কৃষি ও প্রকৃতি

দুই জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষে সফল সাইদুর

কোনো ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে ভিয়েতনামের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন কৃষক সাইদুর রহমান। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গামারীঢালা গুচ্ছগ্রাম এলাকায় ৪০ শতক জমিতে নতুন এ জাতের তরমুজ চাষে প্রথমবারেই সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন তিনি। প্রথমবারেরমতো খাগড়াছড়িতে নতুন জাতের তরমুজ চাষে রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন এ কৃষক।

Advertisement

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বারোমাসি তরমুজের একটি ভিডিও দেখে সেখান থেকেই তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ হন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাঈদুর রহমান। এরপর চাকরি ছেড়ে খাগড়াছড়ি সদরের গামারীঢালা গুচ্ছগ্রাম এলাকায় নিজের জমিতে কৃষি কাজ শুরু করেন।

ইউটিউব দেখে এর চাষ পদ্ধতি ও সার্বিক দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। পরে চুয়াডাঙ্গা থেকে বীজ সংগ্রহ করে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই শুরু করেন গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্লাকবেবি জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষ। প্রথমবার নতুন জাতের তরমুজের চাষ করে খুব বেশি লাভবান না হলেও এ চাষে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বলে জানান, কৃষক মো. সাইদুর রহমান।

নিজের ৪০ শতক জামিতে তরমুজ চাষ করতে বীজ, ম্যালচিং, সার সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই দফায় হারবেস্ট করে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়েছে জানিয়ে কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, আরো ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। তিনি বলেন, একই জায়গায় আবার নতুন করে শুধু বীজ বপন করেই আরেকবার চাষ করতে পারবো। একবার ম্যালচিং করলে সেখানে দুইবার চাষ করা যায় বলে জানান তিনি।

Advertisement

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মাটিতে ম্যালচিং পেপারের নিছে রোপণ করা বীজ থেকে চারা উঠে দুইপাশে দেয়া বাঁশের তৈরি মাচার উপরে বড় হয়েছে গাছ। গাছে ঝুলছে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজগুলো। গাছ থেকে যেনো ফলগুলো ছিঁড়ে না পড়ে এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে নেটের ব্যাগ। এতে করে পাকাপোক্ত না হওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন চাষি।

জানা গেছে, গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের ওজন হয় এক থেকে দেড় কেজির মধ্যে আর ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ দেড় থেকে তিন কেজি হয়। তাই মাচায় ঝুলে থাকা ফলগুলো নেটের ব্যাগেই বেঁধে রাখতে হয়। ফলে খেতের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় যতদিন ফল থাকে।

চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যেই ফলন আসে এবং ফল পরিপক্ক হয়ে যায়। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি গোল্ডেন ক্রাউন ১০০ টাকায় আর ব্ল্যাকবেবি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুমিষ্ট ও রসালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি।

ভিয়েতনামের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের বারোমাসি তরমুজ চাষে সাইদুর রহমানের সফলতায় আশপাশের কৃষকরাও এ তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক মো. হযরত আলী।

Advertisement

বাজারে এ জাতের তরমুজের ব্যাপক চাহিদা জানিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. নুরুল আলম বলেন, এই জাতের তরমুজ জেলার আর কোথাও চাষ হয়নি। কৃষক সাইদুর রহমানের জমি থেকে কিনে নিয়ে বাজেরে খুচরা বিক্রি করেন তিনি। বারোমাস বাজারে পাওয়া গেলে চাহিদা আরো অনেক বেড়ে যাবে।

কৃষক মো. সাইদুর রহমান জানান, এ জাতের তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই কিনে নিয়ে যায়। ফলে বাজারজাত করা নিয়ে বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে ব্যাপক আকারে এ তরমুজ চাষের চিন্তা আছে। এ জাতের তরমুজ চাষের নিজের সাফল্যের ব্যাপারেও আশাবাদী এ চাষি।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, খাগড়াছড়িতে প্রথমবার শুরু হয়েছে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ। এগুলো বেশ সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারে এ তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি। নতুন এ জাতের তরমুজ চাষের জন্য আমরা এখন থেকে কৃষকদের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দেব। এ জাতের তরমুজ অনেক লাভজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমএমএফ/জিকেএস