লাইলাতুল কদর মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক মর্যাদা ও সম্মানের। কুরআন-সুন্নার বর্ণনায় এ রাতের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কারণ এ রাতেই নাজিল করা হয়েছে মানবজাতির মুক্তির মহাসনদ কুরআনুল কারিম। কুরআনের বর্ণনা ও হাদিসের ঘোষণায় ওঠে এসেছে, লাইলাতুল কদরের মর্যাদা। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হবে ২৭ রমজানের রাত কাঙ্ক্ষিত ‘লাইলাতুল কদর’।
Advertisement
কুরআনের ঘোষণায় লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
১. লাইলাতুল কদরে পবিত্র কুরআন নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ
Advertisement
‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’
২. লাইলাতুল কদর, হাজার মাস থেকেও উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ
লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস থেকে উত্তম। এ রাতে আমল করা অন্য এক হাজার মাস আমল করার চেয়েও উত্তম।
Advertisement
৩. কল্যাণ ও বরকত নিয়ে ফেরেশতা ও জিবরিল আলাইহিস সালামের অবতরণ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ
সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরিল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর হলো সাতাশ তারিখ অথবা উনত্রিশ তারিখের রাত। আর ফেরেশতাগণ এ রাতে পৃথিবীতে কঙ্করের সংখ্যা থেকেও বেশি উপস্থিত হন।
৪. ফজর পর্যন্ত শান্তির রাত। আল্লাহ তাআলা ফজরের আগ পর্যন্ত সব কিছুতেই শান্তি প্রদান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ
শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।সর্বোপরি কদরের রাত পুরোটাই ভালো, এ পুরো সময়জুড়ে মন্দ বা খারাবির কোনো কিছুই নেই।
৫. বরকতময় রাত। এ রাতে এতবেশি কল্যাণ ও বরকত যে, মহান আল্লাহ এ রাতেই কুরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে।’ (সুরা দুখান : আয়াত ৩)
৬. মর্যাদার এ রাতে এক বছরের সব প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ
‘সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।‘ (সুরা দুখান : আয়াত ৪)
৭. বিগত জীবনে গোনাহ মাফ হয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে ‘লাইলাতুল কদর’-এ জেগে থেকে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)
হাদিসের ঘোষণায় লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন। উম্মতে মুসলিমার উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেছেন-
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাজিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তাঁর সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।’ (মুসলিম)
> ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান করো। (মুসলিম)। সে হিসেবে এ রাতগুলো হলো- ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯।।
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'রমজানের শেষ ১০ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।' (বুখারি)
হাদিসের নির্ভারযোগ্যতার মাপকাঠীতে বেশি সম্ভাবনাময় লাইলাতুল কদর ২৭ রমজান। অর্থাৎ ২৬ তারিক দিবাগত রাত তথা সন্ধ্যায় শুরু হবে এ মর্যাদার রাত। সেই মাহিন্দ্রক্ষণ শুরু হবে সন্ধ্যায়। মর্যাদার এ রাত পেলে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করবেন? কী চাইবেন? এ সম্পর্কে হাদিসের একটি বর্ণনা এভাবে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি যদি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত, তাওবাহ-ইসতেগফার ও দোয়া-দরূদের মাধ্যমে মর্যাদার এ রাতটি অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম