রকৃতপক্ষে, হাতে এখনো যে পরিমাণ সময় আছে, পরিকল্পনামাফিক পড়লে, এখনো ভালো করা সম্ভব। তো আসুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে শূন্য থেকে প্রস্তুতি শুরু করবেন—

ধাপ-১: প্রথমে বিসিএস প্রিলির সিলেবাস ভালো করে দেখুন এবং বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখুন। বিসিএসে কী ধরনের প্রশ্ন হয় ধারণা পেয়ে যাবেন এবং বিগত সালের প্রশ্ন থেকে অনেক কমনও পাবেন পরীক্ষায় প্রশ্ন রিপিট হলে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। হাতে বেশি সময় না থাকলে অত্যন্ত ৩৫তম-৪২তম বিসিএস প্রিলি পর্যন্ত ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। কারণ এগুলো বিসিএস প্রিলির নতুন সিলেবাস অনুযায়ী। এর জন্য প্রফেসর’স বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক বা ওরাকল প্রিলি প্রশ্ন ব্যাংক অথবা অ্যাসিওরেন্স প্রিলি প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পড়তে পারেন। তাছাড়া কারও কাছে জব সল্যুশন থাকলে সেখান থেকেও পড়ে নিতে পারেন।

ধাপ-২: এরপর ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস’ বইটির এ টু জেড ভালোভাবে বুঝে বুঝে শেষ করুন অন্তত দুইবার। বইটি শেষ করলে বিসিএস প্রিলি সম্পর্কে আপনি একেবারে ক্লিয়ার হয়ে যাবেন। বিসিএস প্রিলি নিয়ে আপনার যে ভয় আছে, তা কেটে যাবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।

Advertisement

ধাপ-৩: এরপর বাজার থেকে যেকোনো ভালো সিরিজের (যেমন এমপিথ্রি/প্রফেসর’স/অ্যাসিওরেন্স/ওরাকল) প্রিলির আলাদা বিষয়ের সিলেবাসের সাথে মিল রেখে টপিকগুলো পড়ে ফেলুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিক বা অধ্যায়ের ওপর বেশি জোর দিন। বিশেষত যে টপিক বা অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবার প্রশ্ন আছে, সেই টপিক বা অধ্যায়গুলো। মনে রাখতে হবে, প্রতি বিসিএস প্রিলিতে কিন্তু প্রিলির সিলেবাসের সব টপিক বা অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে না। এক সেট প্রিলির বইয়ের পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণির ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ বইটি ভালোভাবে পড়ুন। এ বই থেকে প্রিলির ‘ভূগোল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ অংশের হুবহু অনেক প্রশ্ন কমন আসে।

ধাপ-৪: বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা থেকে যেহেতু অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়, সেজন্য জব সল্যুশন পড়ুন। এখানে বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাখ্যাসহ সমাধান পাবেন। এ ক্ষেত্রে প্রফেসর’স জব সল্যুশন বা ওরাকল জব সল্যুশন যেকোনো একটি ফলো করতে পারেন।

ধাপ-৫: তারপর বাজার থেকে বিসিএসের ভালো মানের একটি বা দুটি মডেল টেস্ট (বিসিএস রিয়াল মডেল টেস্ট বইটি ও সাথে অন্য যেকোনো ভালো মানের মডেল টেস্ট বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন) নিয়ে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সেই বিষয় ভালোভাবে শেষ করুন, বিষয়টিতে জোর দিন।

আরও পরামর্শ: এছাড়া যে কাজটি করবেন, ৪র্থ-১০ম শ্রেণির ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলা ব্যাকরণ বইটি সাথে রাখবেন। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই, তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। পরীক্ষার আগমুহূর্তে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন।

এবার আসি অভিজ্ঞদের প্রস্তুতির বিষয়ে। আপনারা যেহেতু এ পর্যন্ত এক বা একাধিক পরীক্ষা দিয়েছেন, আপনাদের বলার তেমন বেশি কিছু নেই। যেহেতু আপনারা অনেক কিছু জানেন বলে ধরে নিলাম। তারপরও কিছু কথা না বললেই নয়—

যেহেতু ৪৩তম বিসিএস স্পেশাল বিসিএস নয়; সাধারণ বিসিএসে এমসিকিউ, রিটেন ও ভাইভা হয়। সেখানে এমসিকিউ নম্বর যোগ হয় না, কেবল পাস করলেই হয়। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ১২০ নম্বর ‘সেফ জোন’ ধরা হয় প্রিলিতে। এমসিকিউতে বেশি নম্বর পেলেও তা যোগ হবে না। তাই দুনিয়ায় সব পড়ার আছে বলে আমি মনে করি না। প্রস্তুতি যখন শেষদিকে আসবে, আমি বলবো আপনাদের যেহেতু আগের কিছু প্রস্তুতি আছেই, তাই বেশি বেশি এমসিকিউ পড়ুন। ভালো মানের ২-৩টি মডেল টেস্ট বই কিনে এমসিকিউগুলো পড়ে ফেলুন।

কারণ ভালো মানের মডেল টেস্টগুলোয় কেবল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো থাকে, যেখান থেকে পরীক্ষায় অনেক কমন পাওয়া যায়। সে জন্য আপনি ‘বিসিএস রিয়াল মডেল টেস্ট’, ‘প্রফেসর’স মডেল টেস্ট’ বা ভালো মানের অন্য যেকোনো মডেল টেস্ট পড়তে পারেন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সে বিষয় ভালোভাবে শেষ করুন, বিষয়টিতে জোর দিন। বিসিএস প্রিলির যেকোনো ভালো সিরিজের বইগুলো পড়ুন এবং বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস বইটি ভালোভাবে শেষ করুন।

এছাড়া যে কাজটি করবেন, ৪র্থ-১০ম শ্রেণির ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ, বাংলা ব্যাকরণ বইটি সাথে রাখবেন। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই। তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। আর পরীক্ষার কিছুদিন আগে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন। এখন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়লে, পরে আবার পড়া লাগতে পারে। কারণ সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।

মাথায় রাখতে হবে, এখন বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আগের মতো গতানুগতিক বই পড়ে কিংবা গতানুগতিক টেকনিক অবলম্ব করে খুব একটা ভালো সাফল্য আশা করা যায় না। প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা দুটিই যেহেতু বেশি, তাই সাফল্য পেতে হলে পড়াশোনা করতে হবে ব্যতিক্রমভাবে ও কার্যকর টেকনিক অবলম্বন করে। এভাবে পড়লে ভালো কিছু হবে।

মনে রাখবেন, মাঝখানের সময়টুকু ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। আপনি হয়ে যেতে পারেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন ক্লাস ওয়ান ক্যাডার অফিসার। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বেশি জোর দিন; যেন পরীক্ষার হলে গেলে বিভ্রান্ত না হন।

আরেকটি কথা মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে। সব পরিশ্রমী, সৎ সাহসীর জন্য শুভ কামনা ও দোয়া রইল।

লেখক: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার, লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার।

এসইউ/এমএস